ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানি না ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ অক্টোবর ২০১৮

নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানি না ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলছেন এই আইনের মাধ্যমে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। সংসদে আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে আইন পাসের মধ্য দিয়ে সরকার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। সময় আসছে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন। সোমবার রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়ায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ বিএনপির পক্ষ থেকে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তার বক্তব্যে ডিজিটাল আইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, আমরা এই নিবর্তনমূলক আইন মানি না। আইন পাসের আগে সংসদে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে যে আইন পাস করা হয়েছে দেশের গণমাধ্যমসহ সবার কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আইন সম্পর্কে সবাই অবহিত। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এবং বর্তমানে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা জাতির প্রতিটি স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান করে দিয়েছে। একটার পর একটা কালো আইনের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সরকারের এখনও হাতে সময় রয়েছে দেশ ও জাতিকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে। তা হলো গণতন্ত্রে নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আলোচনার মাধ্যমে কিভাবে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা। কারণ জনগণকে বন্দী করে কিছুদিনের জন্য দেশ শাসন করা হয়। চিরদিন নয়। তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, হতাশ হবে না। আমি এখনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর আগেই জনগণ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সবাই চায় দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সত্যিকার অর্থে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপিকে ঘরপোড়া গরু উল্লেখ করে বলেন, দেশে কোন ঘটনাই ঘটে নাই অথচ দলীয় নেতাকর্মীদের নামে ৯০ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে ২৫ লাখের বেশি। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অধিকৃত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতেই সরকার নতুন করে ডিজিটাল আইনের দরকার হয়ে পড়েছে। তারা দেশে প্রথম বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে কালো আইন তৈরি করে। তাদের আমলে এরপর বড় কালো আইন হলো বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা। এরপরে এলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার আইন। স্বৈরশাসক শাসিত সরকারের নিরাপত্তার জন্যই আজ আবার পাস হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইনের মাধ্যমে সরকার যাকে ইচ্ছে মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। বাকশাল গঠন করে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে সরকারের ফল ভাল হয়নি। বাকশাল টেকে নাই। ডিজিটাল আইনের মাধ্যমেও সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। সরকারের শেষ সময় এসে গেছে উল্লেখ করেন। অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠায় তারা সফল হবে না উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব সয়। তার মুক্তির দাবিতে দেশবাসী আজ ঐক্যবদ্ধ। দেশে কোন ঘটনা ঘটেনি। অথচ হাজার হাজার মামলা হচ্ছে। পুলিশ বলছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাতিরঝিলে গাড়ি ভাংচুর করছে। এখানে গণতন্ত্রের কথা বলে কোন লাভ নেই উল্লেখ করেন। বিএনপি অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কালো আইনে যাই থাকুক না কেন, এখন আইন ব্যবহার করে সরকারের নির্দেশেই কাজ করবে তার এজেন্সিগুলো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কালোর চেয়ে কালো উল্লেখ করে বলেন, যারা দেশে নাগরিক না অথচ সরকারের সমালোচনা করে তাদের প্রতিও সরকার অসন্তুষ্ট। ফলে এই আইনের বলা হয়েছে যারাই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে তারা বিদেশে নাগারিক হলেও দেশের নাগরিক হিসেবেই গণ্য করা হবে। তারাও এই আইনের আওতায় পড়বে। তিনি বলেন, আইন যেহেতু হয়ে গেছে এখন থেকে যে যাই বলবেন আইনের মধ্যে পড়ে যাবেন উল্লেখ করেন। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানকে ব্যবহার করে আজ মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে ডিজিটাল আইন করে। আগামী নির্বাচনে সরকারের প্রকল্প হিসেবেই এই আইন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে ইভিএম এবং নির্বাচন কমিশন গঠন। সরকার যেখানে তাদের প্রকল্পের গ্যাপ দেখছে সেখানে গ্যাপ বন্ধ করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকারের নেয়া এইসব প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে যে অবস্থা চলছে তাতে কথা বলা বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সব দেশে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়। কেবল বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের সমালোচনা বন্ধ করতে ডিজিটাল আইন করা হয়েছে। দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যা গুম চলছেই। এর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিবাদ হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার জনরায়কে ভয় পাচ্ছে। তারা যতই অত্যাচার করুণ বিএনপিরে মাঠে থাকার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা এতে অংশ নেন। তারা অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে যারা ভিন্নমত চর্চা করে তাদের দমন করতেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। অবিলম্বে এই আইনের বাতিল দাবি করে তারা বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে এই আইন বাতিলের। এই আইনে অনেক ধারা রয়েছে যা গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য আপত্তিকর। এই ধারাগুলো আগে বাতিল হওয়া দরকার। তবে কেউ কেউ বলেন, অনেক ধারা আপত্তিকর হলেও এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, সরকার শুধু সাংবাদিকদের নয় দেশের ১৮ কোটি জনগণের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই আইন প্রয়োগ হলে দেশ একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে চলে যাবে। ফলে আইনটি প্রয়োজনের চেয়ে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন প্রয়োগ হলে কোন নাগরিকই স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারবে না বলেও তারা মত দেন।
×