ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি করা হলো

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৭ অক্টোবর ২০১৮

খালেদাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি করা হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নত চিকিৎসার জন্য কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের বিশেষ কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাদা রঙের একটি গাড়িতে করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে পাঠানো হয়। এ সময় তার সঙ্গে তার গৃহকর্মী ফাতেমাও ছিলেন। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা ও নিরাপত্তার স্বার্থে বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ভিআইপি (ডিলাক্স) ৬১১ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আদালতের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা হচ্ছেন কার্ডিওলজির অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত, ফিজিক্যাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ। সূত্র জানায়, ৫ চিকিৎসকের মধ্যে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী তিনজন ও বাকি দুজন বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত নিরপেক্ষ চিকিৎসক বলে জানা গেছে। এই চিকিৎসকরাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রদান করবেন। সূত্র জানায়, কারাবিধি অনুসারে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে, খালেদা জিয়ার জন্য ‘ডিলাক্স কেবিন’ ইস্যু করা হয়েছে। খালেদা জিয়া ৬১১ নম্বর কেবিনে থাকলেও তার সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশের ৬১২ নম্বর কেবিনটিও বরাদ্দ করা হয়েছে। যাতে ওই কক্ষে তার সহকারী বা কারা নিরাপত্তারক্ষীরা থাকতে পারবেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সভা আহ্বান করেছে। বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হবে। এর আগে শনিবার খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার পর মেডিক্যাল বোর্ডের ২ জন ডাক্তার তার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন ও শারীরিক কোন বিশেষ সমস্যা হচ্ছে কি না তা জানতে কেবিনে যান। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের জানান যে, এই মুহূর্তে বড় কোন সমস্যা হচ্ছে না। পরে তারা ফিরে আসেন। এছাড়া বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে মেডিক্যাল বোর্ড সদস্যদের কাছ থেকে ও নিজেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে আনার পর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতি মামলায় দ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড রবিবার বৈঠকে বসবে। তিনি বলেন, বেগম জিয়া কারাগার থেকে এসে আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ষষ্ঠ তলায় উনি অবস্থান করছেন। ওনার বিষয়ে আদালত থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছিল। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছি। উনি আসার পর ওনার কেবিনে বোর্ডের সভাপতি, উনি যার আন্ডারে ভর্তি হয়েছেন, প্রফেসর ডাঃ এম এ জলিল চৌধুরী ওনাকে দেখেছেন। চিকিৎসা শুরুর আগে যা যা ফরমালেটিজ উনি কমপ্লিট করেছেন। তিনি বলেন, রবিবার মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা শুরু করতে পারব। সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ১টার দিকে খালেদা জিয়ার হাসপাতালে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে পাঠানো হয়। এদিকে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে যখন বিএসএমএমইউতে আনা হয় তখন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তবে এ সময় তাদের খালেদা জিয়ার সামনে যেতে দেয়া হয়নি। তারপরও কেউ কেউ এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা চেয়েছিল। আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। তারা আমাদের যেভাবে বলেছেন, আমরা সেভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ভেতরে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউলল্লাহ আমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, দলের নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, নাজিমউদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ। খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আনার আগেই দুপুর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে এসে জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীরা হাসপাতালের গেটসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করেন। উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে চিকিৎসা শেষে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। তার ছয় মাস পর শনিবার তাকে আবারও চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে নেয়া হলো। চলতি বছরের গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- প্রদান করে বিচারিক আদালত। এদিন থেকেই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা করে খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়।
×