ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক চোরাচালানি ও বিক্রেতাদের জন্য মহাবিপদ সঙ্কেত

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৯ অক্টোবর ২০১৮

মাদক চোরাচালানি ও বিক্রেতাদের জন্য মহাবিপদ সঙ্কেত

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে অবশেষে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন হয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে তা সোমবার মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়ার ঘটনায় ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক চোরাচালানিদের জন্য এটি একটি মহাবিপদ সঙ্কেতের মেসেজ হয়ে এসেছে। সোমবার মন্ত্রিসভা ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন ও কোকা উদ্ভূত মাদকদ্রব্য বহন সেবন, বিপণন, মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা করেছে মৃত্যুদ-। এই খসড়া আইনটি ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ হিসেবে সংসদে বিল আকারে উত্থাপিত হয়ে পাস হলে এটি পূর্ণাঙ্গ আইনে পরিণত হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি জনকণ্ঠকে জানান, নতুন প্রণীত এই আইনটি দীর্ঘ। চলমান আইনে যেসব ঘাটতি রয়েছে নতুন খসড়া আইনে তা পূর্ণাঙ্গ আকারে এসেছে। বর্তমানে মাদক নিয়ন্ত্রণে যে আইনটি চলমান রয়েছে সেটি ১৯৯০ সালে প্রণীত অর্থাৎ ২৮ বছরের পুরনো। পুরনো আইনটিতে যেসব ঘাটতি ছিল সেসব দিক সার্বিক বিবেচনায় এনে নতুন আইনের খসড়া প্রণীত হয়ে সেটি সোমবার মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সহসা এটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপিত হয়ে পাস হলে যখন পূর্ণাঙ্গ আইনে পরিণত হবে তখন মাদক চোরাচালানি, বহনকারী, সেবনকারী, বিপণনকারী, মদদদানকারী এবং পৃষ্ঠপোষকতাদানকারীদের জন্য মহাবিপদ হিসেবে আবির্ভূত হবে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ এই আইনের খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়ার পর এটি সংশ্লিষ্টদের জন্য নতুন একটি মেসেজ। মাদকবিরোধী তৎপরতায় জড়িত বিভিন্ন সূত্রে তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের মাদকের মধ্যে মিয়ানমারে উৎপাদিত মরণ নেশা ইয়াবা পুরো বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে। সরকারী নির্দেশে ‘চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’Ñ এমন স্লোগান নিয়ে র‌্যাব মাঠে নামার পরও ইয়াবার চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না। শুরুতে র‌্যাবের অভিযানে ইয়াবা চোরাচালান কিছুটা থমকে গেলেও পরবর্তীতে তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সর্বশেষ গত রবিবারও কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ-বিজিবির অভিযানে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ইয়াবার বড় একটি চালান আটক হয়েছে। এই ধরনের প্রায় চালান আসছে সীমান্তের ওপারে অর্থাৎ মিয়ানমারে প্রতিষ্ঠিত ৩৭ ইয়াবা উৎপাদনকারী কারখানাতে। মিয়ানমারে স্থাপিত এই ৩৭ কারখানায় উৎপাদিত পুরো ইয়াবার বাজার পরিণত হয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কমতি ছিল না। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের করাল গ্রাস রোধে তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু কোন কিছুতেই মাদক পাচার ও সেবন রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে আইন সংশোধনের দাবি উঠে। এ নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কাজ শুরু করে। দীর্ঘ তৎপরতা চালিয়ে প্রণীত হয় এর খসড়া আইন। যা সোমবার মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপিত হওয়ার পর নীতিগতভাবে অনুমোদন পেল। এখন অপেক্ষা এটিকে আইনে পরিণত করা। দেশের ইতিহাসে মাদকের অপব্যবহার নিয়ে এ ধরনের কঠোর আইন ইতোপূর্বে কখনও কোন সরকার করেনি। এ না করার জের হিসেবে মাদক চোরাচালানের সিন্ডিকেট ও মাদক সেবনকারীদের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে যায়। মাদকের মধ্যে বিশেষ করে ইয়াবা সেবন দেশে এক ধরনের মহামারি রূপ নিয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থার এক শ্রেণীর সদস্যগণও রাতারাতি অর্থবিত্ত গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে পুলিশের কিছু দুর্নীতিবাজ সদস্য ইতোমধ্যে ইয়াবা পাচারে হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা কোনভাবে কাম্য হতে পারে না। এ অবস্থায় সরকার এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আইন সংশোধনের নির্দেশনা প্রদান করে। যারই ফলশ্রুতিতে প্রণীত হলো নতুন এই আইন। আইনটি পুরোপুরি বিল আকারে প্রস্তুত করা হয়েছে। সংসদে পাস হলেই এটি আইনে পরিণত হয়ে কার্যকর হবে। পুরনো আইনে ইয়াবা সীসাবার, ডোপটেস্ট, খাত, মাদক সংক্রান্তে মানি লন্ডারিংসহ যে কোন ধরনের মাদক এ আইনের আওতায় থাকবে। অর্থাৎ ১৯৯০ সালে প্রণীত আইনে যে সব ঘাটতি ছিল এতে সবই পূরণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিয়ারের সংখ্যাও হালনাগাদ করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে দশমিক ৫ শতাংশ এ্যালকোহলযুক্ত পানীয়কে বিয়ার বলা হবে। আর সীসার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে বিভিন্ন ভেষজ নির্যাস সহযোগে ২ শতাংশের উর্ধে নিকোটিন এবং এসএস ক্যানেল মিশ্রিত উৎপাদন সামগ্রী। আর মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে মাদকদ্রব্যের সঙ্গে অন্য যে কোন দ্রব্য মিশ্রিত এবং একীভূত দ্রব্য নিয়ে সমুদয় পণ্যও মাদকদ্রব্য বলে গণ্য হবে।
×