ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী গ্রুপগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতায় বাড়ছে সংশয়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৮ অক্টোবর ২০১৮

জঙ্গী গ্রুপগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতায় বাড়ছে সংশয়

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত এবং নিষিদ্ধ করা হয়নি এমন জঙ্গী সংগঠনগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে আবারও সংগঠিত হচ্ছে কি না- তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা সংশয়ের উদ্রেক করেছে। শুধু সাধারণ মহল নয়, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও আলোচনায় এসেছে। দেশের বিভিন্ন সংস্থার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, কমপক্ষে ২০টি জঙ্গী সংগঠন গজিয়ে উঠেছিল। এর মধ্যে জেএমবি, নব্য জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ হুজি, জাগ্রত মুসলিম জনতা, হিযবুত তাহরির ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অবশিষ্ট জঙ্গী সংগঠনগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকলেও প্রকাশ্যে সক্রিয় নয়। কিছু দিন জঙ্গী সংগঠনগুলোর তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ডে যে এরা সক্রিয় রয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে গত শুক্রবার মীরসরাই জোরারগঞ্জের জঙ্গী আস্তানার সন্ধান লাভ ও র‌্যাবের অভিযান পরিচালনার পর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেএমবি এক সময় নিস্ক্রিয় হয়ে নব্য জেএমবি হয়েছিল। কিন্তু এখন নব্য জেএমবির পাশাপাশি পূর্বের জেএমবিও সক্রিয় বলে প্রতীয়মান। শুক্রবারের মীরসরাইয়ের ঘটনাটি জেএমবিরই ছিল। পবিত্র ইসলামের নামে এসব জঙ্গী সংগঠনগুলোর সব তৎপরতা নাশকতামূলক। ইসলাম এসব জঙ্গী তৎপরতা কখনও সমর্থন করে না। এরপর ধর্মের দোহাই দিয়ে এরা ধর্মভীরুদের টেনে নিতে সক্ষম হয়। ধরিয়ে দেয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য। প্রশিক্ষণ দেয় নাশকতার। শুধু পুরুষ নয়, এরা যে নারীদেরও দলে ভিড়িয়েছে অতীতে এর প্রমাণ মিলেছে। সর্বশেষ শুক্রবারও মীরসরাইয়ের ঘটনায় এক নারীর যে সম্পৃক্ততা ছিল তার তথ্য মিলেছে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য মিলেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ভিত্তিক জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা এবং পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে খাগড়াছড়ির গহিনে কিছু জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে। এসব স্থানে বিভিন্ন স্যাটেলারদের অবস্থান। এদের সংগঠিত করে জঙ্গী আদর্শে উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া রয়েছে। অতীতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সরকারবিরোধী বিভিন্ন মহলের পক্ষে পরিবেশ অস্থিতিশীল করে রাখার যে চিন্তা ভাবনা রয়েছে জঙ্গী সংগঠনগুলোর তৎপরতা একই সূত্রে আবদ্ধ বলে ধারণা মিলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বিশেষ করে র‌্যাব এ নিয়ে একক ও আলাদাভাবে তৎপর রয়েছে। মূলত প্রতিটি জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতায় আঘাত আসার পর এদের সক্রিয় অবস্থান তছনছ হয়ে আছে। কিন্তু একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানের মধ্যে মীরসরাই-সীতাকুন্ড এলাকায় জঙ্গীদের আস্তানা থাকার তথ্য পেয়ে র‌্যাব তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত শুক্রবারের জেরারগঞ্জের আস্তানার সন্ধান মিলে যায়। অপরদিকে, সরকারবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচন নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে এদের সঙ্গে জঙ্গী সংগঠনগুলোর পরোক্ষ লিয়াজোঁ থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়েছে, আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের চেয়ে জঙ্গী সংগঠনগুলোর অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদির মজুদ অনেক বেশি। বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত যেসব জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে সে সব আস্তানা থেকে ভারি অস্ত্রের মধ্যে রকেট লাঞ্চার, একে-৪৭, একে-২২ রাইফেল, আর্জেস গ্রেনেড, হ্যান্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ বেশি মেলে। আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের তৎপরতার পাশাপাশি জঙ্গীদের আস্তানায় যেসব অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে তা উদ্ধারে আরও তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি এদের প্রকাশ্য তৎপরতায় জোরালো আঘাত আনার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক জঙ্গী সংগঠনগুলোর টার্গেটে রয়েছে। এর মূল কারণ দীর্ঘ এ সড়কে বিশেষ করে মীরসরাই ও সীতাকুন্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জঙ্গলাকীর্ণ। সহজে এসব পয়েন্টে জঙ্গীদের তৎপরতা চালানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে র‌্যাবের পক্ষে বহুমুখী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
×