ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হচ্ছে না মিয়ানমার থেকে আসা চালান ॥ অধরা বিগ বস

টেকনাফ থেকে দুদিনে সাড়ে ১৭ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ অক্টোবর ২০১৮

 টেকনাফ থেকে দুদিনে সাড়ে ১৭ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হচ্ছে না। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা প্রতিদিন একাধিক চালান জব্দ করলেও সীমান্তে ইয়াবা কারবার বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত দুই দিনে সাড়ে ১৭ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। তন্মধ্যে একদিনে টেকনাফে ৯ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করেছে বিজিবি-পুলিশ। টেকনাফ সীমান্ত থেকে চালান পৌঁছে দেয়ার সময় পথিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে প্রায় আট লাখ পিস ইয়াবা। শীর্ষ গডফাদাররা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা সত্ত্বেও ইয়াবা কারবার রোধ করা যাচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে একাধিক মহল থেকে। রবিবার ভোরে টেকনাফের নোয়াখালিয়া পাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে সৈকত থেকে পুলিশ-বিজিবির পৃথক অভিযানে একই স্থান হতে ৮ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিত বডুয়া জনকণ্ঠকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে ৬ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা গেছে। ওই সময় পালিয়ে গেছে ইয়াবা সরবরাহকারীরা। টেকনাফ বিজিবি অধিনায়ক আসাদুজ্জামান খান বলেন, রবিবার ভোর রাতে নোয়াখালিয়া পাড়ায় অভিযান চালায় বিজিবি। টহল দলের উপস্থিতি দেখে ইয়াবা কারবারিরা সাগরে মাল ফেলে পালিয়ে যায়। সকালে সেখান থেকে ২লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ওই সময় ইয়াবা চালানের মালিকরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে কোস্টগার্ড। অভিযানে সেন্টমার্টিন ছেড়া দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম কর্নারে সাগরে একটি বোটকে থামানোর সঙ্কেত দিলে না থামিয়ে দুইটি প্লাস্টিকের পানির জেরিক্যান ফেলে দ্রুত মিয়ানমার সীমানার দিকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফেলে দেয়া দুইটি পানির জেরিক্যানের ভেতর তল্লাশি করে ১ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। এদিকে তিনটি বড় চালান উদ্ধার করা গেলেও ইয়াবা কারবারে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, ইয়াবা বহনে ব্যবহৃত নৌকার মালিক বড় ডেইল এলাকার এক সাবেক মেম্বারের ছেলে। অবৈধ পণ্যের মালিক লম্বরী এলাকার দুইজন, নাজির পাড়ার একজন ও রাজারছড়ার চার জন বলে এমন তথ্য এসেছে প্রশাসনের কাছে। স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ বলেন, আমরা ইতোপূর্বেও লক্ষ্য করেছি, প্রশাসনের লোকজন ইয়াবার বড় বড় চালান উদ্ধার করতে পারলেও এ কাজে জড়িত কাউকে তারা আটক করতে পারে না। এতে ওই চোরাচালানিরা পার পেয়ে ফের ইয়াবার চালান এনে জব্দ হওয়া মালের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ধান্ধায় মরিয়া হয়ে উঠে। জেলা প্রশাসন থেকে টেকনাফের ইয়াবা সম্রাটদের নির্মিত সুরম্য অট্টালিকা রিকুইজিশন করার সিদ্ধান্ত হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে ইয়াবা কারবারিরা দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজ নিজ এলাকায়। সচেতন মহল বলেন, ইয়াবার চালানের সঙ্গে জড়িতদের হাতেনাতে আটক ও তাদের স্বীকারোক্তি মতে গডফাদারকে পলাতক আসামি করে মামলা টুকে দিলে হয়ত কিছুটা হলেও ইয়াবা রোধ করা সম্ভব হতে পারে। তারা বলেন, সীমান্তে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইয়াবা রোধকল্পে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে ঠিকই। তবে মিয়ানমারে প্রতিষ্ঠিত ৩৭টি ইয়াবা কারখানা চালু থাকায় এবং টেকনাফ-ঢাকা ভিত্তিক সিন্ডিকেটের গডফাদাররা ধরা না পড়ায় ইয়াবার আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। তারা আরও বলেন, গত চার মাস আগে যখন ইয়াবাবিরোধী অভিযান পুরোদমে চলছিল, তখন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে তৈরিকৃত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত গডফাদাররা গা ঢাকা দিয়েছিল। ওই সময় ইয়াবার চালান আসাও এক প্রকারে বন্ধ ছিল বললে চলে। কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে পরবর্তীতে তারা নিজেদেরকে ইয়াবা কারবারি নয় দাবি করে তালিকার অগ্রভাগে থাকা টেকনাফ এবং উখিয়ার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও গডফাদার ফের ফিরে এসেছে স্ব স্ব এলাকায়। এরপর থেকে আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আনার কর্মকান্ড।
×