ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘সিলটী পুয়া’ মতিন মিয়ার আকুতি

প্রকাশিত: ০৭:০০, ৫ অক্টোবর ২০১৮

‘সিলটী পুয়া’ মতিন মিয়ার আকুতি

স্পোর্টস রিপোর্টার, সিলেট থেকে ॥ ঢাকার মাঠে ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতো ড্রিবলিং করে গোল করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন গত বছরের ডিসেম্বরে (লীগ ম্যাচে সাইফের হয়ে, বিপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা)। সে রকম কিছু করে দেখানোর আকাক্সক্ষা ছিল জন্মভূমি সিলেটের মাঠেও। কিন্তু বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে যেখানে অন্য তিন ‘সিলেটী’ জনি, বিপলু এবং সুফিলকে লাওসের বিপক্ষে খেলালেও কোচ জেমি ডে তাকে মাঠেই নামালেন না। আজ ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে শেষ গ্রুপ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ যা তাদের সিলেটের মাঠেও শেষ ম্যাচ। আজ কি এই ম্যাচে মাঠে নামার আকাক্সক্ষা পূরণ হবে মতিন মিয়ার? আজ এই ফরোয়ার্ডকে মাঠে নামানো হবে কি না সেটা নিশ্চিত নন মতিন, ‘জানি না কোচ আমাকে খেলাবেন কি না। তবে যদি বদলি হিসেবে বা সময়ের জন্য হলেও খেলান, আমি প্রস্তুত আছি এবং সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করার চেষ্টা করে দলকে সাহায্য করতে পারব। আমি এক মিনিটের জন্য হলেও খেলতে চাই।’ লাওসের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখতে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজির হয়েছিল মতিনের পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা। সংখ্যাটা ৭০০। তবে ওই ম্যাচে মতিনকে না খেলানোয় তারা হতাশ হয়েছিলেন। ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে ম্যাচেও তারা আসবেন বলে জানান মতিন, ‘ইনশাল্লাহ যদি খেলতে পারি, তাহলে তাদের আশা পূরণ করতে চেষ্টা করব।’ লাওসের বিরুদ্ধে ম্যাচে না খেললেও দলের জয়ের ব্যাপারে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মতিন। একবারও মনে হয়নি তার দল হারবে। গত মার্চে লাওসে গিয়ে বাংলাদেশ তাদের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল। কাকতালীয়ভাবে ওই ম্যাচেও ছিলেন না মতিন মিয়া। ওই ম্যাচ প্রসঙ্গে মতিনের ভাষ্য, ‘ওই ম্যাচটিও আমরা জিততে পারতাম। কারণ গোলের আরও অনেক সুযোগ নষ্ট না করলে আমরাই জিতে আসতে পারতাম।’ মতিনের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসরটি সিলেটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে খুবই ভাল লাগছে তার। যদি খেলতে পারেন এখানে তাহলে আরও ভাল লাগবে তার। তবে শুধু খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে চান না মতিন। তিনি চান গোল করে দলকে জেতাতেও ‘যদি সুযোগ পাই গোল করার তাহলে সর্বাত্মক চেষ্টা করব গোল করতে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ফিলিপিন্স খুবই ভাল এবং শক্তিশালী দল। তবে আমরাও তাদের চেয়ে কোন অংশে কম না। তাছাড়া খেলা হবে আমাদের মাটিতে। লাওসকে হারিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। আমরা ফিলিপিন্সের সঙ্গে কঠিন লড়াই করব। জয় আল্লাহর হাতে। তবে আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করব না। আমার মনে না হয় আমরা হারব। হয় জিতব, নয়তো হারব। মাঝামাঝি কিছু হবে না।’ নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ-ফিলিপিন্স ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামের গ্যালারি থাকবে পরিপূর্ণ। তাদের সমর্থন বাংলাদেশ দলকে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে মনে করেন মতিন, ‘তবে দর্শক সমর্থন মোটেও আমাদের জন্য কোন চাপ বয়ে আনবে না বলেই মনে করি। বরং আমরা আরও ভাল খেলতে উৎসাহিত হব।’ সিলেটের মাটিতে খেলে এই প্রথম জিতেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। বিষয়টি ভালভাবেই অবগত মতিন, ‘একজন সিলেটবাসী হিসেবে এটা আমার জন্য ভীষণ গর্বের বিষয়। আরও খুশি হয়েছি জয়সূচক গোলদাতাও সিলেটের ছেলে (বিপলু আহমেদ) হওয়াতে। এটা অনেক বড় ব্যাপার।’ অভাবের সংসারে অর্থের জোগান দিতে মতিন ঢুকেছিলেন রং মিস্ত্রির কাজে। তারপর হয়ে গেলেন ‘খেপ’ ফুটবলার। তারপর সুযোগ পেয়ে ঢাকায় চলে আসেন ক্লাব ফুটবলে। তারপর জাতীয় দলে। কদিন আগে নীলফামারীতে অনুষ্ঠিত ফিফা প্রীতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলেছেন। ওটাই তার ছিল অভিষেক ম্যাচ। এখনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেননি। ঘরের মাঠে দলের প্রথম ম্যাচেও খেলা হয়নি। আজ দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে কি তাকে মাঠে নামাবেন কোচ? ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে তার?
×