ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৬ অক্টোবর ২০১৮

  এবার স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং পায়রায় স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় সরকার। এজন্য সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ভাসমান টার্মিনাল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সময় গ্যাস সরবরাহ করতে পারে না। এই সমস্যা মাথায় রেখে স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এক্সিলারেট এনার্জি মহেশখালীতে একটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহ শুরু করেছে। ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহে শুরুতেই জটিলতার সৃষ্টি হয়। এরপর স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এক্সিলারেটের পর সামিট গ্রুপ মহেশখালীতেই একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরপর আর কোন ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। এজন্য মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং পায়রায় সম্ভাব্যতা জরিপ চালানো হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগের প্রকল্প পর্যালোচনা বৈঠকে সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনা বিষয়ে জাননো হয় এই প্রকল্পটির কাজ ৬৮ ভাগ শেষ হয়েছে। কুতুবদিয়া এবং পায়রা এলাকায় বায়ু প্রবাহ, মাটির নমুনা সংগ্রহ, ভূউপরিভাগের পানির নমুনা, সাগরের পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ, আবহাওয়ার বাস্তব অবস্থার তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করা হয়েছে। কুতুবদিয়া এবং পায়রা এলাকাতে জিওটেকনিক্যাল, সেডিমেনসন স্টাডি রিপোর্ট, পায়রা এলাকার হাইড্রোলজি সার্ভে রিপোর্ট, প্রকল্পের ব্যয় সংক্রান্ত রিপোর্ট এরমধ্যেই জমা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মহেশখালী এবং কুতুবদিয়ায় সাগরের চার থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে এলএনজির জাহাজ আসতে পারে। অন্যদিকে পায়রায় অন্তত ৫০ কিলোমিটার দূরে এলএনজির জাহাজ রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে সাবসি পাইপ লাইন নির্মাণ বা সাগর ড্রেজিং (খনন) করে জাহাজ উপকূলের কাছাকাছি আনতে হবে। সরকার বলছে বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু এখনও এই তিন স্থান কতটা স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের উপযোগী তাই পর্যবেক্ষণ শেষ হয়নি। বলা হচ্ছে আগামী বছরের শুরুতে এই কাজ শেষ হলে স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। যদিও এরমধ্যে দুটি কোম্পানির সঙ্গে স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক এমওইউ সই করেছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলা বলছে ২০২২ সালের পর দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাবে। আর ২০৩০ থেকে ৩৫ এরমধ্যে নতুন করে গ্যাস আবিষ্কার না হলে এখনের মজুদ শেষ হয়ে যাবে। তবে দেশের স্থলভাগ এবং সাগরে নতুন করে গ্যাসের বড় মজুদ পেলে এই চিত্র বদলে যেতে পারে। তবে দেশে অর্ধেকের বেশি গ্রিডভুক্ত বিদ্যুত উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। আর শিল্পে আরও দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। উদ্যোক্তাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত না দিতে পেরে সরকার গ্যাসের সরবরাহ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন না রাখলে দেশের বিদ্যুত এবং শিল্প উৎপাদন কমে যাবে। অন্যদিকে সরকার বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনায়ও পরিবর্তন এনেছে। তারা বলছে বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে আগে ৫০ ভাগই কয়লার ব্যবহারের চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু কয়লা সংগ্রহ এবং ব্যবহার একটি জটিল প্রক্রিয়া। এছাড়াও ব্যাপকভবে দেশীয় কয়লা উত্তোলন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের কারণে ৩৫ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদন কয়লায় রেখে বাকিটা এলএনজি নির্ভরতার চিন্তা করা হচ্ছে। সেই বিচারেও এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করতে হবে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সারা বিশে^ জ্বালানির দাম তেলের দামের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে কয়লাতে বিদ্যুত উৎপাদন আর এলএনজিতে উৎপাদন খরচ কাছাকাছি। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লা এবং এলএনজির পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করলে এলএনজি কোন কোন ক্ষেত্রে লাভজনক। এখন সারাদেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন সরবরাহ করছে দুই হাজার ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সংকটের মধ্যে সরকার দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমাদনির উদ্যোগ নেয়। এরমধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ উপযোগী একটি টার্মিনাল কাজ শুরু করেছে। অন্যটি আগামী বছর মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু করবে। তবে প্রতি বছর গ্যসের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে একই ভাবে গ্যাসের উৎপাদনও কমতে থাকবে। এই সংকটের সমাধানেই নতুন টার্মিনাল নির্মাণ জরুরী।
×