ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ অক্টোবর ২০১৮

চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

চীন যেভাবে বিদেশী প্রযুক্তি ও মেধা সম্পদ হস্তগত করছে এবং প্রযুক্তির দ্বৈত ব্যবহার যেভাবে গোপনে পাচার করছে তাতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে পেন্টাগন মনে করে। চীনের আগ্রাসী শিল্প নীতি মার্কিন সামরিক ও অন্যান্য সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশনায় প্রতিরক্ষা দফতর এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে যা শুক্রবার প্রকাশিত হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ‘এ্যাসেসিং এ্যান্ড স্ট্রেনথনিং দ্য ম্যানুফ্যাকচারিং এ্যান্ড ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেস এ্যান্ড সাপ্লাই চেইন রেসিলেন্সি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন শিল্প খাত বর্তমান নানাবিধ নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী তহবিল সঙ্কুচিত হওয়া থেকে কাঁচামাল সরবরাহকারী ও বাজার অনিশ্চিত হয়ে পড়ার মতো নানামুখী সঙ্কট রয়েছে। দেশের ভেতর দক্ষ জনবল তৈরি না হওয়া এবং বিদেশী প্রতিদ্বন্দ্বীদের আগ্রাসী আচরণ সবই এসবের মধ্যে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাপ্লাই লাইনের বিশ্বায়নের পরিমাণ বেড়ে চলা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সীমিত হওয়া ও দক্ষ কর্মীর সঙ্কট সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ভারত ও চীনে কর্মরত বেশিরভাগ মার্কিন প্রতিষ্ঠানেরই রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আর এ্যান্ড ডি) রয়েছে। উদ্দেশ্য স্বল্প খরচে দক্ষ কর্মী সংগ্রহ করা। প্রযুক্তিভিত্তিক বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো স্বাভাবিকভাবে ভারতে আর এ্যান্ড ডি বিভাগ পরিচালনা করলেও চীনে সেটি করতে সমস্যা হচ্ছে। চীনের বাজারে প্রবেশাধিকারের বিনিময়ে চীনে মার্কিন কোম্পানির আর এ্যান্ড ডি বিভাগকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশে প্রযুক্তিগত কোন উন্নয়ন হলে মেধা সম্পদ আইনের কারণে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো ওগুলোর নাগাল পায় না, ফলে তাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এর ফলে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও রোবোটিক্সের মতো ভবিষ্যত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব হারাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের মতে, বিদেশী প্রযুক্তি ও মেধা সম্পদ চীন যেভাবে দখল করছে প্রযুক্তির দ্বৈত ব্যবহার যেভাবে গোপনে পাচার করছে তাতে চীনের সঙ্গে সামরিক ভারসাম্য হারাতে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তির দ্বৈত ব্যবহার বলতে একই প্রযুক্তিকে শান্তিপূর্ণ ও সামরিক উদ্দেশে ব্যবহার করা বোঝানো হয়েছে। চীন এসব কৌশল এমনভাবে আয়ত্ত করছে, যে এর ফলে বিমান, নৌ, সাইবার ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের আগ্রাসী শিল্প নীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই সামরিক ক্ষেত্রে সোলার সেল ব্যবহার, ফ্ল্যাট প্যানেল এয়ারক্রাফট এবং দুর্লভ খনিজ সম্পদ প্রক্রিয়াকরণে পিছিয়ে পড়েছে। চীনের কর্মকা- অন্যান্য ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেমন মেশিন টুলস উৎপাদন, বায়োম্যাটেরিয়াল, সিরামিক, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ও সেমি কন্ডাক্টর উৎপাদন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়েছে। পেন্টাগনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বিঘিœত হলে বা যথেষ্ট পরিমাণ উৎপাদন না হলে বৈদেশিক নির্ভরশীলতার ঝুঁকি বাড়বে। ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিশেষ কিছু সমরাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত অপরিহার্য উপাদান যে রাসায়নিক উপাদানের একমাত্র উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী দেশ এখন চীন। অনেক ক্ষেত্রেই অপর কোন উৎস কিংবা বিকল্প উপাদান নেই। যেসব ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস বা উপাদানের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে এর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ।
×