ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমন্বিত অংশীদারিত্ব

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৭ অক্টোবর ২০১৮

সমন্বিত অংশীদারিত্ব

বাংলাদেশ-ভারত অগ্রাধিকারভিত্তিতে সব রকম বাণিজ্য বাধা দূর করতে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য আরও বাড়াতে কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দু’দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী। গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বেশ কিছু বিষয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে এবং দুটি দেশই দক্ষিণাঞ্চলীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) সদস্য, যার অধীনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। তবুও দু’একটি ব্যাপারে, এই যেমন পাটপণ্যে এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। এসব প্রত্যাহারের জন্য দিল্লীকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুত ও রেল যোগাযোগের তিনটি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। এর মধ্যে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন ও আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প দুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক কতটা উষ্ণ, আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অন্তত ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রকারান্তরে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির কথাই বলেছেন, যার জন্য প্রয়োজন হবে ভারতের সহযোগিতা। উল্লেখ্য, এ দুটো দেশে বাংলাদেশ বিনিয়োগও করেছে বিদ্যুত খাতে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই মুহূর্তে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ভারতের রেল যোগাযোগ অত্যন্ত উন্নত, আধুনিক ও সুলভ। সে তুলনায় বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, ভঙ্গুর ও অলাভজনক। সে অবস্থায় ভারতের রেলের অভিজ্ঞতা আহরণের মাধ্যমে প্রভূত পরিমাণে উপকৃত হতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। দিল্লী বাংলাদেশের কাছে করিডর, ট্রান্সশিপমেন্ট, শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধাসহ যখন যা চেয়েছে, তখনই তা পেয়েছে। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা সর্বদাই স্মরিত হয়ে থাকে। সে তুলনায় বাংলাদেশের চাহিদা ও প্রাপ্তি অনেক কম। উদাহরণত বলা যায়, উজানে পানির প্রবাহ ও প্রাপ্তির কথা। ভারত কোন অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আইনকানুন ভঙ্গ করে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ করতে পারে না। অথচ ভারত তাই করেছে প্রথমে গঙ্গা এবং পরে তিস্তা ও অন্যান্য নদ-নদীতে বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ করে। সর্বশেষ ব্রহ্মপুত্রেও বাঁধ নির্মাণের কথা শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেই ন্যায়ানুগ ও যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো, গঙ্গার পানি নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তা হয়নি, বরং ঝুলে আছে দীর্ঘদিন থেকে। দু’দেশে অনুষ্ঠেয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ করে ভারতকে এসব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্টের ব্যাপারেও ভারতকে আন্তরিক ও উদ্যোগী হতে হবে।
×