ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বহু শিশু

ইন্দোনেশিয়ার পালু যেন লাশের নগরী

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৬ অক্টোবর ২০১৮

  ইন্দোনেশিয়ার পালু  যেন লাশের নগরী

শক্তিশালী ভূমিকম্প ও বিধ্বংসী সুনামির আঘাতের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইন্দোনেশিয়ার সুলাবাসি দ্বীপের পালু নগরীতে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৫৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বহু মানুষ নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান স্থানীয় কর্মকর্তারা। খবর ইয়াহু নিউজের গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সমুদ্র থেকে উঠে আসা প্রায় ছয় মিটার উঁচু দানবাকৃতির ঢেউ সুলাবাসি দ্বীপের পশ্চিম উপকূলের পালু নগরীকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ভূমিকম্পের কারণে ভূমিধস এবং সুনামিতে সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় এখনও উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেননি। যে কারণে সেখানকার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান কর্মকর্তারা। পালুর দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাম পেতোবোর বাসিন্দা ৪৪ বছরের হাসনাহ পরিবারের অর্ধেকের বেশি সদস্যকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছেন। নিহতদের মধ্যে তার দুই সন্তান, বোন, বোনের স্বামী-সন্তান এবং বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন আছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের এত সদস্য মারা গেছে যে আমি গুনতেও পারছি না। ভূমিকম্পে আমাদের বাড়িঘর মাটির ভেতর ঢুকে যেতে দেখেছি। মনে হচ্ছিল ব্লেন্ডারের মধ্যে সবকিছু ব্লেন্ড হয়ে যাচ্ছে। আমি সৌভাগ্যবান তাই বেঁচে আছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেঁচে না থাকলেই ভাল হতো।’ উদ্ধার কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। তারা বলেছিল, তারা বড় বড় মেশিন নিয়ে উদ্ধার কাজ করবে। কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, তারা মিথ্যাবাদী।’ তবে ধীরে হলেও প্রাণ ফিরছে পালু নগরীতে। বিদ্যুত ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার হয়েছে। কিছু কিছু দোকান এবং ব্যাংক খুলেছে। ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে জ্বালানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। নগরীর ১৩৪ শয্যার ‘বুদি আগুং’ হাসপাতালে আরও ২০টি শয্যা যোগ করা হয়েছে। সেখানে আহত মানুষের সংখ্যা উপচে পড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। রেডক্রসের হেলিকপ্টার থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় খাবার, কম্বল ও তাঁবু ফেলা হয়েছে। তবে অনেকেই শুধু নারকেল, কলা ও কাসাভা খেয়ে জীবন বাঁচিয়ে রাখার কথা জানিয়েছেন। এদিকে ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামির পর বহু শিশু-কিশোর তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য প্রচুর সাহায্য প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার ত্রাণকর্মীরা একথা জানান। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্র উপকূলবর্তী পালু নগরীতে বহু ভবন ধসে পরিবহন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্যোগ কবলিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। এছাড়া সেখানে অহরহ লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে জীবিত কাউকে উদ্ধার করার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ হয়ে আসছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ভূমিকম্প ও সুনামির ঘটনায় এখনও শতাধিক লোক নিখোঁজ রয়েছে। জীবিতদের মৌলিক চাহিদা পূরণে কর্মরত কর্মকর্তা ও বিদেশী ত্রাণ গ্রুপের সদস্যরা দুর্যোগ কবলিত এলাকায় পৌঁছেছে। সেখানে তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ব্যাপক সংখ্যক শিশুর দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেভ দি চিলড্রেন জানায়, পালুতে অনেক শিশু-কিশোর রাস্তার ওপর ধ্বংসস্তূপের মাঝে ঘুমাচ্ছে। এসব শিশুর পরিচয় জেনে তাদের তাদের পরিবারের সঙ্গে একত্রিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সংস্থাটির শিশু রক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা জুবেদি কোতেং বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের জন্য আরও ভীতিকর পরিস্থিতির কথা চিন্তা করা যায় না।’ তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বহু শিশু ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এসব শিশু তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে তাদের নিকট আত্মীয়দের খোঁজ করছে। ভয়াবহ দুর্যোগ কবলিত এ ভাগ্যাহত শিশু-কিশোররা নিঃসঙ্গ ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বুকভরা আশায় দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কিশোররা আপনজনদের খঁজে ফিরছে।
×