ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী এগারো ফসলে পাবে ৮০ কোটি টাকার প্রণোদনা ॥ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে শস্য বহুমুখী করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ অক্টোবর ২০১৮

   ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী এগারো ফসলে পাবে ৮০ কোটি টাকার প্রণোদনা ॥ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে শস্য বহুমুখী  করার উদ্যোগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ডাল, তেল ও সবজিজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরকার ১১ ফসলে সারাদেশে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯৭০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৭৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮২ হাজার ৪৯৫ টাকার প্রণোদনা দেবে। রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এ প্রণোদনা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। প্রণোদনা হিসেবে কৃষকরা চলতি রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, চীনাবাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটি বেগুন, বোরো, শীতকালীন মুগ এবং পরবর্তী খরিপ-১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল উৎপাদনে বীজ ও রাসায়নিক সার (ডিএপি ও এমওপি) পাবেন। এসব ফসল উৎপাদনে দেশের ৬৪ জেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনার মাধ্যমে পরিবারপ্রতি সর্বোচ্চ ১ বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার দেয়া হবে। গমের ক্ষেত্রে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৭০০, ভুট্টার ক্ষেত্রে ২ লাখ ২১ হাজার ৫০০, সরিষার ক্ষেত্রে ২ লাখ ১০ হাজার ২০০, চীনাবাদামের ক্ষেত্রে ১০ হাজার ১০০, গ্রীষ্মকালীন তিলের ক্ষেত্রে ১৮ হাজার, গ্রীষ্মকালীন মুগের ক্ষেত্রে ৪৮ হাজার ৪০০, শীতকালীন মুগের ক্ষেত্রে ২৪ হাজার ৩০০, খেসারির ক্ষেত্রে ১৩ হাজার ৬০০, ফেলনের ক্ষেত্রে ৫ হাজার ৪০০, বিটি বেগুনের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৭০ ও বোরোতে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৭১ হাজার ৭০০ জন। একবিঘা জমির জন্য গমের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ২০ কেজি বীজ, ৫ কেজি ধান বীজ, ভুট্টার ক্ষেত্রে ২ কেজি বীজ ও সরিষার ক্ষেত্রে এক কেজি বীজ, চীনাবাদামের ক্ষেত্রে ১০ কেজি বীজ, গ্রীষ্মকালীন তিলের ক্ষেত্রে এক কেজি বীজ, গ্রীষ্মকালীন মুগের ক্ষেত্রে ৫ কেজি বীজ, খেসারির ক্ষেত্রে ৮ কেজি বীজ, ফেলনের ক্ষেত্রে ৭ কেজি বীজ ও বিটি বেগুনের ক্ষেত্রে ২০ গ্রাম বীজ দেয়া হবে। ধান, গম, ভুট্টা, গ্রীষ্মকালীন তিল, সরিষা ও বিটিবেগুনের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন। চীনাবাদাম, গ্রীষ্মকালীন মুগ, শীতকালীন মুগ, খেসারি, মাসকলাই ও ফেলনে প্রত্যেক কৃষক ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে পাবেন। সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রণোদনার মাধ্যমে ১১টি ফসলে কৃষককে উৎসাহিত করা, আবাদ এলাকা বৃদ্ধি ও ফসলগুলোর হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে। অর্থ সংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ প্রণোদনা কার্যক্রমের অর্থ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ থেকে সংকুলান করা হবে। এ জন্য সরকারের কোন অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না। প্রণোদনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দেশের মানুষের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা মিটানো। বন্যা, জলাবদ্ধতা, ভূমিক্ষয়, অনাবৃষ্টি, খরা, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ, ঘন কুয়াশাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষক সমাজকে অভ্যস্ত করে তোলা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করে কৃষককে দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলা। দেশের বিভিন্ন জেলায় পতিত ও সাময়িক পতিত জমি আবাদের আওতায় এনে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা। কৃষককে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলা। নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাতের সঙ্গে কৃষককে পরিচয় করিয়ে দেয়া। উচ্চ মূল্য ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা। সর্বোপরি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে কৃষকগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সুসংহত করার জন্য গম, ভুট্টা,সরিষা, চিনা বাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটিবেগুন, বোরো, শীতকালীন মুগ, গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল আবাদে কৃষককে উৎসাহিতকরণ, ফসলের আবাদ এলাকা বৃদ্ধি, হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধি, দানাশস্য এবং ডাল, তেল ও সবজিজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য এই প্রণোদনা কার্যক্রম বলে উল্লেখ করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো নাসিরুজামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও উপকরণ অনুবিভাগ) সিরাজুল হায়দার, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি অনুবিভাগ) মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) সনৎ কুমার সাহা, বিএডিসির চেয়ারম্যান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
×