ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিনিধি দল কাল মন্ট্রিয়ল যাচ্ছে

আট বিষয়ে সূচক বাড়ায় আইকাও এ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে বেবিচক

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৬ অক্টোবর ২০১৮

  আট বিষয়ে সূচক বাড়ায় আইকাও এ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে বেবিচক

আজাদ সুলায়মান ॥ আটটি বিষয়ে সূচক বাড়ায় এবার আইকাও এ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল খাতের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে এই এ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর করা হবে। কানাডাার মন্ট্রিয়লে আইকাও সদর দফতরের জাঁকঝমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগামীকাল (রবিবার) বেবিচক সচিব মুহিবুুল হক ও চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কানাডা সফর করবেন। আইকাও আয়োজিত শীর্ষ পর্যায়ের ১৩তম এয়ার নেভিগেসান কনফারেন্স উপলক্ষে এ পদক দেয়া হবে। বেবিচক জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশান অর্গানাইজেশন (আইকাও) প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিভিল এ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সার্বিক উন্নতি, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেয়া হয়। আইকাওয়ের বিচারে বাংলাদেশের সিভিল এ্যাভিয়েশন গত তিন বছরে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সেক্টরে যথেষ্ট উন্নতি করেছে- যা বিশ্বমানের। বিশেষ করে বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবীরের নেতৃত্বে দক্ষ জনবল তৈরি, প্রশিক্ষণ ও পেশাদারিত্ব অর্জনে যথেষ্ট সন্তোষজনক বলে বিবেচনা করছে আইকাও। এছাড়া সিভিল এ্যাভিয়েশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান ও সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানের দূরদর্শিতায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে গতিশীলতা ফিরে আসা এবং সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার চিত্র দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। মূলত তাদের অক্লান্ত ও নিরলস প্রচেষ্টায় বেবিচকের সেফটি ওভারসাইট কার্যক্রমের ব্যাংকিং ৫০ দশমিক ৮১ থেকে ৭৫-উন্নীত হয়েছে। যা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক প্রভাবশালী দেশের চেয়েও শীর্ষে। এসব সূচকেই বাংলাদেশকে এ বছর আইকাও পদক দেয়ার জন্য মনোনীত করা হয়। মন্ট্রিয়লে আইকাওয়ের সদর দফতরে ৯ অক্টোবর শুধু বাংলাদেশই নয়-বিশ্বের সবগুলো সদস্য দেশের এয়ার নেভিগেশন কনফারেন্সে জাঁকঝমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ পদক দেয়া হবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ-এমনকি ভারতের চেয়েও অনেক বেশি এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) বিশ্বব্যাপী ইউনিভার্সেল ওভারসাইট সেফটি অডিট প্রোগ্রাম ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ৮টি পরিমিতির ৫ টিতেই কার্যকর বাস্তবায়নে বৈশ্বিক গড় স্কোর পেতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। যে ৮টি বিষয়ের ওপর বিমান নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় সেগুলো হলো, ব্যবস্থাপনা, প্রতিষ্ঠান, লাইসেন্স, অপারেশন, বিমান পরিচালনা যোগ্যতা, দুর্ঘটনার তদন্ত, বিমান পরিভ্রমণ সেবা এবং বিমানবন্দর। এসব সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৭৬ যেখানে ভারতের স্কোর হচ্ছে ৫৭। সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক চৌধুরী জিয়াউল কবির বলেন-এ সূচক কিছু দিন পর পরই হালনাগাদ করা হয়। এই বিষয়গুলো কতটা নিরাপদ এবং বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো কার্যকর কি না সে বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই ওই নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে আছে ভারত। আইকাও-এর মানদ-ে ওই ৮টি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠির কার্যকর বাস্তবায়নে ভারতসহ এশিয়ার অনেক উন্নত দেশের চেয়েও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ৮টি