ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

প্লাস্টিকে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ৫ অক্টোবর ২০১৮

প্লাস্টিকে বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ

সাগরে প্লাস্টিক লোনা জলরাশির সঙ্গে বিক্রিয়ায় ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার আকার ধারণ করে। সেই প্লাস্টিক খেয়ে নবজাত সামুদ্রিক কচ্ছপের অস্তিত্ব বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ প্লাস্টিক কণায় কচ্ছপ ছানার শরীরে ব্লকেজ ও পুষ্টিগত ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ারসমূহ আশঙ্কা থাকে। আমেরিকায় এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই তথ্য থেকে আরও বুঝা যায় সে প্লাস্টিকের দূষণে সাগরের সকল শ্রেণী ও জাতের কচ্ছপ অস্তিত্বই ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কারণ সামুদ্রিক কচ্ছপের যৌনগত দিক দিয়ে পরিণত হয়ে উঠতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। গবেষণা থেকে আরও জানা যায় যে প্লাস্টিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকার ধারণ করায় সাগরের খাদ্যচক্রের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। গবেষকদলের অন্যতম ব্রানসন ডব্লিউ রিচি বলেন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকারে প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে কোন প্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার বা সেই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হওয়ার প্রথম ঘটনায় আমরা হয়ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। প্রাণীজগত নিয়ে ৩০ বছরেরও বেশি গবেষণা অভিজ্ঞতার অধিকারী রিচি আরও বলেন, ‘তবে এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো এই প্লাস্টিক কণাগুলো সাগরের ইকোসিস্টিমের কি ক্ষতি করতে যাচ্ছে। সাগরের প্লাস্টিক ক্রমাগত ভেঙ্গে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর আকার ধারণ করে চলেছে। আর ক্ষুদ্রতর কণাগুলোকে উদরস্থ করে চলেছে সাগরের সবচেযে ছোট প্রাণীগুলো। এতে গোটা খাদ্য চক্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। কারণ প্লাস্টিক কণা খাদ্যের আকারে শরীরের ভিতর প্রবেশ করে এসব প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। নবজাত সামুদ্রিক কচ্ছপের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সে হার আমরা লক্ষ্য করেছি তা যদি জু প্লাঙ্কান, মাছের পোনা ও খোলসযুক্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রেও ঘটে তাহলে সমুদ্রে প্রাণচরে সম্পূর্ণ ব্যাঘাত ঘটতে পারে।” গবেষকরা ডিমের খোলস ভেঙ্গে সাগরে চলে যাওয়া ৯৬টি সামুদ্রিক কচ্ছপ সংগ্রহ করে তাদের গবেষণায় পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। এগুলি ফ্লোরিডার ভোরা বিচ ও লেকওয়ার্থের মধ্যবর্তী দীর্ঘ উপক’লরেখার সৈকতে সাগরের ঢেউয়ে ভেসে এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে লগারহেড ও গ্রীন টার্টলের বৃহত্তম আবাসস্থলের অংশ এটা। যুক্তরাষ্ট্রে যত লগারহেড কচ্ছপ আছে তার ৯০ শতাংশেরও বেশি ফ্লোরিডায় এসে ডিম পাড়ার জন্য আশ্রয় নেয়। সংগ্রহীত ৯৬টি কচ্ছপের বাচ্চার প্রায় অর্ধেককে একটি কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করে আবার সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়। পুনর্বাসনে থাকার সময় সবগুলো বাচ্চার মলমূত্রের সঙ্গে কিছু পরিমাণ প্লাস্টিক বেরিয়েছে। ৯৩ শতাংশ কচ্ছপের বাচ্চার উদরে কিছু পরিমাণ প্লাস্টিক কণা পাওয়া গিয়েছিল। তা থেকে গবেষকরা উপসংহারে পৌঁছান যে অনেকের মৃত্যু ঘটেছে প্লাস্টিক কণা খাওয়ার কারণে ব্লকেজ কিংবা পুষ্টিগত ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য। সামান্থা ক্লার্ক নামে এক গবেষক বলেন যে সামুদ্রিক কচ্ছপরা সাগরে প্লাস্টিককে খোলসযুক্ত প্রাণী বা মাছের ডিম ভেবে ভুল করে খেয়ে ফেলে। আর বড় বড় সামুদ্রিক কচ্ছপরা তো ভাসমান প্লাস্টিক ব্যাগকে জেলিফিশ ভেবে খেয়ে নেয়। চালস মনপির নামে এক গবেষক বলেন, গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছে প্লাস্টিক কণা খাওয়া খুব কম সংখ্যক কচ্ছপ শাবকই প্রজনন ও ডিম পাড়ার মতো সময় পর্যান্ত বেঁচে থাকতে পারবে। অন্যান্য জাতের সামুদ্রিক কচ্ছপেরও যদি একই ধরনের মৃত্যুহার থাকে তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় যে প্রাকৃতিক ও মানুষের কারণে মারা যাওয়া কচ্ছপের সংখ্যা পূরণ করার উদ্দেশে যৌন সক্ষমতার বয়সে পৌঁছবার মতো খুব অপ্রতুল সংখ্যক সামুদ্রিক কচ্ছপ ছানাই থেকে যাবে। গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেন যে ইতিহাসগতভাবে প্রতি এক হাজার কচ্ছপ ছানার মধ্যে মাত্র একটি পুরোপুরি পূর্ণতায় পৌঁছানোর মতো দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। তবে সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষায় বলা হয় এই অনুপাতটা প্রতি ১০ হাজারে একটি হতে পারে। প্লাস্টিক এখন সামুদ্রিক আবর্জনার সবচেয়ে সাধারণ ও প্রচলিত রূপ। বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক কচ্ছপ, সামুদ্রিক পাখি, সীল, সীলায়ন, তিমি ও অমেরুদ-ী প্রাণীসহ কমপক্ষে ৬৯০টি সামুদ্রিক প্রজাতি প্লাস্টিক খেয়ে বা প্লাস্টিকের দীর্ঘ সংস্পর্শে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বা মারা গেছে। গবেষক দল আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য আবিষ্কার করেছেন। তাহলো একবার গলধকরণ করা হলে প্লাস্টিক কণা ভাঙতে ভাঙতে এত ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে যে তা আগে কখনো ধরা পড়েনি। প্লাস্টিকের ধরন ও আকার দুটোই নির্ণয়ে তারা বামান স্পেকট্রোস্কোপি ও এটমিক ফোর্স মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করেছিলেন। তারা এমন প্লাস্টিক কণা খুঁজে পান যার আকার গড়ে ৫২ ন্যানোমিটার। সবচেয়ে ছোটটির মাপ ৫ ন্যানোমিটার। বড় ন্যানোপার্টিকেলগুলোর মধ্যে ৫৪ শতাংশ ছিল পলিথিলিন এবং ২৩.৭ শতাংশ ছিল পলিপ্রোপাইলিন। উবয়েই প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এক ন্যানোমিটার হলো এক মিটারের একশ’ কোটি ভাগের এক ভাগ। বলাবাহুল্য মানুষের মাথার চুল প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ন্যানোমিটার চওড়া। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×