ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণ নীতিমালা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৭ অক্টোবর ২০১৮

স্বর্ণ নীতিমালা

দেশের স্বর্ণ-ব্যবসা ও স্বর্ণ-বাজারে দীর্ঘদিন ধরে যে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থা চলছিল তার আপাত অবসান হতে চলেছে। এতদিন দেশে বৈধ উপায়ে স্বর্ণের আমদানি ও ব্যবসা হয়নি। কার্যত, সমগ্র ব্যবসাটাই পরিচালিত হতো চোরাচালানের মাধ্যমে। এবার বৈধ উপায়ে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির ভিত্তিতে লাইসেন্স নিয়ে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন তারা। এমন বিধান রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। এই নীতিমালা অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলার সরাসরি বা প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে স্বর্ণবার আমদানি করবে। অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণ অলঙ্কার প্রস্তুতকারকদের কাছে তা বিক্রি করতে পারবে। আর অলঙ্কার প্রস্তুত হলে রফতানি আকারে বিদেশে যাবে। যাতে আমাদের রফতানি সেক্টর চাঙ্গা হয়। জানা গেছে, বর্তমান নীতির অতিরিক্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ অলঙ্কারের চাহিদা পূরণকল্পে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার আমদানিতে নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচন বাংলাদেশ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গাইডলাইন প্রস্তত করবে। নীতিমালা বাস্তবায়নে কিছু পদক্ষেপ জরুরী। যেমন ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিক্রয় ক্যাশ মেমোর সাথে স্বর্ণ অলঙ্কারের হলমার্ক স্টিকার বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হবে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংশ্লিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আগের মতোই লাগেজে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বিনা শুল্কে আনার সুবিধা বহাল রাখা এবং ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে আনা যাবে। দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং রফতানির উদ্দেশ্য পূরণ করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ, স্বর্ণালঙ্কার রফতানিতে উৎসাহ এবং নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধিকরণ, স্বর্ণালঙ্কার রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ, স্বর্ণখাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও তদারকির ব্যবস্থা, ভোক্তা-ক্রেতা-স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষণ, সকল অংশীজনের অংশীদারিত্ব, কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বর্ণ খাতের টেকসই বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে এতে। তবে সবার আগে স্বর্ণ-নীতিমালায় ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেয়া জরুরী। নীতিমালাটি কার্যকর হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে স্বর্ণশিল্পের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানকে সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক মূসক নিবন্ধন সনদ নেয়ার যে বিধান রাখা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে এই ব্যবসায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। স্বর্ণ-নীতিমালার খসড়াটি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে স্বর্ণসংক্রান্ত দীর্ঘদিন থেকে উচ্চারিত নানা প্রশ্নের মীমাংসা হয়েছে বলা যায়। আশা করা যেতে পারে স্বর্ণ-নীতিমালাটি কার্যকর হলে দেশে স্বর্ণ-ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। স্বর্ণ নীতিমালার পাশাপাশি স্বর্ণ চোরাচালানিদের দ্রুত বিচার আইনে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। শুধু নীতিমালা প্রণয়ন করলে হবে না, আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমেই স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে এই নীতিমালা দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পে যে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থা চলছিল, তার অবসানের পথ খুলে গেল।
×