ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ শুভ মহালয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৮ অক্টোবর ২০১৮

 আজ শুভ মহালয়া

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মহালয়া এলেই বাংলার মাটি-নদী-আকাশ প্রস্তুত হয় মাতৃপূজার মহালগ্নকে বরণ করার জন্য। কাশফুল ফুটলে শরত আসে, না শরত এলে কাশফুল এসব নিয়ে বিস্তর তর্ক চলতে পারে। কিন্তু মহালয়া এলেই যে দুর্গাপূজা এসে যায়, তা নিয়ে তর্কের কোন অবকাশ নেই। মহালয়া এলেই সেই দেবী-বন্দনার সুরধ্বনিত হয় বাংলার হৃদয়ে। দূর থেকে ভেসে আসে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু....’ মহালয়ার মন্ত্রোচারণ। বুকের মধ্যে জাগে আনন্দ-শিহরিত কম্পন, মা আসবেন। প্রতিমা তৈরি শেষ। মাটির শেষ প্রলেপটুকুও শুকিয়ে এসেছে অনেকটা। আজকালের মধ্যেই বাহারি রং চড়বে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলবেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গনেশের গায় উঠবে নক্সিদার কুচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়বে। আর বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার স্নিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজারীকে। আজ শুভ মহালয়া। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসাবে পরিচিত। আর এই চন্ডীতেই আছে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে দেবী দুর্গার। বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মহালয়া। আজ ভোরে চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে আবাহন ঘটবে দেবী দুর্গার। দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে মর্ত্যলোকে। আগামী রবিবার দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমনধ্বনী শুনতে পাবেন। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার অর্থ হচ্ছে, মহান আলোয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে আবাহন। দু’টি পক্ষ রয়েছে, একটি হলো পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবীপক্ষের। আজ মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে সেই দেবীপক্ষ। আজ পিতৃপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের সূচনা। ধর্মমতে, এই দিনে দেব-দেবীকূল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। মহালয়ার দিন ভোরে মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয়। এদিন গঙ্গাতীরে প্রার্থনা করে ভক্তরা মৃত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন। তাই মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেবীর আরাধনা সূচিত হয় মহালয়ার মাধ্যমে। মহালয়া থেকেই দেবীপক্ষের শুরু। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরতকালের এই পূজাকে হিন্দুমতে অকালবোধনও বলা হয়। সনাতম পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ, মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। আজ দুর্গাদেবীর আবাহন বা মহালয়া। আজ থেকে ৭ দিন পরে দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য আগের দিন ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনধ্বনি অনুরণিত হতে শুরু করবে। ১৬ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১৭ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, ১৮ অক্টোবর মহানবমী শেষে ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব। মহালয়া উপলক্ষে আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মন্দির ও পূজাম-পগুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা আয়োজিত হবে। বেতার-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার এবং সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের কেন্দ্রীয় পূজাম-পে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান এবং পরে মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা আয়োজিত হবে। এর আগে গত বছরের দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে মন্দিরের নিজস্ব জলাশয়ে। মহালয়া অনুষ্ঠানে চন্ডীপাঠ ও সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বনানী মাঠে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামন্ডপের মহালয়ার অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির এবং সিদ্ধেশ্বরী পূজামন্ডপসহ রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামন্ডপে মহালয়া উপলক্ষে চন্ডীপাঠ, চন্ডীপূজা, আবহন সঙ্গীত, ধর্মীয় আলোচনা সভা, ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
×