ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবচেয়ে বেশি অবৈধ কল আদান-প্রদান হচ্ছে টেলিটকের মাধ্যমে

অবৈধ ভিওআইপির জন্য সরকার বছরে এক শ’ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৯ অক্টোবর ২০১৮

অবৈধ ভিওআইপির জন্য সরকার বছরে এক শ’ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) কল টার্মিনেশনে শীর্ষে অবস্থান রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক। মোবাইল সিম নিবন্ধন হওয়ার পরেও দেশ-বিদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অবৈধ কল আদান প্রদান হচ্ছে টেলিটকের মাধ্যমে। বর্তমানে প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিটের বেশি কল অবৈধ পথে দেশে আসছে। ফলে প্রতিবছর অবৈধ ভিওআইপির জন্য সরকার এক শ’ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। অবশ্য ভিওআইপি বন্ধের জন্য বিটিআরসি বিদেশ থেকে মেশিন আমদানির পর থেকে অবৈধ কল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের রাজস্ব বেড়েছে, যা সরকারের ঘরেই থাকছে। সোমবার বিটিআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলেন বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক এ তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, গত ৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিটিআরসি ও র‌্যাব যৌথভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ হাজারের ওপর সিমসহ ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এরমধ্যে টেলিটকের ৫ হাজার ৭৫, এয়ারটেল ও রবির ৩ হাজার ৮৯৭, গ্রামীণফোনের ১ হাজার ৪১৪, বাংলালিংকের ৪২৬, র‌্যাঙ্কসটেলের ১২০ এবং বাংলালায়নের পনেরোটি সিম জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইজিডব্লিউ অপারেটর্স ফোরাম ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি শনাক্তে সর্বাধুনিক মেশিন নিয়ে এসেছে। এই মেশিন দিয়ে কোন এলাকার কোন বাসা বা অফিসে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে, যদি কোন যন্ত্রাংশ আলমারি বা ড্রয়ারে থাকে তাও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। আর এ কারণে সম্প্রতি অবৈধ ভিওআইপি কল ধরা সম্ভব হচ্ছে। গত মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। অবৈধ ভিওআইপি নিয়ে বিটিআরসি বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। সূত্র মতে, বিটিআরসি এর আগে অবৈধ ভিওআইপি রোধ করতে জার্মানির সিগসের ও যুক্তরাজ্যের থ্রিডিআই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। ওই দুই প্রতিষ্ঠান অবৈধ পথে কল শনাক্তে কাজ করবে। বিটিআরসি অবৈধ কল কোনভাবেই ঠেকাতে পারছিল না। এজন্য বিটিআরসি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত বিটিআরসি ওই দুই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি ধরে রাখেনি। ফলে প্রতিদিন গড়ে আড়াই কোটি মিনিট অবৈধ ভিওআইপি কল আদান- প্রদান হচ্ছে। বিটিআরসি তখন জানিয়েছিল, দেশে বৈধ সিম দিয়েই অবৈধ কল আনা হচ্ছে। এই কল বিটিআরসি কোনভাবেই বন্ধ করতে পারছে না। বৈধ পথে প্রতিদিন কল নেমে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিটে চলে এসেছিল। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারিয়েছে। সূত্র জানায়, বিটিআরসির নিয়মানুযায়ী প্রতি মিনিট কল থেকে যে আয় হয় বিটিআরসি তার ৪০ শতাংশ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, মোবাইল অপারেটর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ও আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলো বাকি ২০ শতাংশ পাচ্ছে। দেশে ২১ আইজিডব্লিউ অপারেটরের মধ্যে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর সিন্ডিকেট করে কলরেট বাড়ানোর ফলে আগের নিয়মেই অর্থের অংশ পাচ্ছে সরকার। নতুন নিয়মে মাত্র সাতটি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। আইজিডব্লিউ (ইন্টারনেট গেটওয়ে) কোম্পানিগুলো বাড়তি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ফলে বৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান কমে গেছে। আগে বৈধভাবে প্রতিদিন সাড়ে ১১ থেকে ১২ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান হতো। এখন বৈধভাবে কল আদান-প্রদান হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিট। অবৈধ পথে টাকা চলে যাচ্ছে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের পকেটে। আন্তর্জাতিক কল কমে যাওয়ার জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করছে বিটিআরসি। কল সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য দায়ী আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা। তারা কল রেট দেড় থেকে দুই সেন্ট করে বৈধ পথে কলসংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এই কলগুলোর মধ্যে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি মিনিটের বেশি। এই কল থেকে প্রতি বছর শত কোটি টাকার বেশি সরকারের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির পকেটে যাচ্ছে অবৈধ ভিওআইপির টাকা।
×