ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মাশরাফির ইনজুরি নিয়ে চিন্তা

প্রকাশিত: ০৭:০০, ৫ অক্টোবর ২০১৮

এবার মাশরাফির ইনজুরি নিয়ে চিন্তা

মিথুন আশরাফ ॥ আঙ্গুলে চোট ছিল। তা নিয়েই এশিয়া কাপ খেলেছেন। তবে মাশরাফির পায়ে, উরুর চোট নিয়ে ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমনও হতে পারে আবারও অস্ত্রোপচারের টেবিলে যেতে হতে পারে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। এক হাঁটুতেই সাতবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তা নিয়েই মনের সাহস দিয়ে খেলে গেছেন মাশরাফি। জনতার সবচেয়ে পছন্দের ক্রিকেটারের নামটিও এখন মাশরাফি। দেশের জন্য সব উজাড় করে দিয়ে খেলেন। সেখানে ইনজুরি মাশরাফির কাছে গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই ইনজুরিই এখন ভাবনার তৈরি করেছে। ইনজুরির কাছে মাশরাফির হার না মানার গল্প সবারই জানা। সেই গল্পের বইয়ে আরও একটি পাতা যোগ হয়েছে এবারের এশিয়া কাপে। বাতাসে ভেসে শোয়েব মালিকের ক্যাচ নিয়ে এক হাত উঁচিয়ে মাশরাফি উদযাপন করেছেন ঠিকই কিন্তু ডানহাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে লেগে গেছে বড় চোট। অবশ্য এ নিয়েও তেমন মাথা ব্যথা নেই তার। আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে মাশরাফি আবারও মাঠে নেমে পড়েন কয়েক মিনিট পরই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বলছেন, মাশরাফির কনিষ্ঠ আঙ্গুলের হাড়ে চোট আছে। যা সারতে অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু মাশরাফিকে দেখে বোঝার উপায় নেই, ইনজুরিটা এতটা গুরুতর। এই হাত নিয়েই দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মাশরাফির ইনজুরি নিয়ে বিসিবির চিকিৎসক বলেন, ‘ওর আঙ্গুলে যে সমস্যা আছে সেটাকে আমরা যতটা বড় ব্যাপার মনে করছি মাশরাফি নিজে তা মনে করছে না। আমরা যদি স্ক্যান রিপোর্ট দেখি তাহলে একরকম আর রোগী দেখলে অন্য রকম। আমরা রোগীর কথাই বেশি গুরুত্ব দেই। ও’ বলছে, এটা নিয়ে দুইটা ম্যাচ খেলেই ফেলেছে। ওর আঙ্গুলে যে সমস্যা তা বোলিংয়ে খুব একটা কাজে লাগে না। ব্যাটিংয়ে কিছুটা কাজে লাগে। এটা আশাকরি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।’ মাশরাফি মনে না করলেও দেবাশীষ চেীধুরীর পর্যবেক্ষণ বলছে, আঙ্গুলের চোটটা গুরুতর। তিনি বলছেন, ‘আঘাতটা একটু গুরুতর। এই ধরনের ইনজুরি সারতে সপ্তাহ তিনেকের মতো সময় লাগে। এর মধ্যে কিছুটা সময় চলে গেছে। আমরা আশাকরি দুই সপ্তাহের মধ্যে খেলার মতো অবস্থায় ফিরে আসবে মাশরাফি।’ মাশরাফির পায়ের ইনজুরি নিয়ে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘ওর পায়ে সরাসরি একটা বল লেগেছে। এতে উরুতে রক্ত জমে যায়। স্ক্যান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে রক্ত জমাট বেঁধে এমন হয়েছে। তবু এটা সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা আরও একটা স্ক্যান করব। যা আমাদের কনফার্ম করবে যে, এটা জমাট বাঁধা রক্ত নাকি অন্য কিছু। যদি জমাট বাঁধা রক্ত না হয় তাহলে দুটি উপায়ে এগোনো যেতে পারে। একটি হলো একটু রক্ষণশীল উপায়। এতে সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে শরীরই এটা শুষে নেয়। সেটা না হলে অস্ত্রোপচার করে সরিয়ে ফেলতে হয়। কিন্তু সেটা খুবই বিরল ব্যাপার।’ মাশরাফির সঙ্গে ইনজুরি সমস্যায় আছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। সিনিয়র ক্রিকেটাররা সবাই ইনজুরিতে ভুগছেন। দলের অন্যতম দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সাকিব ও তামিমের ইনজুরি নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী। জানান সাকিব-তামিমের ইনজুরির সর্বশেষ অবস্থা। একই সঙ্গে মুশফিকের ইনজুরি নিয়েও কথা বলেছেন বিসিবির এই চিকিৎসক। তামিমের বাম হাতের কব্জির ইনজুরি নিয়ে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘তামিম ওর হাতের সমস্যা নিয়ে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে হ্যান্ড সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তামিমের রিহ্যাব প্ল্যান করা হয়েছে। আমরা চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ মতো পরিকল্পনা অনুযায়ী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। এর মধ্যে কিছুদিন চলে গেছে। আরও সপ্তাহ তিনেক এভাবে চালানোর পরিকল্পনা করেছি।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘২৫ অক্টোবরের দিকে তামিমের অবস্থা আমরা আবারও পর্যবেক্ষণ করব। তখন যদি দেখা যায় তার অবস্থা ভালোর দিকে তখন হয়তো ক্রিকেট এ্যাক্টিভিটিস শুরু করব। উন্নতি আশানুরূপ না হলে তখন আমাদের আবারও রিভিউ করতে হবে।’ আঙ্গুল ফুলে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফেরেন সাকিব। অস্ত্রোপচার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়ার কথা থাকলেও ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় পরের দিন সাকিবকে নিয়ে যাওয়া হয় এ্যাপোলো হাসপাতালে। সেখানে সাকিবের হাত থেকে প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম পুঁজ বের করেন চিকিৎসকরা। দ্বিতীয় দফায় পুঁজ বের করার পর সাকিবের অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানান দেবাশীষ চৌধুরী। সাকিবের হাতের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা রিভিউর জন্য সাকিবকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাচ্ছি। শুক্রবার হয়তো সাকিব যাবে। সেখানে যাওয়ার পর আসলে বিস্তারিত জানানো যাবে। আশা করছি এক মাসের মতো সময় লাগবে ইনজুরি সারতে। এরপর চিকিৎসকরা যদি মনে করেন অস্ত্রোপচারের দরকার, সে ক্ষেত্রে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।’ পাঁজরের ইনজুরি নিয়ে এশিয়া কাপ খেলা মুশফিক চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত বিশ্রামে থাকলে সুস্থ হয়ে উঠবেন এমনটা আশা বিসিবি চিকিৎসকের। তবে পাঁজরের ইনজুরি হওয়ায় সপ্তাহখানেক বেশি সময় লাগতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও এক সপ্তাহ। দেবাশীষ বলেন, ‘মুশফিকের পাঁজরে চিড় আছে, ট্রমা আছে। যে কোন ধরনের হাড়েই আসলে যদি চিড় থাকে তাহলে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগে সুস্থ হতে। কিন্তু পাঁজরের ব্যাপারটা আলাদা। কারণ পাঁজরে কোন বিশ্রাম থাকে না, সবসময় নড়াচড়ার মধ্যে থাকে। পাঁজরের ইনজুরিতে তাই সময় বেশি লাগে। ধারণা করছি সপ্তাহখানেক বেশি সময় লাগতে পারে। আপাতত তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে আমরা ওকে পর্যবেক্ষণ করব। যদি কোন সমস্যা পাওয়া না যায় তাহলে হয়তো অনুশীলন শুরু করতে পারবে। এটা আমরা সপ্তাহখানেক পরে বুঝতে পারব।’
×