ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্ণাঢ্য আয়োজন

আজ ঢাবির ৫১তম সমাবর্তন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 আজ ঢাবির ৫১তম সমাবর্তন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্র্যাজুয়েটদের গাউনসহ সমাবর্তন টুপি হস্তান্তর করা হয়েছে। ৫১ সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় শুরু হবে। কার্জন হল থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সমাবর্তন উদ্বোধন করবেন। তার সভাপতিত্বে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে অংশ নেয়ার জন্য অধিভুক্ত সাত কলেজের চার হাজার গ্র্যাজুয়েটসহ মোট ২১ হাজার ১১১ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এ সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের ইতিহাসে সর্বাধিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৬ জনকে স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি ও ২৭ জনকে এম ফিল ডিগ্রীও প্রদান করা হবে। এবারের সমাবর্তন মোট তিনটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনের মূল ভেন্যু হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। এছাড়া অধিভুক্ত সাত কলেজের রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজে দুটি ভেন্যু তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা কলেজে সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারী কলেজ, মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজ, ঢাকা কলেজ ও সরকারী তিতুমীর কলেজের গ্র্যাজুয়েটগণ এবং ইডেন মহিলা কলেজে উক্ত কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজের রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্র্যাজুয়েটগণ সমাবর্তনে অংশ নিবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে এই দুটি কেন্দ্রকে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মূল কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। সমাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের ভেতরে রয়েছে ২২ হাজারের অধিক চেয়ার। এছাড়া মাঠের গ্যালারিতেও ১ হাজারের অধিক সিট রয়েছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে রোভার স্কাউট গ্রুপ, রেঞ্জার গ্রুপ এবং বিএনসিসি। সমাবর্তন উপলক্ষে উচ্ছ্বাসে আনন্দে মেতে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ক্যাম্পাস মনোরম সাজে সাজানো হয়েছে। রং-বেরং এর নানা বকমের বেলুনে সাজা হয়েছে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে টিএসসি, কার্জন হল, অপরাজেয় বাংলা কলা ভবন, এফবিএসসহ পুরো ক্যাম্পাসে। দীর্ঘদিনের নিয়মতান্ত্রিক পড়ালেখার পর বহু প্রত্যাশার এই সমাবর্তন উপলক্ষে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে আসার পর হরেক রকমের বৈচিত্র্য অভিজ্ঞতা শেষে এ যেন আরেক রকমের অভিজ্ঞতা। প্রথম বর্ষে হলে উঠেই গণরুমের সঙ্গে পরিচয় হওয়া। এর পরে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে স্লোগান, পলাশীর মোড়ে রাতের আড্ডা সবকিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন শেষে এবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায়ের পালা। তবে বিদায়টা কান্না দিয়ে নয় বরং কালো গাউন পড়ে মাথায় সমাবর্তন টুপি পড়ে প্রাণের ক্যাম্পাসকে মাতিয়ে দিয়েই এই বিদায়। শুক্রবার বন্ধের দিন হলেও পুরো ক্যাম্পাস ছিল সমাবর্তনে অংশ নিতে যাওয়া কালো গাউনওয়ালাদের দখলে। রসায়ন বিভাগের পুরো ব্যাচ মিলে কার্জন হল থেকে এসেছেন অপরাজেয় বাংলায়। চারটি সারি করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছে। সবার হাতে সমাবর্তনের টুপি। ক্যামেরা রেডি বলতেই শূন্যে ছুড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের বাধ ভাঙ্গা জোয়ারে মেতে উঠে তারা। এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তুলছে তারা। কেউ মা-বাবাকে , কেউবা সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। গত মঙ্গল ও বুধবার সমাবর্তনের গাউন ও ব্যাগ বিতরণ করা হয়। এর পর থেকেই গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা, কার্জন হল, সিনেট ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, মল চত্বরসহ ক্যাম্পাসের উল্লেখযোগ্য স্থানে ছবি তোলা আর হৈ-হুল্লোড় করে বেড়িয়েছেন। সহপাঠী আর বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন সারা ক্যাম্পাস। শুক্রবার বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলতে থাকা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাজহারুল ইসলাম তুষার বলেন, স্নাতক শেষ হওয়ার পরপরেই সমাবর্তন পাওয়া অন্যরকম একটা আনন্দ। ভার্সিটি লাইফের এটা বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন। এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ফকরুল ইসলাম ফরহাদ বলেন, চার বছরের মধ্যে এটাই শ্রেষ্ঠ পাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে। ৫১তম সমাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। রাজু ভাস্কর্যে বিকেল ৩টা থেকে কনসার্ট শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, একজন গ্র্যাজুয়েটের জীবনে সবচেয়ে আনন্দের দিন হচ্ছে সমাবর্তনে অংশ নেয়া। তাদের এ আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কনসার্টের আয়োজন করছে।
×