ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সকালে ফি জমা দিয়ে বিকেলে পাসপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৭ অক্টোবর ২০১৮

সকালে ফি জমা দিয়ে বিকেলে পাসপোর্ট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাত আটটায় যখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যদিয়ে উন্নয়ন মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়-তখনও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লেগেছিল মেলা প্রাঙ্গণে। সবাই এসেছে সেবা পেতে। সকালে ফি জমা দিয়ে বিকেলে নবায়নকৃত পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন সেবা গ্রহীতারা। পাসপোর্টের মতো একটি জটিল বিষয়ের সমাধান হয়েছে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায়। শুধু পাসপোর্ট কেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সঞ্চয়পত্র কেনা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেতন বিবরণী, আয়কর বিবরণী এবং পেনশনের তথ্য অনলাইনে কিভাবে পাবেন সে বিষয়ে জানানো হয়েছে উন্নয়ন মেলায়। কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক সেবা দিয়ে নতুন নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা দাবি করেছেন-উন্নয়ন মেলায় যেভাবে সেবা পাওয়া গেছে-এটা যেন সারাবছর বহাল রাখে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সেবা প্রদানে উৎসাহিত হচ্ছে এবং সেবাদানে প্রস্তুত থাকায় এ ধরনের মেলা আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকাবাসী। রাজধানীর বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের উন্নয়ন মেলা থেকে সেবা পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে গত দশ বছরে কি কি উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে সবকিছু এ মেলার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন নাগরিক সমাজ। অনেক দর্শনার্থী উন্নয়ন মেলার সময় বাড়ানোর কথা বলেছেন। এদিকে, মেলায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় দুটি স্টল নিয়ে আগ্রহীদের সেবা দিচ্ছেন। এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রুহুল আমিন বশির জানান, তারা বেশ কয়েকটি সেবা দিচ্ছে সেগুলো হচ্ছে-প্রতিবন্ধীকে পরিচয়পত্র করে দেয়া। এছাড়াও কারও ক্যান্সার, কিডনি নষ্ট, লিভার সিরোসিসের মতো রোগ হলে তাকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা চিকিৎসা তহবিল পেতে সহযোগিতা করছেন। শনিবার সরকারী ছুটি থাকায় শেষ দিনে সকাল থেকে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত উন্নয়ন মেলা প্রাঙ্গণ। সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন দেখছে জনসাধারণ। সরকারের সব উন্নয়ন জানানো হচ্ছে মেলায়। অংশগ্রহণকারী স্টলের সবাই জানাচ্ছে নিজ নিজ অর্জনের কথা। দিচ্ছে বিভিন্ন সেবা। ঢাকার ওয়ারী থেকে মেলায় এসেছেন কামরুল হাসান। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা শুনেছি, এখন দেখে গেলাম। মেলায় না আসলে জানা যেত না দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারী চাকরিজীবী শায়লা বেগম জানান, ছেলে-মেয়েকে মেলায় নিয়ে এসেছি। স্কুল থেকে আসতে বলা হয়েছিল। তারা এখানে এসে খুব খুশি। আমিও বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য নিয়ে গেলাম। মেলায় স্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর স্টল। ওই স্টলের এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় দেড় হাজার লোককে সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫০০ মতো ফরম বিতরণ করা হয়েছে। এবারের উন্নয়ন মেলায় সবচেয়ে বেশি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাসপোর্ট অফিস সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ বেশ সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদফতরের এ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর অরুপ রতন চাকী জনকণ্ঠকে বলেন, গত দু’দিনে পাসপোর্ট পেয়েছেন ৯৭৩ জন। শনিবার শেষে জানা যাবে সব মিলিয়ে কতজন পেলেন। এর বাইরে দুপুর পর্যন্ত সেবা গ্রহণ করেছেন প্রায় ২৫ হাজার জন। এছাড়া অনলাইনে আবেদন করেছে প্রায় ২ হাজার মানুষ। শুধু তাই নয়, পাসপোর্ট নবায়ন ফি বাবদ মেলার শেষদিন পর্যন্ত প্রায় অর্ধকোটি টাকা জমা হয়েছে। দিন শেষে সেটা আরও বাড়বে। অন্যদিকে ভিড় দেখা যায়, বিআরটিএ স্টলে। মেলার শেষ দিনেও লম্বা লাইন পড়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে। দুপুর পর্যন্ত ৩ শতাধিক মানুষ শিক্ষানবিস লাইসেন্স নিয়েছেন। এছাড়া প্রায় ৩০টি গাড়ি পেয়েছে রেজিস্ট্রেশন। আর সেবা নিয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী। জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট চালু হলে অতি জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্ট দেয়া হবে একদিনের মধ্যেই। সেই সেবার পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে উন্নয়ন মেলায় পাসপোর্ট ও জনশক্তি রফতানির প্যাভিলিয়নে। আর সে কারণেই মেলায় ওই প্যাভিলিয়নে উপচে পড়া ভিড় লেগেছিল। একদিনেই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে-এমন আশায় যারা এসেছিলেন, তারা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে হাসি মুখে ছেড়েছেন মেলা চত্বর। তারা বলছেন, কেবল মেলা নয়, স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসগুলোতেও যেন অন্যান্য দিনে এমন সুপার এক্সপ্রেস সেবা মেলে। এবারের উন্নয়ন মেলায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সংস্থার ৩৩০টি স্টল সাজিয়ে নাগরিকদের নানারকম সেবা দিয়েছে। মেলায় সেবা নিতে আগ্রহী দর্শনার্থীরাও সরকারের পক্ষ থেকে কম সময়ে এসব সেবা পেয়ে খুশির কথা জানিয়েছে। এবারের মেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯টি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৬টি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৪টি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০টি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৯টি, বিআরটিএ ৪টি স্টল সাজিয়ে তাদের কর্মকা- প্রদর্শন এবং দর্শনার্থীদের সেবা দিয়েছে। এছাড়াও সমাজ সেবা অধিদফতর, বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশন, বিনিয়োগ বোর্ড, ঢাকা ওয়াসা এবং নির্বাচন কমিশনসহ আরও অনেক মন্ত্রণালয় বিভাগ মেলায় অংশ নিয়ে তাদের সেবা ও সরকারের নানা উন্নয়ন দর্শনার্থীদের প্রদর্শন করছেন। তিন দিনের মেলায় বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার নিকট থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন দর্শনার্থীরা। মেলায় ঢাকা ওয়াসা অংশ নিয়ে ওয়াটার এটিএম এবং ‘ওয়াটার স্মার্ট মিটার’ দর্শনার্থীদের প্রদর্শন করেছে। ওয়াসার মেলা প্রতিনিধিরা জানান, বর্তমানে ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় ওয়াটার স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে রাজধানীর সব জায়গায় এ মিটার স্থাপন করা হবে। আবার ওয়াটার এটিএম চলবে একটি প্রি-পেইড কার্ডের মাধ্যমে। এসব মিটার কীভাবে পরিচালনা করতে হবে তা দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রদর্শন করা হয়েছে। জুট ডাইভার্সিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) পাটের তৈরি ২৫০ ধরনের বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়েছে তাদের স্টলে। এর মধ্যে রয়েছে বিজনেস কার্ড, ফাইল কাভার, ম্যাগাজিন হোল্ডার, পেপার হোল্ডার, টিস্যু কাভার ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে পাটের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, গৃহসজ্জার উপকরণ, নার্সারি আইটেম, ফ্যাশন সামগ্রী এবং নারী ও পুরুষের পরিধেয় শৌখিন বস্ত্র উন্নয়ন মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে।
×