ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাবতলীতে নির্বাচনী গণসংযোগ

মনোনয়ন না পেয়ে কেউ বিদ্রোহ করলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 মনোনয়ন না পেয়ে কেউ বিদ্রোহ করলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময় দেশের ব্যাপক উন্নয়নে মানুষ সন্তুষ্ট। আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন করছে তা গত এক শ’ বছরেও কেউ দেখেনি। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে উন্নয়ন হবে না। এ কারণে দেশের মানুষ বিএনপিকে চায় না। ধানের শীষ এখন সাপের বিষ। এটা আমার কথা নয়। কালকেও (বৃহস্পতিবার) গাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলাম, একজন তো বলেই ফেলল পেটের বিষ নয়, ধানের শীষ সাপের বিষ। এই বিষ কী কেউ খাবে ? এই বিষ বাংলার মানুষ আর খাবে না। আওয়ামী লীগের সপ্তাহব্যাপী নির্বাচনী গণসংযোগের পঞ্চম দিন শুক্রবার সকালে রাজধানীর গাবতলীতে দলের প্রচারে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপিকে অন্ধকারের দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্ধকারের মধ্যে আলোর পথ খুঁজছে অন্ধকারের দল বিএনপি। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে ২০০১ সালের চেয়েও খারাপ অবস্থা হবে। ওরা রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে। লাশের পাহাড় বানিয়ে দেবে। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এবার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে খবর আছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, নালিশে কাজ হবে না। এটা ২০১৪ না, ২০১৮ সাল। বিএনপি নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে কোন নাশকতা করলে তার সমুচিত জবাব দেবে বাংলাদেশের জনগণ। বিএনপি সোজাপথ দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। বিএনপি বুঝে ফেলেছে সোজা পথে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। জনগণ তাদের চায় না। বিএনপি কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই রাজনীতি করেছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত জায়গা, আদালতও সেটি বলেছে। তাহলে সরকারের ভুল কোথায় ? খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকার রাজনীতি করেনি। বরং তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাজনীতি করছে বিএনপি। বাম দলের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোন জোটকে নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে ঐক্য করতে আমি বলিনি। আমি বলেছি, বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা করে। বামপন্থীদের ভেতরে কেন এত ভাঙ্গনের সুর ? আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। তবে তাদের আমাদের সঙ্গে ঐক্য করতে বলিনি। আমরা ঐক্য চেয়েছি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে, আমরা ঐক্য চেয়েছি নষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে, আমরা জাতীয় ঐক্য চেয়েছি স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিস্টেম (ইভিএম) ব্যবহার প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ইভিএম সীমিত পরিসরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার হোক এটা আওয়ামী লীগ চায়। নির্বাচন কমিশনের কাছে সে দাবি জানানও হয়েছে। নির্বাচনে যেন জালিয়াতি না হয়, কারচুপি না হয়, কেউ যেন বাক্স ভর্তি না করতে পারে, জাল ভোট কেউ যেন দিতে না পারে, সে জন্যই ইভিএম। আধুনিক বিশ্বের একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার অনুষঙ্গ ইভিএম। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন বিলটি দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাঠাতে পারে, তাহলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন বিলটি সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হবে। শেষ অধিবেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসবে। তবে অধিবেশন হবে খুবই সংক্ষিপ্ত। শেষ অধিবেশন এক সপ্তাহের মতো হতে পারে। এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকবে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন যদি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন প্রস্তুত করে সংসদে পাঠায়, তাহলে পাস হবে। শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনার রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র প্রধানরাও তাদের রোল মডেল হিসেবে দেখেন। কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ওপর ভর করে নিরাপদে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল বিএনপি। নিজেদের মধ্যে প্রতিপক্ষ না খুঁজতে দলীয় নেতা-কর্মীদের আহ্বানও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, জনগণের কাছে জনপ্রিয়তায় যারা এগিয়ে থাকবেন, মনোনয়ন তাদেরকেই দেয়া হবে। যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদেরও মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রার্থী হতে চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি লাগাবেন না। যাকে মনোয়ন দেয়া হয় তিনি বাকি প্রার্থীদের শত্রু ভাববেন না। যারা মনোনয়ন চাইবে তাদের মনোনয়নের মার্কা হবে নৌকা। তিনি বলেন, এবার বিদ্রোহ করলে খবর আছে। বিদ্রোহ করলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার। কাজেই অপর্কম করবেন না। কারও বিষয়ে গিবত গাইবেন না। আওয়ামী লীগ যদি আওয়ামী লীগের শত্রু হয়, বাইরের শত্রুর প্রয়োজন হবে না। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঞ্চালনায় গণসংযোগে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম প্রমুখ। এদিকে রাজধানীর খিলগাঁওতে দলের পক্ষে গণসংযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় স্থানীয় এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শুক্রবার সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে ‘অক্টোবর সেবা পক্ষ ২০১৮’ উপলক্ষে এক র‌্যালির উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ চালাতে বিএনপিকে নিষেধ করা হয়নি। তফসিল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ গণসংযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিএনপিকে নির্বাচন নিয়ে গণসংযোগ করতে আমরা মানা করিনি। এ বিষয়ে বাধাও নেই। আমরাও যেভাবে প্রচার চালাচ্ছি তারাও সেভাবে চালাবে। কিন্তু নিজেদের ঘরের ঝামেলা নিয়ে বিএনপি এত ব্যস্ত যে জনসংযোগ চালাতে পারছে না। এ সময় এ মাসের (অক্টোবর) শেষ দিকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর বাইরে কেউ থাকতে পারবে না। সংসদ সদস্যদের নিয়েই নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। নানান রঙের পোশাক, ঢাক-ঢোল-বাজনা, ঘোড়ার গাড়ি, ট্রাক, সিংহের প্রতিকৃতি, বাইসাইকেল নিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে আগারগাঁওয়ের লায়ন্স ভবন পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র‌্যালি করে লায়ন্স ক্লাবস্ইন্টারন্যাশনাল। বেলুন, পায়রা উড়িয়ে উৎসব করে সংগঠনটি। মানিক মিয়া এভিনিউ’র সামনের রাস্তায় ব্যাডমিন্টনও খেলেন তারা।
×