ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ হত্যায় মামুনের ফাঁসি আপীলেও বহাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ অক্টোবর ২০১৮

   সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ হত্যায় মামুনের ফাঁসি আপীলেও বহাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যা মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম মামুনের মৃত্যুদন্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপীল বিভাগ। এর ফলে মামুনের মৃত্যুদন্ডাদেশসহ অন্য আসামিদের সাজাও বহাল থাকল। এ রায়ের ফলে এ মামলার সব আইনী প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার করা আপীলের ওপর পুনঃশুনানি শেষে আজ সোমবার রায় ঘোষণা হতে পারে। রবিবার আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছে। সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যা মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম মামুনের মৃত্যুদন্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপীল বিভাগ। রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সাইফুলের করা আবেদন খারিজ করে এ আদেশ প্রদান করেন। এখন সংবিধান অনুযায়ী, সাইফুল ইসলাম তার কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। সেই আবেদনও খারিজ হয়ে গেলে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে আর কোন আইনগত বাধা নেই বলে জানা গেছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট কাজী আকতার হামিদ ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২০১২ সালের ৫ মার্চ মধ্যরাতে গুলশানে নিজের বাসার কাছে গুলিবিদ্ধ হয় সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলী (৪৫)। পরদিন ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। সেলিম চৌধুরী ছাড়া অপর চার আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ মামলার রায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেয়। আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১৮ নবেম্বর একজনের মৃত্যুদন্ড, তিনজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একজনকে খালাস দিয়ে রায় দেয়। আসামিদের মধ্যে সাইফুল ইসলামের মৃত্যুদন্ড হাইকোর্টের রায়েও বহাল থাকে। বিচারিক আদালতে দেয়া মৃত্যুদন্ডের সাজা কমে আসামি মোঃ আল আমীন, আকবর আলী লালু ও রফিকুল ইসলামের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। পলাতক আসামি সেলিম চৌধুরী খালাস পায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। খালাফ আল আলী হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় আপীলেও বহাল রেখে গত বছর ১ নবেম্বর রায় দেয় আপীল বিভাগ। রায়ে খালাফ আল আলীকে হত্যার দায়ে আসামি সাইফুল ইসলামের মৃত্যুদন্ডসহ হাইকোর্টের পুরো রায় বহাল রেখেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। ফলে অন্য তিন আসামি আল আমিন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি ও রফিকুল ইসলাম খোকনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডও বহাল রয়েছে। ৫ আসামির মধ্যে অপরজন পলাতক সেলিম চৌধুরী ওরফে সেলিম আহমেদকে হাইকোর্টের মতো আপীল বিভাগও বেকসুর খালাস প্রদান করে। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপীল বিভাগ বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে আপীলে দুদফা শুনানি নেয়ার পর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের মোট চারটি আপীল নিষ্পত্তি করে রায় দেয়। পরে সাইফুল ইসলাম মামুনের মৃত্যুদ-ের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হয়। এর ওপর গত বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে রবিবার আদেশ প্রদান করা হয়। মায়ার আপীলের শুনানি শেষ, আজ রায় হতে পারে ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার দুর্নীতির মামলায় দ-ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীলের ওপর পুনঃশুনানির রায় ঘোষণার দিন পিছিয়েছে। রবিবার রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিন থাকলেও আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও শুনানি শুরু হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আজ সোমবার ধার্য করে হাইকোর্ট। রবিবার বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে মায়ার পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, রবিবার মায়ার পক্ষে আবারও শুনানি করেছেন তার আইনজীবী। আজ সোমবার দুদকের আইনজীবী শুনানি করবেন। আজই রায় ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
×