ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ধারণার জাতীয় উন্নয়ন মেলা

কথার বিপরীতে কাজ অগ্রগতির বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৭ অক্টোবর ২০১৮

কথার বিপরীতে কাজ অগ্রগতির বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা

মোরসালিন মিজান ॥ নতুন কনসেপ্ট বটে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যে যাচ্ছে, তার চিত্রটা জনগণের সামনে তুলে ধরা। এগিয়ে যাওয়ার গতি, ধরন, ভবিষ্যত ইত্যাদি সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়ার সচেতন প্রয়াস। সে লক্ষ্যে বড় পরিসর আয়োজন। আয়োজনটির নাম জাতীয় উন্নয়নমেলা। গত বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগরে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। তিন দিনব্যাপী মেলা শনিবার শেষ হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয় দফতর অধিদফতর অংশগ্রহণ করে। স্টল ও প্যাভিলিয়ন থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসন আয়োজিত মেলার স্লোগান ছিলÑউন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ। শত বাধা। ষড়যন্ত্র। সব উপেক্ষা করে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এই বার্তাটি দেয়া হয়। প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা মেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন। জরুরী সেবা গ্রহণের সুযোগ ছিল। সুযোগ কাজে লাগিয়ে যারপরনাই খুশি তারা। উন্নয়নমেলা তাই উৎসবের রূপ নিয়েছিল। ভেন্যুটি রাজধানীবাসীর খুব পরিচিত। বাণিজ্যমেলার মাঠ। বিশাল খোলা মাঠে সরকারের ১০৮টি প্রতিষ্ঠান স্ব স্ব কর্মকা- তুলে ধরে। মোট স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল ৩৩০টি। ২০টি স্টলে নিজেদের পসরা সাজায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৯টি স্টলে কর্মকা- তুলে ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৬টি স্টল। কৃষি মন্ত্রণালয়েরও তা-ই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১০টি স্টল। ৯টি ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। সবকটি স্টলই ঘুরে দেখার মতো। একটু অনুসন্ধিৎসু যারা, খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করেছেন। এরপর চমকিত হয়েছেন শুধু। সঙ্গত কারণেই গুরুত্ব পায় পদ্মা সেতু। এই স্বপ্ন বাস্তায়ানে কত যে বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারকে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার পিছু হটেনি। বরং চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়ে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। ইতোমধ্যে খর¯্রােতা নদীর উপর দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে পদ্মা সেতু। উন্নয়নমেলায় সেতু সংক্রান্ত উপস্থাপনাগুলো ছিল চোখে পড়ার মতো। শহর ঢাকার যোগাযোগ সমস্যা দূর করতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। যানজটন নিরসনে যুগান্তকারী এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। এরই মাঝে পরিষ্কার হয়েছে মেট্রোরেলের পথ। পরিকাঠামো। মেলায় আরও খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়। বর্তমান সরকারের শ্রেষ্ঠ অবদান ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা কী করে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে, মেলার স্টল থেকে তা বর্ণনা করা হয়। সব দেখে গ্রামের বর্তমান নয় শুধু, ভবিষ্যতটাও যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অনুমান করা যায়Ñকেমন হবে আগামীর গ্রামবাংলা। মেলায় আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ছিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, নিজস্ব কৃত্তিম উপগ্রহ নিয়ে মহাকাশে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে উপগ্রহটি। কী কাজ করছে, কীভাবে কাজ করছে তার বিস্তারিত মেলায় তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, এর সাহায্যে দুর্গম পার্বত্য এলাকা ও হাওড় অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া যাবে। ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারেও কাজ করবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। এমন এগিয়ে যাওয়া, অগ্রগতি দেখে বাঙালী হিসেবে মন গর্বে ভরে ওঠে। এসবের পাশাপাশি মেলা থেকে দেয়া হয়েছে জরুরী সেবাও। সেবাগুলো মেলার প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। পাসপোর্ট সেবার কথাই যদি বলা হয়, অনেকে বিশ্বাসই করতে চাইবেন না, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের স্টল থেকে মাত্র ৬ ঘণ্টায় পাসপোর্ট নবায়ন করা গেছে। নতুন পাসপোর্ট চাই যাদের, তারা বিড়ম্বনায় ছাড়াই প্রয়োজনীয় সহায়তা পেয়েছেন। অধিদফতরের কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানান, এটি ছিল তাদের বিশেষ সেবা। বহু মানুষ সেবাটি গ্রহণ করেছেন। মেলাতেই ফরম পূরণ করে টাকা জমা দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। দুপুর ১২টার মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় পাসপোর্ট পেয়ে গেছেন তারা। যারা ১২টার পরে টাকা জমা দিয়েছেন পরদিন দুপুর ১২টার মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে গেছেন বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মেলায় প্রদান করেছে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে আর কোন দ্বিধা নেই, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চালকদের লাইসেন্স প্রদান করেছে বিআরটিএ। প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক সানাউল হক জানান, লাইসেন্স প্রাপ্তির পূর্বশর্তগুলো পূরণ হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে যেটুকু সময় লেগেছে, তার বেশি আমরা নেইনি। এর মধ্যেই আবেদনকারীরা লাইসেন্স পেয়ে গেছেন। বিদেশ গমনে ইচ্ছুকরা ভিড় করেছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের স্টলে। এখান থেকে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন সবাই। যার যেমন যোগ্যতা, সে অনুযায়ী কাজ খুঁজেছেন। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন। উন্নয়নমেলায় ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যাভিলিয়নও। প্যাভিলিয়ন থেকে দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদফতর রক্তদান কর্মসূচীসহ রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষাদি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে। ছিল নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীর প্রত্যাহিক কাজকর্ম ও সেবার তথ্য। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সহজভাবে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে বিএমডি ওয়েদার এ্যাপসের ভূমিকা দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়। স্পারসো স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি, বন, পানি সম্পদ, সবুজ উদ্যান ইত্যাদি সম্পর্কে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। সমুদ্র সম্পদ অন্বেষণের তথ্য দেয়া হয়। এছাড়া জরিপ অধিদফতর সারাদেশে ডিজিটাল ম্যাপিং কার্যক্রম সম্পর্কে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অবহিত করে। পর্যটন খাতটা অবহেলিত। পৃথিবীর অতি সাধারণ দেশগুলোও পর্যটনে এগিয়ে যাচ্ছে। কতভাবে যে আকর্ষণ করছে পর্যটকদের! সে তুলনায় মারাত্মক পিছিয়ে বাংলাদেশ। ফলে মেলার স্টলে এটা ওটা তুলে ধরা হলেও, দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ করতে পেরেছে বলে মনে হয়নি। সমাপনী দিন উন্নয়নমেলায় এসেছিলেন কামাল উদ্দিন আহমেদ। ঢাকার বাইরে একটি কলেজে পড়ান। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, অন্য কাজে ঢাকায় এসেছি। হঠাৎ সুযোগ হয়ে গেল তাই মেলায় আসা। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের ছবি তুলে ধরা হয়েছে এখানে। কিন্তু আমি দেখেছি বাংলাদেশের অগ্রগতি। উপস্থাপনাগুলো সুন্দর ও সহজ হওয়ায় বিশেষ ভাল লেগেছে বলে জানান তিনি। শাহাদাত হোসেন নামের আরেক দর্শনার্থী বয়সে তরুণ। বললেন, বাইরে থেকে শুনে এসেছিলাম মেলায় ঘোষ টোস না দিয়েও খুব দ্রুত পাসপোর্ট নবায়ন করা যাচ্ছে। তবে আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। এর পরও আসা। এসে তো দারুণ লাভ হয়ে গেছে! কথা বলতে বলতে সদ্য হাতে পাওয়া সবুজ পাসপোর্টটটি দেখাতে ভুল করেন না তিনি। সবমিলিয়ে চমৎকার আয়োজন। কথার বিপরীতে কাজ। অগ্রগতির বাংলাদেশ। কার না ভাল লাগে? এই ভাললাগা স্থায়ী হোক। ছড়িয়ে যাক।
×