বিকাশ দত্ত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে শুরু থেকেই রাজনীতিকীরণ করেছে বিএনপি। শুরুতে জজমিয়া নাটক এবং মামলার শেষ পর্যায়ে রায় ঘোষণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে বিএনপি নেতারা মূলত মূল অপরাধীদেরই আড়াল করতে চাচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের দেয়া বক্তৃতা-বিবৃতির জবাবে এটর্নি জেনারেলসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এমনই মনে করছেন। প্রায় চৌদ্দ বছর পর দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ১০ অক্টোবর মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত গত ১৮ সেপ্টেম্বর এইদিন নির্ধারণ করেন।
মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণার পরই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভোটের আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দমবন্ধ করা পরিস্থিতির সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেই এ মামলার রায় দেয়া হচ্ছে। মামলায় বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে চার্জশীট ফিরিয়ে এনে সম্পূরক চার্জশীট তৈরি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়ানো হয়েছে শুধু মনের ঝাল মেটাতে। এজন্য আইনী প্রক্রিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে কুটিল চক্রান্তের মাধ্যমে তারেক রহমানকে ভিকটিম করা হয়েছে’। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা মনে করেন, কোন মামলার রায় ঘোষণার আগে এমন বক্তব্য ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন , আসামি পক্ষ এ মামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে বিলম্বিত করেছে। অতীতে তারা মামলায় জজমিয়া নাটক সাজিয়েছিল। পরে বার বার হাইকোর্টে এসেছে বিলম্বিত করার উদ্দেশে। এতে আদালতের সময় নষ্ট হয়েছে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর যখন বিচারিক আদালত সকলপক্ষ (রাষ্ট্র ও আসামি) যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১০ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছে। ঠিক তখন বিএনপির নেতৃবৃন্দ উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখানে কোন মন্তব্য করে লাভ নেই।
মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিচারাধীন কোন মামলায় অগ্রীম কোন মন্তব্য করা যায় না। বিএনপি নেতারা তাই করছেন। হাইকোর্টে এ মামলা সংক্রান্ত বিষযে আসামি পক্ষ ৫ বার গেছেন। ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় করেছেন। ন্যায়বিচারের জন্যই দীর্ঘসময় ধরে আদালত দুপক্ষের বক্তব্য শুনেছেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য নয়। এতদিন ট্রায়াল হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ দীর্ঘদিন যুক্তিতর্ক করেছে। আদালত শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছে। বর্তমান সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আাদলত উভয় পক্ষকে সমান সুযোগ দিয়েছে। আসামি পক্ষ সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। রাজনৈতি উদ্দেশেই বিএনপির নেতৃবৃন্দ এ সমস্ত কথা বলছেন। তাদের এ ধরনের বক্তব্য ঠিক নয়া।
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী মন্ত্রীদের বক্তব্য উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন , গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার আগেই অনেক মন্ত্রী আগাম সংবাদ দিয়ে দিয়েছেন। তার মানে এটি সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে একুশে আগস্টের রায় কি তা হবে তা সরকারের ডিকটেশনে (নির্দেশনায়) লেখা হচ্ছে?