ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন নয়া সেতু ॥ বদলে গেছে কুয়াকাটা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৬ অক্টোবর ২০১৮

তিন নয়া সেতু ॥ বদলে গেছে কুয়াকাটা

পেছনের দৃশ্যটাই বলে দিচ্ছে কী ছিল পর্যটন এলাকা কুয়াকাটার সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার। দুর্গতি বললেও কম হবে। কতটা দুর্গম ছিল তা স্মৃতি হাতড়ে বোঝা যাবে। বলতে পারবেন যারা এর ভুক্তভোগী ছিলেন। শখের কুয়াকাটায় যেতে ছিল অন্তহীন ভোগান্তি। সকালে কলাপাড়ায় পৌঁছে কুয়াকাটায় পৌঁছতে আরেক সকাল পেরিয়ে যেত। এক অন্তহীন যাতনা ছিল চলাচলে। এক কথায় অনিশ্চিত গন্তব্যে চলার মতো। কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে কুয়াকাটা সৈকতের দূরত্ব মাত্র ২২ কি.মি.। অথচ তিন নদীতে ছিল তিনটি ফেরি। যেখানে কোন না কোনটার ইঞ্জিন বিকল থাকত। এসব ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আর বর্ষা মৌসুমের চারটি মাস; সে তো ছিল অবর্ণনীয় ভোগান্তি। অস্বাভাবিক জোয়ারে মাসের অন্তত ১৫ দিন ডুবে থাকত বেইলিব্রিজসহ গ্যাংওয়ে পন্টুন। ৫/৬ ঘণ্টা পারাপার বন্ধ থাকত। দুর্ঘটনা ঘটেছে অহরহ। নদীতে ডুবেছে যানবাহন। বহুবার ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। ২০০৮ সালের পরের কথা। কেবল শুরু। স্বপ্নের মতো। কুয়াকাটাগামী যাওয়া পর্যটক-দর্শনার্থীরা ভোগান্তির মধ্যেও স্বপ্নের জাল বুনতেন তিন নদীতে তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজের খবর। ২০০৯ সালে সেই স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা শুরু হয়। ওই বছরের ৬ অক্টোবর কার্যাদেশ দেয়া হয় শিববাড়িয়া নদীর ওপর শেখ রাসেল সেতুর। ৪৮২ দশমিক ৩৭৫ মিটার দীর্ঘ মূল সেতু নির্মাণের। রয়েছে চার শ’ মিটার সংযোগ সড়ক। এ সেতুটির দ্বার খুলে দেয়া হয় ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট। আর থমকে দাঁড়ায়নি। একইভাবে সোনাতলা নদীতে নির্মাণ করা হয় ৪০৮ দশমিক ৩৬ মিটার মূল সেতুসহ চার শ’ মিটার সংযোগ সড়কের শেখ জামাল সেতু। সেতুর দক্ষিণপাড়ে মহাসড়কের পাশে ব্যবসায়ী মমিনুল হকের দোকান। তার ভাষ্য, এই ব্রিজ হওয়ায় যোগাযোগে ভোগ করা লাগে না। তিনি এও বলেন, ‘কত মানুষ ব্রিজ করার আগে ফেরি পারাপারের সময় গাড়ি লইয়া আইটকা রাইত কাডাইছে তা মনে করতেও খারাপ লাগে।’ একই সড়কের আন্ধারমানিক নদীর ওপর ৮৯১ দশমিক ৭৬ মিটার মূল সেতুসহ চার শ’ মিটার সংযোগ সড়কের শেখ কামাল সেতু নির্মাণ করা হয়। এ সেতু দুটি চালু হয় ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ প্রাপ্তি ছিল এই অঞ্চলের কাছে সবচেয়ে বড়। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য দেশ স্বাধীনের পর থেকে যুগের পর যুগ দক্ষিণ জনপদের লাখ লাখ মানুষকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে। তা পূরণ করলেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শহীদ সন্তানদের নামে এ সেতুর নামকরণ হওয়ায় এ জনপদের মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ বলে মনে করছেন এ আসনের তিনবারের এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মাহবুবুর রহমান। মাত্র ২২ কি.মি. সড়কের তিন সেতু করায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভোগান্তি ভুলে স্বস্তির পরশমাখা ভ্রমণে কুয়াকাটায় যায়। সড়কটিও ডাবল লেনে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কপথের পেছনের সেই অবর্ণনীয় ভোগান্তির কথা মনে করলে পর্যটকরা এখনও আঁৎকে ওঠেন। সেই দৃশ্যপট স্মৃতির পাতায়ও রাখতে চায় না তারা। তারপরও পেছনে ফিরে না তাকালে এই জনপদের পর্যটনকেন্দ্রিক যোগাযোগের দৃশ্যপটে বদলদৃশ্য বোঝা যাবে না। এখন দুর্ভোগের এই পথটুকু হয়েছে ভ্রমণ উপভোগ্য। কুয়াকাটায় যাওয়ার প্রাক্কালে সেতুগুলোতে গাড়ির চাকা থমকে যায়। গাড়ি থেকে বের হয়ে তিন সেতুতে নেমে পর্যটকরা একটু দেখেন নৈসর্গিক দৃশ্যপট। শেখ কামাল সেতু পার হতে আন্ধারমানিকের দুই দিকের নদী ও তার শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি। ইলিশের অভয়াশ্রম। পর্যটন শহর কলপাড়াকে দেখেন। সোনাতলা নদীর ওপরে শেখ জামাল সেতুতে আবার ভিন্ন দৃশ্যপট দেখেন। পশ্চিম দিকে দ্বিতীয় সুন্দরবনের দৃশ্যপট দূর থেকে অবলোকন করা। শেখ রাসেল সেতুতে দেখেন শিববাড়িয়া নদীতে ফিশিং করার শত শত বোটের দৃশ্যপট। কেউ কেউ কুয়াকাটায় যাওয়ার সেই দুঃসহ, ভোগান্তির স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান। আবার এখন সুখস্মৃতি উপভোগ করেন। যেন যোগাযোগে পর্যটন এলাকার বদলে যাওয়া এক জনপদ। এভাবেই ভাবনায় মেলান। কী কিংবা কতটা দ্রুত এগিয়ে গেছে কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী দর্শনে এ যেন এক বিস্ময়কর পরিবর্তন। মিরাকল। এই জনপদের মানুষ প্রাপ্তির সঙ্গে মেলায় প্রত্যাশার যোগসূত্র। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়াকাটার যে উন্নয়ন করেছেন, কিংবা এখনও করে যাচ্ছেন তা বাস্তবায়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনকে অন্তর দিয়ে বুঝতে হবে। তবে তার সুপারিশ বাস মালিক সমিতিকে উদ্যোগ নিতে হবে পর্যটককে বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় দ্রুত আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুযোগকে যেন কাজে লাগাতে পারেন। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ড. মাছুমুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কুয়াকাটায় যোগাযোগে সড়ক পথের উন্নয়নে যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন তার বাস্তবতা, মাত্র ২২ কিলোমিটার সড়কে এত কম সময়ে তিনটি সেতু নির্মাণ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায়ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যার কাজও শুরু হয়েছে। এ কারণে কুয়াকাটায় হোটেল ব্যবসা এখন মৌসুম নির্ভর নেই। তিনি আরও বলেন, শুধু কুয়াকাটা নয় পায়রা বন্দর নির্মাণসহ গোটা কলাপাড়ার উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রধানমন্ত্রী নিজে তদারকি করেন। আমরা তার নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট রয়েছি। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×