ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ১৩ অক্টোবর পদ্মা সেতুর কাজের উদ্বোধন করবেন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 প্রধানমন্ত্রী ১৩ অক্টোবর পদ্মা সেতুর কাজের উদ্বোধন করবেন

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৩ অক্টোবর পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিদর্শনে আসছেন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কাজেরও উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাওয়া-কান্দিপাড়া মশালদিয়া এলাকায় স্থায়ী নদীর তীর রক্ষামূলক প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে, নদীশাসন কাজসংলগ্ন এলাকার স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ এবং পদ্মা সেতু রেললিংক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে এখানে এখন উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। শরতে এখানকার প্রকৃতিতেও বিশেষ ভাললাগা কাজ করছে আর প্রধানমন্ত্রীর আগমনেও প্রকৃতির রূপেও বিশেষ বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের একরকম সফলতা বিরাজ করছে সব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলার পর এখন আর নক্সার সমস্যা নেই। সমস্যার শতভাগ সমান হয়েছে। কাজের গতিও গেছে বেড়ে। অবিরাম কাজ চলছে সব সেক্টরে। তাই পদ্মা সেতুর এখন পৌনে এক কিলোমিটার দৃশ্যমান হলেও আগামী বছরের শুরুতেই এই ক্ষেত্রে বিস্ময় সৃষ্টি হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি স্প্যান বসবে। সেভাবেই চলছে প্রস্তুতি। সমস্যায় থাকা ১৪টি পিলারের মধ্যে ৭টি পিলারের নক্সা অনুমোদন হয়েছে। এবার চূড়ান্ত করা হয়েছে বাকি ৭টি পিলারের নক্সাও। নতুন নক্সা অনুযায়ী বিশ্বে প্রথমবারের মতো ১১টি খুঁটির ৭৭টি স্টিলের পাইলে ব্যবহার করা হচ্ছে খাঁজকাটা (ট্যাম) প্রযুক্তি। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আগামী ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর চলমান কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন এবং কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। এ প্রকল্পের আওতায় মূল সেতুর ৭০ শতাংশ ও সার্বিক অগ্রগতি বর্তমানে ৫৯ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে অগ্রগতি বেড়ে ৬০ শতাংশে দাঁড়াবে।’ মন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতুসংলগ্ন ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ের চলমান কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী, এ কাজেরও অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ‘এছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং মাওয়া প্রাঙ্গণে ১৩০০ মিটার নদী রক্ষা কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।’ মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফ্তা ইয়াসমিন এমিলি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩ অক্টোবর পদ্মা সেতু এলাকায় চারটি প্রকল্প উদ্বোধন শেষে দুই তীরে দুটি জনসভায় ভাষণ দেবেন। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ এবং জাজিরা প্রান্তে জনসভা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশ জনসভার রূপ নিতে পারে বলে তিনি মনে করেন।’ এই নিয়ে ৮ অক্টোবর পদ্মা সেতু এলাকায় একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২ অক্টোবর ঢাকার বনানীতে সেতু ভবনে সেতুমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এতে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য এবং প্রকল্পের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ৯ম সভা গত ২ অক্টোবর শেষ হয়েছে। এখন সেতুর কাজে বিশেষ গতি চলছে। খুঁটির নক্সার সমস্যা শতভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু মান ঠিক রেখে কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া। সেতুর নক্সা জটিলতা, নদী শাসন কাজের বিলম্বসহ নানা কারণে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না। তাই সেতুর কাজ প্রায় এক বছর বৃদ্ধি করা হতে পারে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ অবস্থায় ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ কোং আর নদী শাসন কাজের ঠিকাদার চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড সময় চেয়েছে আরও বেশি; ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে কতটুকু সময় বাড়ানো হবে, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সেতুর নক্সাসহ টেকনিক্যাল সকল সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির ‘মাইলস্টোন মিটিং’ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সার্বিকভাবে সেতুর কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞ প্যানেল কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে খাঁজকাটা পাইলের টিউব তৈরিসহ অন্যান্য কাজ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি প্রকল্পের প্যানেল অব এক্সপার্ট অন্তোষ প্রকাশ করেন। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এই নিয়ে আলোচনা করেন। রিভার ট্রেনিং গ্রুপের দলটি শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি থেকে কাওড়াকান্দি পর্যন্ত এবং আশপাশের পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই সভায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্যানেল অব এক্সপার্টদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয় নদী শাসনের ঠিকাদার চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লি.। সভায় অংশ নেয়া এক দায়িত্বশীল জানান, এ পর্যন্ত নদী শাসনের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। কিন্তু এই সময়ে নদী শাসন কাজ হওয়ার কথা ছিল ৯০ শতাংশ। টার্গেট থেকে বাস্তবায়ন অর্ধেক হয়েছে মাত্র। নদী শাসনের যন্ত্রপাতি বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় টেকনিশিয়ান এবং জনবল বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১০ নবেম্বর চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়। পরবর্তীতে মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকেই কাজ শুরু করে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে জাজিরা প্রান্তের নদী ভাঙনকবলিত এলাকায় চলতি মৌসুমে কাজ চলমান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আগামী বছরের এই সময়ে মাওয়া প্রান্তে একযোগে ৫টি ড্রেজার নিয়ে নদী শাসনের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। উচ্চ ক্ষমতার ৩টি ড্রেজার রয়েছে এখানে। তাই ঠিকাদারদের আরও দু’টি উচ্চ ক্ষমতার ড্রেজার আনার কথা রয়েছে। নদী শাসন কাজ পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ঠিকাদার সিনোহাইড্রোর অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা এবং জনবলের ঘাটতির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। ৯ম এই বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাটি হয় প্রায় ৫ মাস পর। এর আগে গত ৩, ৪ ও ৫ মে সরেজমিন এই সভাটি হয়েছিল আর আগামী সভা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৯ সালের মার্চে। প্যানেল অব এক্সপার্টের চেয়ারম্যান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির জরুরী অবজারবেশন জানিয়েছেন। এই প্যানেলে ১১ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এই বিশেষজ্ঞ প্যানেলে কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের একজন করে, জাপানের দু’জন এং ডেনমার্কের একজনসহ মোট পাঁচ বিদেশী বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল ব্যবহার প্রসঙ্গে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত যে টেস্ট করা হয়েছে তার সব আমরা সফলতা পেয়েছি। আমরা যা অনুমান করেছিলাম তার থেকেও ভাল ফল পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘স্টিল পাইলে গ্রাউন্ডিং বিশ্বে এই প্রথম। আগে কখনও হয়নি। এই ডিজাইনকে পৃথিবীর অনেক দেশ ফলো করবে।’
×