ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তবে গুমোট ভাব কাটলে বৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড়

মৌসুমি বায়ুর বিদায়, তাপমাত্রা কমে আসবে ধীরে ধীরে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 মৌসুমি বায়ুর বিদায়, তাপমাত্রা কমে আসবে ধীরে ধীরে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত জুনের এক তারিখেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করেছিল এবারের মৌসুমি বায়ু। ৪ মাস অবস্থান শেষে শুক্রবার দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। তবে মৌসুমি বায়ুর এই ৪ মাস অবস্থানকালে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চিহ্নও ছিল না। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই বায়ুই দেশে বৃষ্টিপাত বয়ে আনে। এর প্রভাবেই আসে বর্ষা। মৌসুমি বায়ু এই আচরণ অতীতে কমই লক্ষ্য করা গেছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু যে পরিবর্তন ঘটছে মৌসুমি বায়ুর আচরণই তার প্রমাণ। গত ৪ মাস ধরেই দেশে বৈরী আবহাওয়া লক্ষ্য করা গেছে। তবে আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়ার পর এখন তাপমাত্রাও আস্তে আস্তে কমে আসবে। ফলে আগের চেয়ে গরমের মাত্রা কমবে। তবে ১০ তারিখ পর্যন্ত আবহাওয়ায় গুমোট ভাব বিরাজ করতে পারে। এরপর থেকেই বৃষ্টিপাত বা ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। তারা বলেন, মৌসুমি বায়ু থাকলেও বাতাসে জলীয়কনার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে বেশি গরম অনুভুত হয়। মৌসুমি বায়ু চলে যাওয়ার পর বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে আসে। তখন তাপমাত্রা কমে আসতে শুরু করে। ১০ তারিখের পর থেকে দেশে আর কোন দাবদাহ থাকবে না। তারা জানায় ১১ অক্টোবর থেকে দেশে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। এই সময়ে সাগরে নিম্নচাপের ফলে ঝড়বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তার মোঃ ওমর ফাকরু বলেন, শুক্রবার থেকে দেশের ভেতরে বিরাজমান থাকা মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। এখন আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমে গরমে অনুভুতি কমে আসবে। তিনি জানান ১১ অক্টোবরের পর থেকে দেশে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। এই সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে সাগরে লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে। জুনে মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত গত শীত মৌসুম থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। যেই এই বায়ু আগমন ঘটল অমনি বৃষ্টিপাতের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ গত মার্চ থেকে জুনের আগ পর্যন্ত কোন মৌসুমি বায়ু দেশে ছিল না। ওই সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিকমাত্রায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করার হয়েছে। অধিক মাত্রায় বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ঝড় এবং বজ্রঝড়ের দেখা মিলেছে। ঝড়ে যেমন ঘরবাড়ি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তেমনি বজ্রপাতের কারণে এবারও কয়েকশ’ লোকের মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের বৃষ্টিপাতে রেকর্ড বলছে মৌসুমি বায়ু দেশে অবস্থানকালে গত চারমাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের দেখা মিলেছে কমই। আবহাওয়া ও ছিল চরমভাবাপন্ন। প্রকৃতিতে ছিল প্রচ- দাবদাহ। গেল সেপ্টেম্বরেরই দেশের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। শুক্রবার দেশের অভ্যন্তর থেকে মৌমুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। এবারে এর প্রভাবে এবারে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড কম ছিল। অধিকাংশ সময় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন যখন দেশের ভেতরে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে তখন থেকেই বঙ্গোপসাগরের কখনও লঘুচাপ আবার কখনও নিম্নচাপের মতো ঘটনা ঘটেছে। আর এর প্রভাবেই মৌসুমি বায়ু দুর্বল অবস্থায় থেকে গেছে। সক্রিয় হতে না পারার কারণে বৃষ্টিপাত যেমন ঘটেনি। তেমনি নিম্নচাপের প্রভাবেও বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ নিম্নচাপ ভারতের ওপর গিয়ে চলে গেছে। দেশের উপকূলে এর কোন প্রভাব পড়েনি। জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর সময়কে মূলত বৃষ্টিপাতের সময় বলা হয়ে থাকে। প্রতি বছর এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। অধিক বৃষ্টির কারণে কোন কোন এলাকায় বন্যা পর্যন্ত দেখা দেয়। এবার বৃষ্টিপাত না থাকায় আবহাওয়া ছিল ব্যতিক্রম। এই সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুনে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ধরা হয়েছে ৪৫৯.৪ মিলিমিটার। আবহওয়া অফিস বলছে এবার জুনে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিক। তবে জুলাইতে ৫২৩ মিলিমিটার স্বাভাবিক বৃষ্টির বিপরীতে ৩৩ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অপর দিকে আগস্ট সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রয়েছে ৪২০ মিলিমিটার। সেখানে অর্ধেকের কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। অপর সেপ্টেম্বরের ৩১৮ মিলিমিটার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের বিপরীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৮৪ মিলিমিটার। আবহাওয়া অফিস বলছে এই মাসে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। সেপ্টেম্বরে শুধু বৃষ্টি কমই নয়, এই মাসে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট এবং রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহও বয়ে গেছে। এই মাসে তাপমাত্রা উঠেছিল যশোরে ৩৭.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মৌসুমির উৎপত্তি বঙ্গোপসাগরে। এটা বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানে চলে যায়। বায়ুর বিস্তার পাকিস্তান ও এর আশপাশের অঞ্চলে। সেখান থেকে এটি আমাদের দেশে আসে। পরে আবার বঙ্গোপসাগরে গিয়েই শেষ হয়। শুক্রবার মৌসুমি বায়ু দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। তবে এই বিদায়ের ফলে এখন তাপমাত্রা কমে আসবে। তবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করবে। গরম আর বাড়বে না। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হবে। বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
×