ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় হাতিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৭ অক্টোবর ২০১৮

অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় হাতিয়া

বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটি উপকূলীয় দ্বীপ হাতিয়া। চারদিকে অথৈ জলের রাশি আর উত্তাল তরঙ্গের মাঝে ভাসমান ভেলা সদৃশ এ দ্বীপ এবং তার আশপাশে জেগে ওঠা ১৯টি চর নিয়ে হাতিয়া নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। ২১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য সংবলিত এ দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে জেগে ওঠা এ দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম পার্শ্বে প্রবাহিত মেঘনা নদী এবং পূর্ব ও দক্ষিণ পার্শ্বে কল কল রবে বয়ে চলেছে বঙ্গোপসাগর। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বীপ নতুন সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে। মেঘনা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ধীরে ধীরে জেগে ওঠা এই বিস্ময়কর দ্বীপ আয়তনে প্রায় সিঙ্গাপুরের সমান। স্বর্ণদ্বীপটি দৈর্ঘ্যে ২৮ কিলোমিটার আর প্রস্থে প্রায় ১৪ কিলোমিটার। নোয়াখালীর মূল ভূখ- থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, স্বর্ণদ্বীপ থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হাতিয়া থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত স্বর্ণদ্বীপকে ঘিরে একটি পরিকল্পিত ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র তৈরির অমিত সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বর্ণদ্বীপে গত পাঁচ বছরে অনেক কিছুই গড়ে তোলা হয়েছে। বনায়ন, সাইক্লোন শেল্টার, পুকুর, সৌরবিদ্যুত প্রকল্প, নারিকেল বাগান, ঝাউ বাগানসহ গরম, ভেড়া, মুরগি, হাঁস ও কবুতরের খামারও গড়ে তোলা হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপ বাংলাদেশের মূল ভূখ- থেকে আলাদা। স্বর্ণদ্বীপটির চারপাশে রয়েছে গভীর সমুদ্র। বহু দিনের চেষ্টায় জনবিরল এলাকাটি বাসযোগ্য ও সবুজে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। বিনিয়োগ করে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা গেলে স্বর্ণদ্বীপটি হতে পারে বিরাট এক সম্ভাবনার ক্ষেত্র। এক কথায়, জেগে ওঠা স্বর্ণদ্বীপটি হতে পারে আরেক সিঙ্গাপুর! উল্লেখ্য, বর্ষায় স্বর্ণদ্বীপের একটা অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করা গেলে অর্থনীতি ও পর্যটন ক্ষেত্রেও স্বর্ণদ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে হাতছানি হয়ে দেখা দিতে পারে। নিঝুমদ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ, যে দ্বীপে মানুষের চেয়ে হরিণ বেশি। দ্বীপের বনে, ফসলের মাঠে, রাস্তাঘাটের পাশাপাশি লোকালয়েও ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায় হরিণের পাল। নিঝুমদ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এ ছাড়া শীতের মৌসুমে অজ¯্র প্রজাতির অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এ দ্বীপ। নিঝুমদ্বীপে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে পলিমাটির চর; যা জোয়ারের পানিতে ডোবে এবং ভাটায় শুকিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুমদ্বীপ বিখ্যাত। এ ছাড়া শীত কিংবা শীত-পরবর্তী মৌসুমে নিঝুমদ্বীপ চেউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এ মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। সিঙ্গাপুর গত ৫০ বছরে সুমদ্র রিক্লেইম করে বিপুল পরিমাণ ভূখ- সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সমুদ্র রিক্লেইম করে ভূমি উদ্ধার করে স্বর্ণদ্বীপসহ অন্যান্য দ্বীপগুলোর অর্থনৈতিক ও পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই ধীরে ধীরে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশের সমান ভূ-স্বর্গ। এসব সম্ভাবনাকে সমন্বয় করা গেলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র্র্র হিসেবে আরও বেশি সুপরিচিতি লাভ করবে। সত্যি বলতে, পরিকল্পিত অর্থায়ন ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বদলে যেতে পারে সম্ভাবনার নতুন নাম স্বর্ণদ্বীপ। দ্বীপটির চারপাশে উঁচু বাঁধ দিয়ে এবং নিবিড় বনায়নের মাধ্যমে বৃক্ষবলয় সৃষ্টি করে সারাবছর এটি ব্যবহারোপযোগী করে তোলা যেতে পারে। স্বর্ণদ্বীপের একাংশ ঘিরে পরিকল্পিত পর্যটন কেন্দ্র যেমন গড়ে উঠতে পারে তেমনি আন্তর্জাতিক মানের মিলিটারি ট্রেনিং একাডেমিসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
×