ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্ক পুলিশের ধারণা রিয়াদই দায়ী

সৌদি সাংবাদিক খুন!

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৮ অক্টোবর ২০১৮

সৌদি সাংবাদিক খুন!

সৌদি সাংবাদিক ও রাজ পরিবারের সমালোচক জামাল খাশাগজিকে ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়েছে, তুরস্কের পুলিশ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। তিনি গত মঙ্গলবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারী কর্মকর্তা শনিবার একথা জানিয়েছেন। এএফপি। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ থেকে পুলিশ এটি ধারণা করছে যে খাশাগজিকে হত্যার জন্য একদল লোককে ইস্তানবুলে পাঠান হয়েছিল যারা ওই দিনই তাদের কাজ শেষ করে চলে গেছে।’ তুরস্কের পুলিশের ধারণা কর্মকর্তাসহ ১৫ জন সৌদি দুটি ফ্লাইটে মঙ্গলবার ইস্তানবুলে পৌঁছেন। তুরস্কের পুলিশ বার্তাসংস্থা আনাদলুকে বলেছে, ওয়াশিংটন পোস্টের কন্ট্রিবিউটর (খাশাগজি) একটি অফিসিয়াল কাজের জন্য কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন তবে তিনি সেখান থেকে বের হননি। প্রাথমিক তদন্তে আঙ্কারা এটি নিশ্চিত খাশাগজিকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে তাকে হত্যা চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে সৌদি আরব। দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তাসংস্থা এসপিএ বলেছে, এ ধরনের অপরাধে জড়িত হওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এতে আরও বলা হয়, স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার জন্য সৌদি আরব একদল তদন্তকারী সেখানে পাঠিয়েছে। তুরস্কের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, খাশাগজিকে হত্যা করে মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পর আঙ্কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘটনার একটি স্পষ্ট বিবরণ আসল। যদিও তারা এ বিষয়ে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। আলকায়েদার সাবেক নেতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে ভ্রমণ ও তার সাক্ষাতকার খাশাগজি। আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী লড়াই নিয়ে লেখালেখি করতে গিয়ে ১৯৮০-এর দশকে বিন লাদেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। খাশাগজি তার নিবন্ধে বিভিন্ন সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করেছেন। ইয়েমেনে সৌদি অভিযানেরও তিনি একজন কট্টর সমালোচক। সম্ভাব্য গ্রেফতার এড়ানোর জন্য খাশাগজি গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলনকারীরা খাশাগজির সম্ভাব্য হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা করেছে। নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস রিয়াদের কাছে দাবি করেছে, ইস্তানবুলের কনস্যুলেটে কি ঘটেছে তার যেন একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) বলেছে, খাশাগজি হত্যার খবর সত্য হয়ে থাকলে ‘এটি হবে একটি ভয়াবহ, দুঃখজনক এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য হামলা।’ যুবরাজ বিন সালমান অবশ্য এর আগে ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ওই সাংবাদিক কনস্যুলেটের ভেতরই আছেন, তুরস্কের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে দেখতে পারে। যদিও একটি দেশের কনস্যুলেট সে দেশেরই সার্বভৌম এলাকা। তিনি বলেছিলেন, ‘তারা সেখানে ঢুকে যেখানে খুশি তল্লাশি চালাতে পারেন। আমাদের লুকানোর কিছু নেই।’ তিনি বলেন, খাশাগজি সেখানে ঢুকেছিলেন। কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মতো অবস্থান করেই তিনি বেরিয়ে গেছেন। এই ঘটনায় বুধবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়। খাশাগজির বাগদত্তা শনিবার টুইটে বলেন, ‘জামাল (খাশাগজি) নিহত হননি। আমি মনে করি না কেউ তাকে হত্যা করবে। তিনি কনস্যুলেটে গিয়েছেন। তবে কেউ তাকে বের হতে দেখেনি।’ তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির মুখপাত্র বলেছেন, ‘তিনি কোথায় আছেন সেটি খুঁজে বের করা হবে। তার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কাদের হাত আছে সেটি খুঁজে বের করা হবে।’
×