ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন মেলায় খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনীর প্রশংসা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৭ অক্টোবর ২০১৮

উন্নয়ন মেলায় খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনীর প্রশংসা

খোকন আহমেদ হীরা, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে একসঙ্গে পরিবহন ও ট্রেন চলাচল, মেট্রো রেল, পদ্মা সেতুর সংযোগের নয়নাভিরাম ছয় লেন সড়ক, দক্ষিণের বিভিন্ন নদের ওপর নির্মিত দীর্ঘ ব্রিজ, বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, ডিজিটাল ক্লাস রুমসহ সরকারের ব্যাপক দৃশ্যমান উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার প্রতীকী নির্মাণ করে জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়েছে। এসব একাধিক দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন চিত্র উদ্ভাবন করেছে কোমলমতি বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসবের বাইরে মেলে ধরা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ-এলজিইডির গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের প্রতীকী চিত্র। এতে বর্তমান সরকারের সময়ে বদলে যাওয়া গ্রামীণ জনপদের বর্তমান চেহারার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। সারাদেশের মতো বরিশালের প্রত্যন্ত আগৈলঝাড়ায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার নানা স্টলে বর্তমান সরকারের মেয়াদে এ রকম অসংখ্য উন্নয়নের প্রতীকী চিত্র মেলে ধরা হয়েছে। মেলায় আসা নানা শ্রেণী ও পেশার দর্শক সরকারের এসব উন্নয়নের সঙ্গে বাস্তবতা মিল খুঁজে পেয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনীর ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল হক তালুকতার জানান, উন্নয়ন মেলাকে সামনে রেখে আগে থেকেই উপজেলার ৯৭টি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত উন্নয়নের প্রতীকী তৈরির জন্য প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী মেলা উদ্বোধনের আগেরদিন প্রতিটি স্কুল থেকে প্রতীকীগুলো শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়। খুদে শিক্ষার্থীদের সেসব উদ্ভাবনকে মেলার মাঠে প্রদর্শন করে তারা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। মেলায় রণাঙ্গন কাঁপানো বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের সময় তাদের ব্যবহৃত প্রতীকী আগ্নেয়াস্ত্র ও নারী উদ্যোক্তারা তাদের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী মেলে ধরেছেন। এছাড়া সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন বিদ্যুত বিভাগ থেকে মেলায় তাদের নানা কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুত সমিতির আওতায় বরিশালের একমাত্র শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা আগৈলঝাড়ার গ্রাহকদের মধ্যে বিদ্যুত সাশ্রয়ে করনীয় বিষয়ে নানাচিত্র মেলায় প্রদর্শন করা হয়। মেলার শুরু থেকে শনিবার শেষদিন পর্যন্ত বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি মেলা মঞ্চে আগত দর্শকদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মেলায় আসা নানা বয়সী দর্শক শ্রোতারা। ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, ব্যাংক-বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং স্থানীয় নানা উন্নয়ন সংস্থা অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ-এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রাজ কুমার গাইন জানান, মেলায় তারা গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে নির্মিত প্রতীকী চিত্র-উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, সেতু ও কালভার্ট, পল্লী সড়ক উন্নয়ন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, গ্রোথ সেন্টার, সাইক্লোন শেল্টার, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, বীর নিবাসসহ বদলে যাওয়া গ্রামীণ জনপদের বর্তমান চেহারার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকারের দশ বছরে স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আপ্রাণ চেষ্টায় তারা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উপজেলায় মোট ২২৫ কোটি ৪শ’ ৭৬ লাখ টাকার উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে কাবিখা, কাবিটা, টিআরের মাধ্যমে ৩৬ কোটি ৮১ লাখ, ৯ হাজার ২৩১ টাকার এবং ২৮ হাজার ৬৪২.৭৪৩ টন খাদ্যশস্যের মাধ্যমে তিন হাজার ১৬৪ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উপজেলায় ভিজিএফ ও ৪০ দিনের কর্মসূচীতে এক লাখ ৩৫ হাজার ২৩ উপকারভোগী রয়েছেন। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির ও গীর্জায় নগদ ৪০ লাখ তিন হাজার টাকা এবং এক হাজার ৪৩.৫০০ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। মেলার পল্লী বিদ্যুত সমিতির স্টলে মেলে ধরা হয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বিদ্যুত ব্যবস্থার নানা উন্নয়নের চিত্র। এতে লোডশেডিয়ের কবল থেকে বের হয়ে আসার জন্য বিদ্যুত সাশ্রয়ে নানামুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত সমিতির জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ হযরত আলী জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সহযোগিতায় বরিশালের মধ্যে সর্বপ্রথম একমাত্র শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে আগৈলঝাড়াকে রূপ দেয়া সম্ভব হয়েছে। মেলার স্টলে দশনার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন জোনাল অফিসের টেকনিশিয়ান সৈয়দ জাকির হোসেন। তিনি জানান, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের সাত হাজার ১৭৯, রতœপুর ইউনিয়নে ছয় হাজার ৪১২, বাকাল ইউনিয়নে পাঁচ হাজার ৭৬০, বাগধা ইউনিয়নের ছয় হাজার ৫৮৬, রাজিহার ইউনিয়নের নয় হাজার ৬০২টি পরিবারের মধ্যে এখন সবাই বিদ্যুতের সুবিধা গ্রহণ করছেন। বাণিজ্যিক ও আবাসিক মিলিয়ে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৫৫। ২০০৯ সালের পূর্বে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ১৩১। তিনি আরও জানান, পুরো বিদ্যুত ব্যবস্থাকে ডিজিটাল সেবার আওতায় আনা হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের বৈপ্লবিক পরিবর্তনকেও মেলায় তুলে ধরেছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারা। মৎস্য বিভাগের স্টলেও ছিল সরকারের সাফল্য মেলে ধরার প্রতিযোগিতা। হাঁস, মুরগি, ছাগল ও গরুর যে কোন রোগবালাই ও সমস্যা সমাধানে মোবাইল ফোনে সেবা প্রদানের দাবি করেছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্টলে থাকা কর্মকর্তারা। এসব উন্নয়নের বাইরে সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানের সেবাদান নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছিল মেলার স্টলগুলোতে। চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে আগৈলঝাড়ায় আলোচনা সভায় জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, আগে নতুন বিদ্যুত সংযোগের জন্য অফিসে গেলে দুই থেকে তিন মাস সময়ের পাশাপাশি মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে হতো। বর্তমান সরকারের সময়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আপ্রাণ চেষ্টায় জেলার মধ্যে সর্বপ্রথম আগৈলঝাড়া উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কাউকে কোন অর্থ দিতে হয়নি। অবহেলিত গ্রামীণ জনপথে বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। এসব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান করেন। মেলার আয়োজক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস জানান, আগামী ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে আগামী ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবেশ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বিনিয়োগ বিকাশসহ সরকারের ১০টি বিশেষ উদ্যোগ প্রচার করার জন্যই উন্নয়নমেলার আয়োজন। ঝালকাঠি ॥ ঝালকাঠির শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ এই স্লোগান নিয়ে ৩ দিনব্যাপী ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার নারী-পুরুষ, শিশুদের পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ।
×