ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল খেলেও দুর্ভাগ্যের হার স্বাগতিক বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ অক্টোবর ২০১৮

  ভাল খেলেও দুর্ভাগ্যের হার স্বাগতিক বাংলাদেশের

রুমেল খান, সিলেট থেকে ॥ দু’দলের সেমিফাইনালে নাম লেখানোটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। ফলে শুক্রবার ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচটি ছিল একদিকে আনুষ্ঠানিকতার, অন্যদিকে ছিল গ্রুপসেরা নির্ধারণের। যাতে ভাল খেলেও ভাগ্যবঞ্চিত হয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সিলেট জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় তারা ০-১ গোলে হেরে যায় ফিলিপিন্সের কাছে। এই জয়ে চলমান বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো ১১৪ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ফিলিপিন্স। আর গ্রুপ রানার্সআপ হলো ১৯৩ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ। হেড টু হেড লড়াইয়ে এ পর্যন্ত দু’দল মুখোমুখি হয়েছে তিনবার। ফিলিপিন্স জেতে ২ ম্যাচে। ১ ম্যাচে জেতে বাংলাদেশ। আগামী ১০ অক্টোবর বিকেল আড়াইটায় কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ কে তা জানা যাবে আজ ফিলিস্তিন-নেপাল ম্যাচটি শেষ হওয়ার পর। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে স্টেডিয়ামের গ্যালারির ২৫ হাজার আসন ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। স্টেডিয়ামের বাইরে অপেক্ষমাণ ছিল আরও কমপক্ষে ১৫ হাজার দর্শক। অভিযোগ উঠেছেÑ এদের অনেকেই ৫০ টাকার টিকেট কিনেও স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেনি। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষের সঞ্চার হয় দর্শকদের মাঝে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে ঢুকে খেলা শুরুর আগে মাইক্রোফোন নিয়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করেন সিলেট জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং বাফুফের সদস্য মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘যেসব দর্শক ৫০ টাকার টিকেট কিনেও গ্যালারিতে ঢুকতে পারেননি তাদের টিকেট প্রদর্শন সাপেক্ষে ১০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর ঘটবে না।’ বৃহস্পতিবারের ম্যাচে একাদশে চারটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে লাল-সবুজরা। গত ম্যাচে খেলা লেফটব্যাক ওয়ালী ফয়সাল, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার-অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া, রাইটব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষ এবং ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল। তাদের পরিবর্তে মাঠে নামেন লেফটব্যাক সুশান্ত ত্রিপুরা, মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদ, রাইটব্যাক রহমত মিয়া এবং ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম সবুজ। তবে খেলা শুরুর আগে প্রেসবক্সে কর্মরত ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে বাফুফে যে খেলোয়াড়-তালিকা সরববরাহ করে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন তারা। কারণ তালিকায় মামুনুল ইসলামকে অধিনায়ক হিসেবে দেখানো হয়। অথচ মাঠে তাকে দেখাই যায়নি। বরং অধিনায়কের বাহুবন্ধনী পড়তে দেখা যায় ডিফেন্ডার তপু বর্মণকে! খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য নতুন সংশোধিত খেলোয়াড় তালিকা সরবরাহ করে ‘পাপমোচন’ করে বাফুফে। পুরো ম্যাচে একমাত্র গোল হজমের বিষয়টি বাদ দিলে বাকি ৭৬ মিনিটই রাজত্ব-আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে বাংলাদেশ। প্রচুর আক্রমণ শাণিয়েছে। গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শুধু গোলটিই করতে পারেনি। কখনও ছোট পাস, কখনও লম্বা পাস, কখনও চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং... দর্শকরা হয়েছেন মুগ্ধ। কিন্তু জয় দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। ভাল খেললেই যে জেতা যায় না সেটা যেন আরেকবার প্রমাণ করলো জেমি ডে’র শিষ্যরা। ম্যাচের ৪ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশই। রহমত মিয়ার থ্রো থেকে তপু বর্মণ হেড করেন। ফিলিপিন্স গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন। এরপর এ্যাগুয়েনালদোর হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তিন মিনিট পর গোলরক্ষকের বরাবর বল মেরে সুযোগ নষ্ট করেন ফরোয়ার্ড রবিউল। খেলার ধারার বিপরীতে ২৪ মিনিটে এগিয়ে যায় ফিলিপিন্স। বক্সের বাইরে থেকে অধিনায়ক বাহাদোরান মিসাগের বাড়িয়ে দেয়া বল ঠান্ডা মাথায় ডান পায়ের প্লেসিং শটে গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে পরাস্ত করেন ড্যানিয়েল কেনশিরো মাইকেল। এই গোলের জন্য বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের দায়ী করা যেতেই পারে। কারণ তারা প্রচুর জায়গা দিয়ে ফেলেছিলেন ওই মিসাগকে! এরপর শুধু বাংলাদেশের গোল মিসের মহড়া। জীবন, সবুজ, রবিউলরা সহজ সুযোগ হেলায় নষ্ট করেছেন। গোলরক্ষককে সামনে পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি তারা। ৭০ মিনিটে জীবন সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। ডানপ্রান্ত দিয়ে তৌহিদুল আলম সবুজের ক্রস ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন যে হেড নেন তা পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে গেলে হতাশা নেমে আসে বাংলাদেশ শিবিরে। ৮০ মিনিটে সবুজকে উঠিয়ে ফরোয়ার্ড মতিন মিয়াকে নামান কোচ। প্রথম ম্যাচে তাকে খেলাননি কোচ। ঘরের মাঠে নিজের দর্শকদের সামনে না খেলার আক্ষেপ কুঁরে কুঁরে খাচ্ছিল তাকে। গুঞ্জন ওঠেÑ ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধেও তাকে খেলানো হবে না। এ জন্য আগেরদিন অন্তত এক মিনিটের জন্য হলেও মাঠে নামার আকুতি প্রকাশ করেছিলেন তিনি জনকণ্ঠের কাছে। বৃহস্পতিবার মাঠে নামার মিনিট খানেকের মধ্যেই ড্রিবলিং-ঝলক দেখান এই ‘সিলেটী পুয়া’ মতিন। ডানপ্রান্ত দিয়ে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে চমৎকার একটি উড়ন্ত ক্রস ফেলেন বক্সে। কিন্তু সতীর্থরা পৌঁছুতে দেরি করায় নষ্ট হয় সেই আক্রমণটি। শেষ পর্যন্ত ওই এক গোল আর শোধ করতে না পারায় আক্ষেপ আর হারের বেদনা নিয়েই মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজবাহিনী।
×