ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের সেবাই ব্রত ॥ ‘জীবন উৎসর্গ করেছি বাংলার জনগণের জন্য’

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৭ অক্টোবর ২০১৮

মানুষের সেবাই ব্রত ॥ ‘জীবন উৎসর্গ করেছি বাংলার জনগণের জন্য’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজের জীবনটাকে বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন জানিয়ে বলেছেন, মানুষের সেবা করার চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে? মানুষের সেবা করাটা এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। মানুষের সেবা করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে। তাই আমি আমার জীবনটাকে উৎসর্গ করেছি বাংলার জনগণের জন্য। এখানে আমার নিজের কোন চাওয়া পাওয়া কিছু নেই। আর বাবা-মা, ভাই সবই হারিয়েছি, তাই আমার হারাবারও কিছু নেই। শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের ‘লায়ন লিও’ মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের নবনির্বাচিত ‘আন্তর্জাতিক পরিচালক’ লায়ন কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ ছাড়াও অনুষ্ঠানে সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক শেখ কবির হোসেন, আঞ্চলিক নেতা স্বদেশ রঞ্জন সাহা এবং মাল্টিপল ডিস্ট্রিক-২১৫ এর বি-এর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম লিটন বক্তব্য রাখেন। শপথ পাঠ করান লায়ন এরশাদ হোসেন রানা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তবে শুধু একটা জিনিসই চাই, যে দেশকে আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, যে স্বপ্নটা তাঁর ছিল যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে সেভাবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে সকলের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই সকলে এক সঙ্গে কাজ করে এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পাচ্ছে, স্বীকৃতি পাচ্ছে। আগে আমরা বাঙালীরা বিদেশে গেলে সবাই বলত ও বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়, দুর্ভিক্ষ, ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আর সে কথা কেউ বলে না। বিদেশে গেলে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারেন। এখন বলে বাংলাদেশ তো উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, এই সম্মানটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আশা করি এই সম্মানটা আমরা যেন ধরে রাখতে পারি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাজেট সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজেট আগে করতে গেলে বিদেশীদের কাছে হাত পাততে হতো। আল্লার রহমতে এখন আর হাত পাততে হয় না। বাজেটের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা বাস্তবায়ন করে থাকি। আগে আমাদের উন্নয়ন বাজেট যা হয়ত ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা ছিলো। এখন ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি, এটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। দেশের অগ্রযাত্রা, এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের উন্নয়নে নেয়া পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশকে আমরা সর্বক্ষেত্রে উন্নত করতে চাই, স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। দেশের মানুষ যাতে আরও উন্নত জীবন পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের কথা উল্লেখ করে বলেন, আজকে আমাদের ওপর একটা বোঝা এসেছে, মিয়ানমারের শরণার্থী। প্রায় ১১ লাখ শরণার্থী আজকে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। একাত্তর সালে ভারতে আশ্রয় নেয়া আমাদের শরণার্থীদের কথা যখন স্মরণ করেছি তখন তাদের আশ্রয় না দিয়ে পারিনি। তিনি বলেন, আমার ছোটবোন শেখ রেহানা এখানে ছিল। সে আমাকে বলল ১৬ কোটি মানুষকে ভাত খাওয়াও তুমি। আর এই যে নির্যাতিত মানুষগুলো, একাত্তরে আমাদের বাঙালীরা যেভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলাম, এরাও ঠিক একই রকম নির্যাতনের শিকার। আজকে তাদের তুমি খাওয়াতে পারবে না? আমি বললাম নিশ্চয়ই পারব, প্রয়োজনে নিজেদের খাবার ভাগ করে খাব। রোহিঙ্গা সঙ্কটে কূটনৈতিক সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য এটুকুই আমরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঝগড়া করিনি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সই করেছি। তারা রাজি হয়েছে নিয়ে যাবে, যদিও এখনও নিয়ে যাওয়া শুরু করেনি। তার পরও আমরা আলোচনা করে চাচ্ছি এদের ফিরিয়ে দিতে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আজকে যে সমর্থন বাংলাদেশ পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে (মিয়ানমারকে) চাপ প্রয়োগ করছেন। আমরা আশা করি তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু করতে পারব। বাংলাদেশের অগ্রগতি ধরে রাখতে লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনালের সদস্যদের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের লায়ন ও লিও সকলের একটা দায়িত্ব রয়েছে। আপনারা যেমন সমাজসেবামূলক কাজ করেন, এই কাজের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারি। আমরা এক সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব সেটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশকে আমাদের উন্নত করতেই হবে। লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘের কনসালটেটিভ স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবসেবামূলক সংগঠন। সমাজের দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিবেদিত এই সংগঠন বিগত এক শ’ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের ২০০টিরও অধিক দেশে মানব সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি মাল্টিপল জেলার আওতায় ছয়টি জেলার মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার লায়ন এবং ৫ হাজার লিও সদস্য দুস্থ মানবতার কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশেষ করে অন্ধত্ব দূরীকরণ, ডায়াবেটিস ও শিশু ক্যান্সার প্রতিরোধ কর্মসূচীর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং বিভিন্ন জনকল্যাণে লায়ন ও লিও সদস্যগণ দেশের দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাই একটি আধুনিক সমাজ বির্নিমাণে লায়নদের কার্যক্রম প্রশংসার দাবিদার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালন করব ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে সাউথ এশিয়ার মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে। বর্তমান সরকার আগামী এক শ’ বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। আশি করি, দেশের পরবর্তী প্রজন্ম এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
×