ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৬ অক্টোবর ২০১৮

ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে ৫৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তির আওতায় ভারত রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল ব্যবস্থা কিনবে। খবর এনডিটিভি ও ওয়ান ইন্ডিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রর ও রাশিয়ার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছে তার মাঝেই একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে এবং অপরদিকে ভøাদিমির পুুতিনের সরকারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি করে ভারত নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। ২০২০ সালের শেষের দিকে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে। এই চুক্তির আগেই যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিল। মিত্রদেশগুলো যাতে রাশিয়ার কাছ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র না কেনে সে কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারিকে তোয়াক্কা না করেই ভারত এই চুক্তি স্বাক্ষর করল। রাশিয়ার এই এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমকে বলা হয় এখন পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আকাশে উড়তে থাকা ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুও এটি সহজে ধ্বংস করে দিতে পারে। ভবিষ্যতে এটিই হতে চলেছে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অস্ত্র। দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার রাতে ভারত এসে পৌঁছেন পুতিন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। পরে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারী বাসভবনে নৈশভোজের পাশাপাশি একান্তে বেশ কিছুটা সময় কথাও বলেন। শুক্রবার তারা আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। পুতিনের সঙ্গে দেখা হতেই তাকে জড়িয়ে ধরেন মোদি। রুশ-ভারত বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে এসেছেন পুতিন। কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তার মধ্যে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনার প্রসঙ্গটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার থেকে এই সিস্টেম কিনলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা। এরকমই পরিস্থিতির মধ্যে বৈঠক করেছেন পুতিন ও মোদি। রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরভ। ২০১৪ সালে এস-৪০০ এই অত্যাধুনিক মিসাইল প্রথম ক্রয় করে চীন। রাশিয়া এখন তাদের মিসাইল সরবরাহ করতে শুরু করেছে। এর আগেই এই মিসাইল সিস্টেমটি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে নয়াদিল্লী। ভারতের বিমান বাহিনীর প্রধান বি এস ধানোয়া জানিয়েছেন, সরকারের অনুমতি পাওয়ার পর মিসাইল সিস্টেম হাতে পেতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। ইরান, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে কোন বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন করলে যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেজন্য কাউন্টারিং আমেরিকাস এ্যাডভারসারিস থ্রু স্যাঙশন এ্যাক্ট (সিএএটিএসএ) নামে একটি আইনও তৈরি হয়েছে। পুতিন-মোদি বৈঠকে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এদিকে ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন পুতিন। রুশ ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এস-৪০০ মিসাইলসহ ২০টি বিষয়ে দুদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া চারটি যুদ্ধ জাহাজ কেনারও পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। ভারত রাশিয়া ছাড়াও জাপানের সঙ্গে প্রতি বছর এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন করে। এটি এই বছর অনুষ্ঠিত পুতিন-মোদির তৃতীয় বৈঠক। এর আগে মে মাসে রাশিয়ার সোচি শহরে দুজনের বৈঠক হয়। পরে ব্রিকস সম্মেলনেও দুজন আলোচনায় বসেন। মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ জানান, ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। আগামী দিনেও তা অব্যাহত রাখবে। পুতিনের সঙ্গে নয়াদিল্লীর সামরিক চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে। কারণ ভারত দীর্ঘদিন থেকে বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও এ বিষয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকে নয়াদিল্লীকে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তা সত্ত্বেও মার্কিন হুমকিকে অগ্রাহ্য করে এগিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লীর কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কয়েকটি কারণে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়টি জরুরী হয়ে পড়েছে। চীন ও পাকিস্তানকে মোকাবেলা করতে এই ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে থাকা জরুরী। সম্প্রতি চীনও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কিনেছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝোকায় কাছাকাছি এসেছে রাশিয়া-চীন-পাকিস্তান। ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে নৌ সমঝোতা চুক্তি করে ইসলামাবাদ। এখন সেই সমীকরণ ভেঙে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বহু পুরনো সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করা প্রয়োজন।
×