ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা;###;পলাতক দশ জনের অবস্থান জেনেছে পুলিশ ;###;ফেরত আনতে তৎপরতা চলছে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রধান চক্রান্তকারী তারেক রহমানসহ পলাতক ১৮ জনই বিদেশে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ অক্টোবর ২০১৮

প্রধান চক্রান্তকারী তারেক রহমানসহ পলাতক ১৮ জনই বিদেশে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ভয়াল একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। মামলার রায়ের ওপর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও দেশের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতিসহ অনেক কিছুই নির্ভর করছে। আগামী ১০ অক্টোবর মামলাটির রায় হওয়ার কথা। তারেক রহমানসহ এ মামলার পলাতক ১৮ আসামিকে দেশে ফেরত আনতে রীতিমতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের জারি করা রেড নোটিস প্রত্যাহার হওয়ায় তাকে দেশে ফরত আনতে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে ব্যক্তিগত রোজগার না থাকার পরেও লন্ডনে তারেক রহমানের আয়েশী বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে দেশ- বিদেশ ও দলের ভেতরে বাইরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ ও পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হন। ২০০৮ সালের ১১ জুন বিশেষ কারাগার থেকে শেখ হাসিনার মুক্তির দিন সিআইডি গ্রেনেড হামলা মামলায় ২২ জনকে আসামি করে প্রথম অভিযোগপত্রদয় ঢাকার সিএমএম আদালতে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা লাভের পর অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্রদয় সিআইডি। মাট ৫২ আসামির মধ্যে ২৪ জনের ২২ জন বর্তমানে কারাগারে। হুজি প্রধান মুফতি হান্নান ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের অন্য মামলায় ফাঁসি হয়েছে। আর তারেক রহমানসহ পলাতক ১৮। পলাতক আসামিদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আইনমন্ত্রী বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এ্যাডভোকেট আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, যেসব আসামির বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিস জারি রয়েছে, স্বাভাবিক আইনী কাঠামোর মধ্যেই তাদের ফেরত আনা সম্ভব। আর যাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে নোটিস জারি করা নেই, তাদের ফেরত আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে কি প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত আনা হবে, তা তিনি কৌশলগত কারণে এখনই প্রকাশ করতে রাজি হননি। পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, পলাতক আসামিদের মধ্যে মূল ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এটিএম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ওরফে সুজয় এবং তার ভাই মুহিবুল মুত্তাকীন ভারতের তিহার জেলে বন্দী, মাওলানা তইজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, জঙ্গী নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবুবকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের পূর্ব বিভাগের সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান ও দক্ষিণ বিভাগের সাবেক উপকমিশনার খান সাঈদ হাসান বিদেশে পলাতক রয়েছে। এদের অধিকাংশই পাকিস্তানে। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখা সূত্র জানায়, পলাতকদের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে দশ জনের অবস্থান জানা গেছে। পলাতকদের গ্রেফতার করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। একমাত্র তারেক রহমান ছাড়া অন্যদের গ্রেফতার করতে জারি করা রেড নোটিস কার্যকর আছে। তারেক রহমান একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ মোট তেরোটি মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামি। বাংলাদেশ পুলিশ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নোটিস জারির জন্য ২০১৫ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি ইন্টারপোলে বার্তা পাঠায়। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করে ইন্টারপোল। নোটিসে বলা হয়, তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ নবেম্বর। তিনি বাংলা, ইংরেজী ও উর্দু ভাষা জানেন। তার উচ্চতা ১ দশমিক ৬৮ মিটার। চুলের রংসহ তারেক রহমানের অন্যান্য শারীরিক বিবরণ উল্লেখ করা হয় নোটিসে। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ নোটিসের তালিকা থেকে তারেক রহমানের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এমন প্রক্রিয়ার মধ্যেই ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদ- ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে। পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি বিভাগ বলছে, বাংলাদেশসহ ১৯২ দেশ ইন্টারপোলের সদস্য। ১৯৭৬ সালে ইন্টারপোলের সদস্য হয় বাংলাদেশ। ইন্টারপোলের নীতি অনুযায়ী রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগত ব্যক্তিত্ব এবং কোন দেশের সেনাবাহিনীর কোন সদস্যের নামের নোটিস জারির বিধান নেই। ইন্টারপোলের বক্তব্য মোতাবেক, তারেক রহমান প্রটেকটিভ স্ট্যাটাসে আছেন বিধায়, তার রেড নোটিস বাতিলের সুযোগ রয়েছে। যদিও কে বা কোন দেশ তারেক রহমানকে প্রটেকটিভ স্ট্যাটাস দিয়েছেÑ সম্পর্কে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পুলিশকে কোন সন্তোষজনক জবাব দেয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেনেড হামলা হামলার পলাতক আসামিদের দেশে ফেরত আনতে তৎপরতা অব্যাহত আছে। যাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা নেই, তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। রায়ে যাই হোক না কেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন প্রকার অরাজকতা সহ্য করা হবে না। কঠোর হাতে তা দমন করা হবে। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা কোন দল দেশে রায় ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। এ ব্যাপারে তারা সজাগ রয়েছেন। সারাদেশে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই। এ জন্য তারেক রহমানকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তারেক রহমানকে ফেরত আনতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দেশের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্রসহ গোয়েন্দা সংস্থা ও ইন্টারপোলের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তিনি বলছেন, ইন্টারপোল রেড, ব্লু, গ্রীন, ইয়েলো, ব্ল্যাক, অরেঞ্জ ও পার্পল এ্যালার্টÑ এই সাত ধাপে নোটিস প্রকাশ করতে পারে। তারেক রহমানকে কোন একটি ধাপে অন্তর্ভুক্ত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিস প্রকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ফেরতে আনতে শনিবার থেকে আমেরিকার ফ্লোরিডায় ৩ দিনব্যাপী শুরু হওয়া পুলিশ প্রধানদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাজ্যসহ যেসব দেশে পলাতক আসামিরা রয়েছে, সেসব দেশের পুলিশ প্রধানদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এসব আসামিদের ফেরতে পেতে ওসব দেশের সহায়তা চাওয়া হবে। ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি পুলিশ দল।
×