ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল লক্ষ্য

বিশ্বব্যাংকের কাছে এবার স্বল্প সুদে ঋণ চাওয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৯ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্বব্যাংকের কাছে এবার স্বল্প সুদে ঋণ চাওয়া হবে

এম শাহজাহান ॥ কর্মসংস্থানমুখী বিনিয়োগ বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সহজ শর্তে স্বল্প সুদের ঋণ সুবিধা চাওয়া হবে। এমডিজি অর্জনের ধারাবাহিকতায় স্থায়ীত্ব উন্নয়নেও সমান দক্ষতার পরিচয় দিতে চায় বাংলাদেশ। এ কারণে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এছাড়া মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ যুক্ত হবে দেশের অর্থনীতিতে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তা প্রয়োজন হবে। আগামী ১২-১৪ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব বিষয় উপস্থাপন করে ঋণ সহায়তা বাড়ানোর অনুরোধ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় এবার মিয়ানমার সরকার কর্তৃক বিতারিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ এবং পরবর্তীতে তাদের আশ্রয়দানসহ আরও ১০টি ইস্যু তুলে ধরবে বাংলাদেশ। এতে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অবস্থা, কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রম বাজার, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন, নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের দেশে কাতারে শামিল হওয়া, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশের একটি বড় সঙ্কট এবং তাদের খাদ্য, বাসস্থান এবং চিকিৎসার মতো মৌলিক বিষয়গুলো এখন দেখতে হচ্ছে। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের সামনে এর চেয়েও বড় বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই সঙ্কট মোকাবেলা এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এই বাস্তবতায় এবার বিশ্বব্যাংকের বিশেষ সুবিধার ঋণের (আইডিএ ক্রেডিট) পর্বে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র বলছে, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে সোমবার রাতে বালির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওই সভায় যোগ দেবে। এবারের প্রতিনিধি রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর মোঃ ফজলে কবির, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম, ভারপ্রাপ্ত অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ। সভা চলাকালে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের স্বল্প সুদের ঋণ আইডিএ-১৮ স্কিম চলছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত চলবে এ স্কিম। বাংলাদেশ এর পরের স্কিমে (আইডিএ-১৯) থাকতে চায়। আইডিএ ঋণের সুদহার দশমিক ৭৫ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক গত অর্থবছর স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) বা বেশি সুদ হারে ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করে। এসইউএফের সুদহার প্রায় ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এত বেশি সুদ দিয়ে বাংলাদেশের কোন অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের আরও কিছু বছর স্বল্প সুদের ঋণ প্রয়োজন। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) কাছ থেকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো সহজ শর্তে ঋণ পায়। বাংলাদেশ আইডিএ তহবিলের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা। কিন্তু গত বছর বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার জন্য আইডিএ ঋণের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কঠিন শর্তের এসইউএফ তহবিল চালু করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। স্বল্প সুদের সহজ শর্তের ঋণ এখন থেকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার একটি উদ্যোগ রয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের। কিন্তু রোহিঙ্গাসহ নানা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ স্বল্প সুদের ঋণের বিষয়টি অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করবে। জানা গেছে, এবারের বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশের লক্ষ্য আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পাশে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশকে সম্পৃক্ত করা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। এছাড়া আগের আসা আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে বসবাস করে আসছে। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয়রা এখন ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। দেশের পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে। ব্যাপক এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ মৌলিক প্রয়োজন মেটানো বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে ৪৮ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, এর মধ্যে ৮ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। এছাড়া গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ ও অনুদান পেয়েছে, যা এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ প্রায় ৫৬ কোটি ডলার ঋণ ও অনুদান পেয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক গ্রামীণ সড়ক, বনায়ন ও সামুদ্রিক মৎস্য খাতের জন্য ৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। ইতোমধ্যে এই তহবিল থেকে ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার নেয়ার জন্য সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি করেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম ও বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। শেরেবাংলা নগরের ইআরডি সম্মেলন কক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়াবিলিটি এ্যান্ড এফিশিয়েন্সি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টে এই অর্থ দেয়া হবে। বিদ্যুত ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
×