ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নাশকতার ছক

মীরসরাই-সীতাকুন্ডে আরও জঙ্গী আস্তানা সন্ধানে র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 মীরসরাই-সীতাকুন্ডে  আরও জঙ্গী আস্তানা  সন্ধানে র‌্যাব

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের মীরসরাই-সীতাকুন্ড বেল্টে আরও জঙ্গী আস্তানা রয়েছে। এছাড়া জেলার অন্য কয়েকটি স্থানেও জেএমবির সশস্ত্র ক্যাডারদের আস্তানা থাকার খবর রয়েছে র‌্যাবের কাছে। গোপন সোর্স নিয়োগ করে র‌্যাব নিয়মিতভাবে সন্দেহজনক স্থানগুলোর অবস্থান এবং জঙ্গীদের আনাগোনার খবর নিয়ে আসছে। নিশ্চিত হলেই অভিযান। এভাবেই গত দেড় বছর সময়ে সীতাকুন্ড ও মীরসরাইতে তিনটি জঙ্গী আস্তানা খুঁজে বের করে তাতে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে এসেছে ব্যাপক সফলতা। শুক্রবার সীতাকুন্ডের জোরারগঞ্জে জেএমবির যে আস্তানাটির সন্ধান মিলেছে সেটি অতিসম্প্রতি গাঁড়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের এই বেল্টে যেসব জঙ্গী আস্তানা ও জঙ্গীদের আনাগোনা রয়েছে এরা মূলত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে গোপনে পালিয়ে আসা জেএমবির ক্যাডার বাহিনীর সদস্য। বর্তমানে জেএমবির সুনির্দিষ্টভাবে আমিরের দায়িত্ব কে পালন করছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে ঘন ঘন আমিরের পদে পরিবর্তন আসছে বলে র‌্যাবের কাছে তথ্য রয়েছে। এ কারণেই বৃহস্পতিবার জোরারগঞ্জে অভিযানের পর সংস্থার জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, অভিযান আরও চলবে। র‌্যাবের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার ছক কষেছে জেএমবি। দেশে যেসব জঙ্গী সন্ত্রাসীদের সংগঠন রয়েছে তন্মধ্যে জেএমবিকে এখনও পুরোপুরিভাবে উৎখাত করা যায়নি। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকায় অতীতে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের প্রশিক্ষণের আস্তানা ছিল। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে এসব আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ের জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি অন্যতম। র‌্যাবের পক্ষে সরকারী নির্দেশে দেশব্যাপী বর্তমানে মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি জঙ্গীবিরোধী তৎপরতা বরাবরই সর্বাগ্রে রয়েছে। জেএমবির ক্যাডাররা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালের বাইরে থাকতে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদের কাছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি। অস্ত্র এরা যোগাড় করে আর বিস্ফোরক ও বোমা নিজেরাই তৈরি করতে সক্ষম। এ কাজে তাদের রয়েছে প্রশিক্ষকও। এরা বিভিন্নভাবে পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া বা মেস ভাড়া নিয়ে থাকত অতীতে। কিন্তু বর্তমানে ধরণ পাল্টিয়ে তাদের আস্তানায় জঙ্গী আদর্শে উদ্বুদ্ধ নারীও রাখা হয়। কখনও আত্মীয়, কখনও ভাইবোন বা কখনও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে এরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ সহজে অনুমানও করতে পারে না যে এরা জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত। গত দেড় বছরে মীরসরাইয়ের পৌর এলাকায় একটি বাড়িতে বড় ধরনের জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছিল। এর পাশাপাশি সীতাকুন্ডের পৌর এলাকায় আরেকটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। যেগুলো র‌্যাব অভিযান চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়। সীতাকুন্ডের আস্তানাটি ছিল পৌর এলাকার প্রেমতলার চৌধুরীপাড়ার দ্বিতীয় ভবনে। র‌্যাবের অভিযানে এরা নিজেরাই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের প্রাণহরণ করে। অর্থাৎ ওরা ছিল আত্মঘাতী সুইসাইডাল স্কোয়ার্ডের সদস্য। এ ধরনের আরও সুইসাইডাল স্কোয়ার্ড সদস্যের গোপন তৎপরতা এখনও বিদ্যমান বলে র‌্যাবের সুনির্দিষ্ট ধারণা। ফলে চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুন্ড বেল্টে এ ধরনের আস্তানার খোঁজে র‌্যাবের গোপন সোর্স কাজ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। র‌্যাব সূত্রে আরও জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কটি সুদীর্ঘ। বর্তমানে এটি চার লেনে উন্নীত। এই মহাসড়কের উভয় পাশে অনতিদূরেই সাধারণত এরা আস্তানা গেড়ে থাকে। এর মূল কারণ আস্তানায় সহজেই আনাগোনা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান হতে পারে এমন বিষয় আঁচ করা গেলে সহজে পালিয়ে যাওয়া। এর আগে সীতাকুন্ড ও মীরসরাইয়ে যে দুটি আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হয় সেগুলো ছিল লোকালয়ে। ওই দুটি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানের পর এখন তারা ধরণ পাল্টিয়েছে। মহাসড়কের মাত্র ১০ গজ দূরে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে শুক্রবার জঙ্গী আস্তানাটির অবস্থান ছিল। এই আস্তানায় ২ জনের ছিন্নভিন্ন মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেলেও নারীসহ আরও ২ জন গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে র‌্যাব নিশ্চিত। কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, এ বেল্টে তাদের নজরদারি এখন আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম আদালত ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা চালানোর যে ছক কষা হয়েছে তা র‌্যাব সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে। এ ধরনের নাশকতার ছক দেশের বিভিন্ন স্থানেও কষা হয়েছে বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে। কিন্তু এরা এতই দুরন্তর যে, খুব বেশি দিন সুনির্দিষ্ট স্থানে থাকে না। অর্থাৎ অবস্থান পাল্টে ফেলে। শুধু অবস্থান নয়, এরা তাদের যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইল ফোনের সীমও ঘন ঘন পরিবর্তন করে থাকে। ফলে মোবাইল ট্র্যাকিংয়েও অবস্থান নিশ্চিত করা বেশ কঠিন। র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এরা যতই নাশকতার ছক তৈরি করুক না কেন তাদের কঠোর হস্তে দমনে তৎপরতাও বাড়ছে।
×