প্যারামিটারের মধ্যে সাতটিতেই ভারতের চেয়ে ভাল স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া সবগুলো ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে ভাল অবস্থান অর্জন করেছে। অপরদিকে পাঁচটি প্যারামিটারে ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছে মালয়েশিয়া। কোন ৮টি বিষয়ে কতটুকু উন্নতি ঘটেছে জানতে চাইলে চৌধুরী জিয়াউল কবির জনকণ্ঠকে বলেন, বেবিচকে বিগত ৫ বছর অনেক সংস্কার আনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমত- লেজিলেশনের স্কোর আগে ছিল সাড়ে ২৮, এখন সেটা হয়েছে ৭২। কারণ আগে কোন আইন ছিল না। বছরখানেক আগে সিভিল এ্যাভিয়েশন অথরিটি এ্যাক্ট ও সিভিল এভিয়েশন এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অর্গানোগ্রাম ছিল না। বাংলাদেশ যে ব্ল্যাক লিস্টেড ছিল এটাই ছিল প্রধাণ কারণ। এয়ারওর্দিনেস ছিল দুর্বল। এখন সেই অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে এবং সেটার সেট আপ ও রুলস তৈরিও বাস্তবায়নের পথে। এটার আগের সূচক ছিল আগে ছিল মাত্র ৪০ এখন সেটা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তৃতীয়ত, পার্সোনাল লাইসেন্সিং এর অবস্থাও ছিল তথৈবচ। এখন আইকাও এনেক্স অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে মান বাড়ানো হয়েছে অভাবনীয়। যে আগের স্কোর ৬৫ থেকে বেড়ে ৭৩ হয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণত পরীক্ষা পদ্ধতি ও অটোমেশান চালু করায় আইকাও এর মান নিশ্চিত করা হচেছ। চতুর্থত, অপারেশন আগে পাইলটদের দায়িত্ব পালন তাদের পেশাগত মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। আইকাও ম্যানুয়াল ৬ অনুযায়ী এখন তা সার্বক্ষণিক মনিটর করা হয়। এই মান এখন ৮০ থেকে ৮৫ হয়েছে। পঞ্চমত, এয়ারওর্দিনেস আগের ৭২ ছাড়িয়ে এখন ৮৬ হয়েছে। আইকাও এনেক্স ম্যানুয়াল অনুযায়ী এখন এয়ার লাইন্সগুলো কিভাবে অপারেট করা হয়, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় কি না তা নিয়মিত অডিট ও মনিটর করা হয়। এতে ফ্লাইট সেফটির সূচক বেড়েছে। ষষ্ঠত, আগে এক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ছিল না। এখন প্রাথমিকভাবে ৬ জন দক্ষ ও পেশাদার জনবল দ্বারা এই বিভাগ চালু করা হয়েছে। এজন্য আরও জনবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এআইজি সরাসরি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করবে। এ বিভাগের মান ছিল সবচেয়ে বেশি দৈন্য অবস্থায়। আগে ছিল মাত্র ৩ এখন পৌঁছেছে ৬৫- এ। আইকাও এনেক্স ১৩ অনুযায়ী এআইজি এর মান নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সপ্তমত, এয়ার নেভিগেশনেও আনা হয়েছে ব্যাপক সংস্কার ও পরিবর্তন। ভিএইচআর, আইওভি, রাডার, এটিসি ও কমিউনিকেশনে যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে- অষ্টম বিষয় এরোড্রাম গ্রাউন্ড এইড (আগা) বিভাগেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। রানওয়ে সংস্কার, লাইটিং, সারফেস, টারমার্ক, এপ্রোণ, এয়ার সাইটে গত কয়েক বছরে ব্যাপক উন্নতি ঘটানো হয়েছে। সিভিল এ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর নেতৃত্বে একদল দক্ষ প্রকৌশলী বিমানবন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত করেছেন। সদর দফতরের চতুর্থ তলায় থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে প্রবেশপথ, রানওয়ে, এপ্রোণ এরিয়া, কার্গো হাউসসহ বিমানবন্দরের পুরানো জীর্ণ চেহারায় শ্রীবৃদ্ধি ঘটায় দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও মুগ্ধ হচ্ছেন। এ কারণে এজিএ-এর মান বেড়েছে ৬৬ হয়েছে। এ বিষয়ে সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী জানিয়েছেন, শুধু যে প্রজেক্ট নিয়ে শেষ করা হয়েছে তা নয়। আরও অনেক প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া প্রকৌশলীদের সিঙ্গাপুর ও জাপান থেকে পেশাগত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। রানওয়ে, প্রপোণ সারফেস ঠিক করা, মার্কিং করা, সিকিউরিটি চৌকি নির্মাণ, সীমানা দেয়াল নির্মাণ অনেক কাজ করা হয়েছে গত ক’বছরে। এসব কারণেই আজ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে।
×