ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রবীন্দ্র সরোবরে শারদ উৎসব

বিদায় বেলায় শরত বন্দনা, সঙ্গীত নৃত্যে মুখর উন্মুক্ত মঞ্চ

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৬ অক্টোবর ২০১৮

বিদায় বেলায় শরত বন্দনা, সঙ্গীত নৃত্যে মুখর উন্মুক্ত মঞ্চ

মোরসালিন মিজান ॥ দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো শরত। শেষ হওয়ার পথে। দুই মাস বয়সী ঋতুর প্রথমটি ভাদ্র। ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছে। সমাপনী মাস আশ্বিনও যাই যাই করছে এখন। কিন্তু প্রিয় ঋতুর যে সৌন্দর্য, এই বেলাতেই বেশি প্রকাশিত হয়। হয়ত তাই বিদায়ের আগ মুহূর্তে শারদ উৎসবের আয়োজন। শুক্রবার সকালে সঙ্গীত নৃত্যের ভাষায় শরতের সৌন্দর্যকে তুলে ধরলেন একঝাঁক শিল্পী। বিভিন্ন বয়সী শিল্পীর একক ও দলীয় পরিবেশনায় হলো শরতবন্দনা। ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ। হ্যাঁ, সংগঠনটি অনেক পুরনো। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সংস্কৃতির সেবা করছে। বাঙালী সংস্কৃতির চর্চায়, আন্দোলন সংগ্রামে আছে নিয়মিতভাবেই। একই ব্রত থেকে সম্মিলন পরিষদ ঋতুভিত্তিক নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শারদ উৎসব সেগুলোর অন্যতম। উন্মুক্ত মঞ্চে সকাল ৭টায় সূচনা করা হয় অনুষ্ঠানের। চমৎকার খোলা মঞ্চ। পেছনে সরোবর। জলের ধারা। সামনে সবুজ চত্বর। বৃক্ষ পরিবেষ্টিত চত্বরে সূর্য সবে উঁকি দিচ্ছিল। ঠিক তখন শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গান- আলোর অমল কমলখানি কে ফুটালে,/নীল আকাশের ঘুম ছুটালে...। আশপাশের বাসা-বাড়ির লোকেদের ঘুম সত্যি ছুটে গিয়েছিল। শরতের রূপ আর রবীন্দ্রনাথের গান উপভোগ করেছেন তারাও। দ্বিতীয় গানে আনন্দের বারতা। শিল্পীরা গাইলেন, ‘শরতে আজ কোন্ অতিথি/এল প্রাণের দ্বারে।/আনন্দগান গা রে হৃদয়,/আনন্দগান গা রে...।’ তৃতীয় সম্মেলকে হলো কাশফুলের কথা। বস্তুত শরতের অনুষ্ঠানে বারবারই এ গান গাইতে হয়। গানটি- আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা-/নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা...। এভাবে নিয়মিত বিরতিতে পরিবেশিত হয় কয়েকটি সম্মেলক গান। পর্বটি পরিচালনা করেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের দারুণ সম্ভাবনাময় শিল্পী সেমন্তী মঞ্জরী। সম্মেলকের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে কয়েক শিল্পী একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের মধ্যে লাইসা আহমেদ লিসার কণ্ঠে ছিল ‘হেলাফেলা সারা বেলা’ গানটি। ঠিক শরতের নয়। রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্যায়ের গান। বেশ উপভোগ করেন শ্রোতা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের আরেক প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী সেঁজুতি বড়ুয়া। তার কণ্ঠেও ঠিক শরতের গান ছিল না। তবে ভীষণ জনপ্রিয় আবেগী সুর। সেখানে কবিগুরুর আহ্বান- যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে।/যদি থাকি কাছাকাছি,/দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি-/ তবু মনে রেখো...।’ পার্থ প্রতিম রায়ের গানে ছিল শিউলি। শরত শেষ হতে চললেও, ফুলটি তেমন ফোটেনি। চোখে পড়ে না। তবে ‘শিউলি ফুল, শিউলি ফুল’ গানটি মন ভরিয়ে দেয়। এ এস এম জাকারিয়া, অভীক দেব, শুকলা পাল সেতু, শ্রেয়া ঘোষ, স্বাতি সরকার, অভয়া দত্ত প্রমুখের গানও উপভোগ করেন শ্রোতা। অনুষ্ঠানে গানের পাশাপাশি ছিল নৃত্যায়োজন। রবীন্দ্র নৃত্যের জনপ্রিয় শিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় নাচের মুদ্রায় শরতবন্দনা করেন। তার সঙ্গে ছিল নৃত্যনন্দন। সব মিলিয়ে অন্যরকম ছিল সকাল বেলাটা। শহর ঢাকায় এমন সকাল দুর্লভ বৈকি। শারদ উৎসবের আয়োজকরাও তাই খুশি। সম্মিলন পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সেমন্তী মঞ্জরী বলছিলেন, সব কিছু ভুলতে বসেছে যান্ত্রিক ঢাকা। এ অবস্থায় খোলা প্রাঙ্গণে শারদ উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা মূলত আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এমন বিশুদ্ধ আহ্বানে জেনে উঠুক আগামী। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×