ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উপচেপড়া ভিড়ের এ মেলা শেষ হচ্ছে আজ

ভিড়ে ঠাসা উন্নয়ন মেলা- বিআরটিএ পাসপোর্ট স্টল দর্শকে পরিপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 ভিড়ে ঠাসা উন্নয়ন মেলা- বিআরটিএ পাসপোর্ট স্টল দর্শকে পরিপূর্ণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দ্বিতীয় দিনে সেবা পেতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল উন্নয়ন মেলা প্রাঙ্গণে। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও পাসপোর্ট অফিসের স্টলে। সহজে ও স্বল্প সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য মানুষ ভিড় করছেন স্টল দু’টিতে। এছাড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের স্টলেও। এখানে বৈধ ও সঠিক পদ্ধতিতে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকিং সুবিধাসহ একই ছাতার নিচে বিদেশ যাওয়ার বিভিন্ন সেবাও দেয়া হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা এসব স্টলগুলেই সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন। এদিকে, মুহূর্তে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ করে দেয়ায় ‘চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলায় ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। পাসপোর্ট নবায়নের প্রয়োজনীয় সবকিছু উপস্থাপন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা নবায়ন করতে পারছেন আগ্রহীরা। আগ্রহীরা লাইনে দাঁড়িয়ে নগদ ৬ হাজার ৯শ’ টাকা জমার মাধ্যমে এ সুযোগ নিতে পারছেন। বৃহস্পতিবার ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ স্লোগানে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলার মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে মেলায় ভিড় বাড়তে থাকে। আজ শনিবার বিকেলে তিনদিনের এ মেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। শুক্রবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলার মধ্যে সবচেয়ে ভিড় জমেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্যাভিলিয়নে। যেখানে পাসপোর্ট নবায়ন বা এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নিতে আগ্রহীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রাজধানীতে বসবাসকারী বিভিন্ন জেলার নাগরিকরা এ তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করছেন। মেলায় পাসপোর্ট নবায়ন করতে রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, বেলা দশটায় আমি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য মেলায় এসেছি। খবর পেয়েছিলাম যে এখানে তাৎক্ষণিকভাবে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দেয়া হবে। এসেও দেখেছি সত্যি-ই তাই। ১ ঘণ্টা আগে আমি কাগজপত্র ও টাকাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু জমা দিয়েছি। সিরিয়াল অনুযায়ী একটু পরেই পেয়ে যাব বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন কাজে অসহনীয় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এবারই প্রথম বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা সুযোগ পেলাম। ভালোই লাগছে। সরকারের কাছে এমন সুযোগ আরও বাড়ানোর দাবি রাখছি। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উন্নয়ন মেলায় এবারই প্রথম আমরা এমন সুযোগ করে দিতে পেরেছি। মেলা উদ্বোধন থেকে শুরু এখন পর্যন্ত ভিড় কমেনি। তাতে বুঝতে পারছি যে, এ সেবাটি নিতে নাগরিকদের মাঝে বেশ আগ্রহ আছে। আমাদের এখানে অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ উর্ধতন সব কর্মকর্তা এসেছিলেন। আগ্রহীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ আয়োজন আরও বাড়ানোর দরকার বলে মনে করছি। জানা গেছে, মেলায় শুধু পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। নতুন পাসপোর্ট তৈরির সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তবে কেউ চাইলে এখান থেকে ফরম নিতে পারছে। ফরম ফিলআপ করে পরবর্তীতে আগারগাঁও মূল অফিসেই জমা দিতে হবে। তবে মেলায় এক দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সকাল থেকে ১২টার মধ্যে যারা নবায়নের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন তাদের পাসপোর্ট বিকেলে নবায়ন হয়ে যাচ্ছে। আর যারা বারোটার পরে জমা দিচ্ছেন তারা আগামীকাল নবায়নকৃত পাসপোর্ট পাবেন। এর জন্য টাকা নেয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৯শ’ টাকা। যা অন্যান্য সময়ও নেয়া হয়। এছাড়া নিয়ম ও শর্তের বিষয়টি অন্যান্য সময়ের মতোই। উন্নয়ন মেলার ১৮৭-১৮৯ নম্বর স্টল থেকে এ সেবা দেয়া হচ্ছে। সেখানে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের আরেক কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা চৌধুরী জানান, রি-ইস্যু এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য যারা ভ্যাটসহ ৬ হাজার ৯০০ টাকা এবং আগের পাসপোর্ট জমা দেবেন শুধু তারাই একদিনে নতুন পাসপোর্ট নিতে পারবেন। জরুরী রি-ইস্যু আবেদনের ক্ষেত্রে এক দিনে পাসপোর্ট ইস্যু, বেসরকারী ব্যাংকের বুথ স্থাপনের মাধ্যমে সরাসরি অনলাইনে পাসপোর্ট ফি দেয়া এবং পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের ভিড় দেখা গেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের স্টলে। সেখানে নারী-পুরুষ সবাই যোগ্যতা ও পছন্দ মতো পেশায় ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে নাম রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ব্যাংকিং সুবিধাসহ একই ছাতার নিচে বিদেশ যাওয়ার বিভিন্ন সেবাও দেয়া হচ্ছে। এদিকে, মেলায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নিয়ে এসেছে বিশেষ সুযোগ। কাগজপত্র ঠিক থাকলে বিআরটিএ দিচ্ছে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স। যা নিতে স্টলটিতে ছিল আগ্রহীদের উপচে পড়া ভিড়। স্টলে উপস্থিত বিআরটিএ সহকারী পরিচালক সানাউল হক বলেন, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যে ধরনের নিয়ম ও শর্ত অনুসরণ করতে হয়, আমাদের এখানেও তাই করতে হচ্ছে। এখানে একটি সুযোগ হচ্ছে সবকিছু ঠিক থাকলে মুহূর্তে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। মেলার উদ্বোধনের পর থেকে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের শিক্ষানবিস ড্রাইভারি লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। মেলার আয়োজক সূত্র জানায়, এবারের মেলায় পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জন্য আলাদা একটি স্টলের পাশাপাশি জেলা কর্নারগুলোতে পর্যটন বিষয়ক নানা তথ্য দেয়া হচ্ছে। এবারের উন্নয়ন মেলায় মোট ৩৩০টি স্টল রয়েছে। এসব স্টলের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯টি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৬টি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৬টি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০টি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৯টি স্টলে তাদের কর্মকান্ড প্রদর্শন করছে। মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শেষ দিন শিক্ষিত জাতি সমৃদ্ধ দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় বিভিন্ন জেলা বিষয়ে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে।
×