ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সচেতনতার অভাবে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে রোগীরা

ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করছে রাজধানীতে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করছে রাজধানীতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তিত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রাজধানীবাসীর। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপের বিষয়টি স্বীকার করে খোদ ডিএসসিসি মেয়র বলেছেন, বিগত ২-৩ বছরের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়েছে। গত বছর চিকুনগুনিয়ার পাদুর্ভাব বেশি ছিল। আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ বছর চিকুনগুনিয়া নেই। হাসপাতাল, গণমাধ্যম ও আমাদের কর্মীদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এবার কিছুটা ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন গতানুগতিকভাবে মশা নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এক হিসাবে অনুযায়ী জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রতিদিনই ডেঙ্গুর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েছে। রাজধানীতে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ নিয়ে সবার মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হলেও ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় মশক নিধনের কার্যক্রমে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকরী পদক্ষেপ কারও চোখে পড়ছে না। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, তারা এ বিষয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মশা নিধনের জন্য ক্র্যাশ ও লার্বি সাইড ওষুধ ছেটানোর কার্যক্রম চলছে। সপ্তাহে দুই দিন পালা করে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ নিয়ন্ত্রণে আরও ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত ছিল দুই সিটি কর্পোরেশনের বলে দাবি করছেন রাজধানীবাসী। দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করতে গত ২৫ জুন ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে একযোগে ‘বিশেষ কর্মসূচী’ শুরু করে। দুই দফায় ওই কর্মসূচীর আওতায় ৩৩ হাজার ৫০৮টি বাড়িতে গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়া এডিস মশা ধ্বংস করতে তৃতীয় ধাপে গত ৩ সেপ্টেস্বর থেকে ‘বিশেষ ক্র্যাশ কর্মসূচী’ চালু করেছে ডিএসসিসি। অন্যদিকে ডিএনসিসি গত ৪ আগস্ট মশা নিয়ন্ত্রণের ‘বিশেষ কর্মসূচী’ হাতে নেয়। সেই কর্মসূচী চলে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখে গত ৯ সেপ্টেম্বর আবার সেটি চালু করেছে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ। সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান বেশি চালাচ্ছেন তারা। রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, টিভি-পত্রিকার খবরের মাধ্যমে রাজধানীর ডেঙ্গু রোগেরে প্রকোপ সম্পর্কে জেনেছি। এছাড়া আমাদের দুইজন আত্মীয় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও সিটি কর্পোরেশনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখছি না। মশক নিধন কর্মীদেরও দেখা পাওয়া যায় না। খুব কমই দেখা মিলে মশক নিধনের ওষুধ ছেটাতে। বাড়ি বাড়ি আসা তো দূরের কথা এলাকার অলি-গলিতেও তাদের দেখা যায় না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শেখ সালাহ উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবেলায় আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তবে এডিস মশা থেকে বাঁচতে জনগণের সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। এই মশা বাসা বাড়ির স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে, বাড়ির ভেতর গিয়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানো সম্ভব হয় না অনেক সময়। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউ সেবা চাইলে বিনামূল্যে সেবা দিবে ডিএসসিসি। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাকির হাসান বলেন, ডেঙ্গু রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এটা সত্য। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। তবে এডিস মশা প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটের রাজস্ব ব্যয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় অংশের হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অন্যান্য খাতের পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে (মনিটরিং-সার্ভাইলেন্স) ব্যয় হবে ২১ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশক নিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশক নিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু মশক নিধনে এবং রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ মোকাবেলায় দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজধানীবাসী। রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার (মেডিক্যাল অফিসার) ডাঃ সাদিয়া আরেফিন বলেন, বিগত দুই মাস ধরে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী তুলনামূলক বেশি আসছেন। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বিষয়টি আতঙ্কের। এডিস মশার কামড়ে এবার বেশিরভাগই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।
×