ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের আদেশ আজ

বরিশালে তালিকাভুক্ত ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৭ অক্টোবর ২০১৮

বরিশালে তালিকাভুক্ত ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা বন্দরে অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা ও নারী ধর্ষণের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে তালিকাভুক্ত রাজাকার এনায়েত হোসেন খানসহ তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ওই উপজেলার মুন্ডুপাশা গ্রামের মন্নান সিকদারের পুত্র কৃষকলীগ নেতা নান্নু সিকদার জানান, গত ৪ অক্টোবর বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল আমলী আদালতে তিনি বাদী হয়ে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেছেন। বিচারক মোঃ গোলাম ফারুক অভিযোগ গ্রহণ করে আজ ৭ অক্টোবর (রবিবার) আদেশের জন্য রেখেছেন বলে জানিয়েছেন, বাদীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন শিপু। মামলায় ধর্ষণের শিকার এক নারীসহ বেশ কয়েক মুক্তিযোদ্ধাকে সাক্ষী করা হয়েছে। ওই আইনজীবী জানান, বরিশাল জেলার রাজাকারদের বিরুদ্ধে এটাই কোন প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা মামলা। মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জয়শ্রী গ্রামের কলম খানের পুত্র রাজাকার এনায়েত হোসেন খান, দক্ষিণ ধামুরা গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর পুত্র বেলায়েত বিশ্বাস, কচুয়া গ্রামের জব্বার খানের দুই পুত্র জলিল খান ও শাহ আলম খানসহ তাদের সহযোগীরা পাক বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তারা উজিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পক্ষে কাজ করা লোকজনদের বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারীদের ধর্ষণসহ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ’৭১ সালের ৮ মে পাক বাহিনীদের নিয়ে রাজাকার এনায়েত খানের নেতৃত্বে অপর আসামিরা ধামুরা বন্দরের কু-ু বাড়ির সামনে আসে। ওইদিন মামলার একজন সাক্ষীর পিতা হিরু মিয়া এবং হরেন ডাঃ নামক দুজনকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে পাক বাহিনী দ্বারা গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া একই বছরের ১৭ অক্টোবর পাক সেনাদের নিয়ে রাজাকার এনায়েত খান ধামুরা বন্দরে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। একই সময় বন্দরে আগুন দিয়ে লুটপাট চালানো হয়। মামলার ৫নং সাক্ষীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে রাজাকার এনায়েত খান। এসব অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য, উজিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কর্তৃক ২০১৬ সালের উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাঠানো ০১.১৬-৭৮ স্মারকের তালিকাভুক্ত রাজাকারদের তালিকায় ওই চার আসামির নাম রয়েছে। যার মধ্যে তালিকার ২২ নম্বরে রাজাকার এনায়েত হোসেন খান, ২৯ নম্বরে রাজাকার বেলায়েত বিশ্বাস, ৩০ নম্বরে রাজাকার আব্দুল জলিল খান ও ৩১ নাম্বারে রাজাকার শাহ আলম খান। মামলার বাদী নান্নু সিকদার জানান, তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক হিসেবে মামলাটি দায়ের করেছেন। রাজাকারদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশ ও জাতি কলঙ্ক মুক্ত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কে এই রাজাকার এনায়েত ॥ উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের মৃত কলম খানের মেঝ পুত্র তালিকাভুক্ত রাজাকার এনায়েত হোসেন খান উজিরপুরের এক সময়ের বহুল আলোচিত সর্বহারা নেতা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। একাধিকবার র‌্যাবের হাতে আটককৃত এনায়েত খান ৮০ দশকের তুখোড় সর্বহারা নেতা হিসেবে উজিরপুরে বেশ পরিচিতি লাভ করে। সে গৌরনদীর একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে হত্যা চেষ্টার মামলায়ও সে (এনায়েত) কারাভোগ করেছে। এ ছাড়া উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘুষ দিতে গিয়েও গ্রেফতার হয় এনায়েত খান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারও অপকর্মের অভিযোগ। শিকারপুর এলাকায় শত শত মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন এনায়েত খান। ভূমিদস্যু ও মামলাবাজ হিসেবে খ্যাত এনায়েত খানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়েরের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
×