ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জোর প্রস্তুতি চৌদ্দদলীয় জোটের, বিএনপির দিকে তাকিয়ে শরিকরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৮ অক্টোবর ২০১৮

  জোর প্রস্তুতি চৌদ্দদলীয় জোটের, বিএনপির দিকে তাকিয়ে শরিকরা

শরীফুল ইসলাম ॥ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি জোরদার করার চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করায় জোটের শরিকদের সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তেমন কোন আলোচনা করছে না। এ পরিস্থিতিতে জোটের শরিকরা তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকে। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কি ইঙ্গিত দেয়া হয় তা দেখে তারা পরবর্তী কর্মকৌশল ঠিক করতে চায়। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে কোনভাবে মুক্ত করা যায় কি না সে জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশী কূটনীতিকসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা নিয়ে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের আগে মুক্ত করতে চাচ্ছে বিএনপি। তবে এখন পর্যন্ত এ কাজে সফল হওয়ার কোন লক্ষণ দেখছেন না দলের নেতারা। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের আগে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে এমন আশা পোষণ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে মুক্ত খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না এমন কথা দলের সিনিয়র নেতারা হরহামেশাই বলে থাকেন। কিন্তু আসলেই কি খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না? এমন উত্তর খুঁজতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দুই রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন মুক্ত খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া কোন অবস্থাতেই ঠিক হবে না। কারণ, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখে নির্বাচন করলে বিএনপির পক্ষে ভাল ফল বয়ে আনা সম্ভব হবে না। আবার কেউ বলছেন, কোন কারণে খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে কিংবা তারেক রহমান দেশে ফিরতে না পারলেও বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তা না হলে দলের সুবিধাবাদী নেতারা অন্য দলে যোগ দিয়ে নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি নতুন করে সঙ্কটে পড়বে। জানা যায়, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আপাতত কোন কর্মসূচী পালন না করে অধ্যাপক ডাঃ বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তবে এখন পর্যন্ত বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। কারণ, বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দিতে বলেছিলেন যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। কিন্তু বিএনপি চাচ্ছে আপাতত জামায়াতকে জোটসঙ্গী রেখেই বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করতে। তবে বিএনপির এমন কৌশল যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা মেনে না নিলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমন ইস্যুতে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করা যায় কি না এটি নিয়ে এখন উভয়পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চলছে। ইতোমধ্যেই অধ্যাপক ডাঃ বি চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সূত্রমতে, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্য থেকে কোন কোন দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জোটের অবস্থান কি তা বিএনপির কাছে জানতে চেয়েছে । বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সময় হলে জানানো হবে। কখন সময় হবে আর কখন নির্বাচনের বিষয়ে জোটের শরিকরা জানতে পারবে এ নিয়ে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি যদি নির্বাচনের বিষয়ে কোন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় সে ক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের কটি শরিক দল অন্য রাজনৈতিক জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচন করতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। আর এমন সম্ভাবনা ধরে নিয়ে বিএনপিও জোটের শরিক দলগুলোর সিনিয়র নেতাদের প্রতি কঠোর নজর রাখছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের একজন সিনিয়র নেতা জনকণ্ঠকে জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলে আসছে। এ মাসেই নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার কথা শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১৪ দলীয় জোটসহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখনও নীরব। আমরা জোটের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর তাগিদ দিলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে আমরা অপেক্ষায় আছি কখন বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী তৎপরতা জোরদার করতে বলা হয়। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবেই ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০ দলীয় জোটের কোন দল কত আসন পাবে, নেতাদের মধ্যে কে কে নির্বাচন করতে পারবেন এবং কোন আসন কাকে ছাড়া হবে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা জরুরী হলেও এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন তৎপরতা নেই। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন, ইভিএম-এ ভোট না নেয়াসহ দলের পক্ষ থেকে যে ৭ দফা দাবি দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয় কি না তা দেখা হচ্ছে। এর পর পরিস্থিতি সাপেক্ষে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচীসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলকে দিয়ে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের চেষ্টা করবে দলটি। তারপর নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে দলটি। আর এ কারণেই ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে নির্বাচনের কৌশল নিয়ে এখনও কোন কথা বলছেন না বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্র ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। তাই এ দলের নির্বাচনের প্রস্তুতি সবসময়ই থাকে। তবে আমরা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না। ইতোমধ্যেই আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ৭ দফা দাবি পেশ করেছি। আমরা দেখব খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়াসহ সরকার আমাদের দাবি আদায়ে কোন ব্যবস্থা নেয় কি না। তারপর আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করব।
×