ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ উপভোগ্য খেলা খেলতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৫ অক্টোবর ২০১৮

আজ উপভোগ্য খেলা খেলতে চায় বাংলাদেশ

রুমেল খান, সিলেট থেকে ॥ আগেরদিন সকাল থেকেই ছিল কাঠফাটা রোদ। অথচ বৃহস্পতিবার সিলেটের বিকেএসপি ট্রেনিং গ্রাউন্ডের আকাশের সূর্যটা দেখাই যাচ্ছে না ঘন মেঘের কারণে। ফলে কোন রোদ নেই, বেশ আরামদায়ক ও কিঞ্চিৎ আবহাওয়া। এর মধ্যেই শিষ্যদের এক জায়গায় জড়ো করে তাদের দিক-নিদের্শনা দিচ্ছেন কোচ জেমি ডে। অদূরে গোলপোস্টের নিচে তিন গোলরক্ষককে নিয়ে আলাদাভাবে ট্রেনিং দেয়ায় ব্যস্ত গোলরক্ষক কোচ নুরুজ্জামান নয়ন। আগেরদিনের মতোই এদিনও ঘণ্টা দেড়েক অনুশীলনে ঘাম ঝরালেন সুফিল-জীবন-তপুরা। অনুশীলন শেষে বাসে ওঠার আগে বিকেএসপির কিছু ছাত্রের আবদারে তাদের সঙ্গে হাসিমুখে ‘সেলফি’ তুলতে দেখা গেল দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলামকে। পুরো দলই ছিল নির্ভার। এক ম্যাচ হাতে রেখেই যে দল সেমিতে নাম লিখিয়ে ফেলে সেই দল তো নির্ভার হতেই পারে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় এখন তাদের সামনে শুধু গ্রুপসেরা (‘বি’ গ্রুপ) হওয়ার চ্যালেঞ্জ। যে চ্যালেঞ্জে ১৯৩ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ দল আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ১১৪ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ফিলিপিন্সের। হেড টু হেড লড়াইয়ে এ পর্যন্ত দু’দল মুখোমুখি হয়েছে দু’বার। দু’দলই জিতেছে ১টি করে ম্যাচে। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ জিতেছিল ৮-০ গোলে। সর্বশেষ মোকাবেলায় ফিলিপিন্স জেতে ৩-০ গোলে (২০১১ সালের ২৫ মার্চ, ইয়াঙ্গুনে, প্রীতি ম্যাচে)। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের এবারের আসরে সেমিফাইনালে উঠতে বাংলাদেশকে মাঠে নামতেই হয়নি। তাদের শেষ চারে নাম লেখানোটা সম্ভব হয়েছে ফিলিপিন্সের বদৌলতে। বুধবারের গ্রুপ ম্যাচে তারা ৩-১ গোলে হারায় ১৭৯ র‌্যাঙ্কিংধারী লাওসকে। এই ম্যাচের আগে সমীকরণটা ছিল এমনÑ ফিলিপিন্স জিতলে তারা বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে চলে যাবে শেষ চারে। লাওস জিতলে শেষ ম্যাচে ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ড্র। আর লাওস ড্র করলেও সেমিতে যাবে স্বাগতিক দল। শেষ পর্যন্ত লাওস আর জিততে পারেনি। বরং হেরেই এই আসর থেকে সবার আগে বিদায় নেয়। তাদের বিদায়ে কপাল খুলে যায় লাল-সবুজদের। এটা তাদের জন্য যেন ফিলিপিন্সের উপহার। এ জন্য ফিলিপিন্স দলকে ধন্যবাদ দিতেই পারে বাংলাদেশ। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আসরে সেমিতে উঠলো লাল-সবুজরা। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছিল স্বাগতিক দল। ২০১৫ আসরে রানার্সআপ হয়েছিল তারা। সেবারের মতো এবারও ফাইনালে ওঠার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। ফিলিপিন্সের সঙ্গে আজকের ম্যাচে হারলেও কোন সমস্যা নেই, তারপরও প্রশ্ন থাকেÑ আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্যটা কী? ‘সেমিফাইনালে উঠে গেছি, এটা আমাদের জন্য ভাল। ফিলিপিন্স শক্তিশালী দল। ম্যাচটা আমাদের জন্য কঠিন হবে। তবে ছেলেরা ম্যাচটি উপভোগ করবে।’ কোচ জেমি ডে’র ভাষ্য। জেমি আভাস দিলেন আজকের ম্যাচের আগেই দল শেষ চারে ওঠেছে বলে প্রথম একাদশে কিছু পরিবর্তন থাকবে, ‘তার মানে এই নয় ম্যাচটাকে আমরা হাল্কা করে নিচ্ছি। সেমিফাইনালের আগে ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রুপসেরা হওয়ার জন্যও। আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। জয়ের জন্যই খেলব। জিততে চাই। লাওসের বিপক্ষে তাদের ম্যাচটি দেখেছি। ফিলিপিন্সের আক্রমণভাগ খুবই শক্তিশালী। ওই পজিশনে ভাল খেলোয়াড় আছে। তারা দ্রুতগতিতে খেলে। তাদের ফরোয়ার্ডদের দিকে আমাদের বাড়তি নজর থাকবে। ডিফেন্ডাররাও সজাগ থাকবে। দেখা যাক কি হয়।’ জেমির দলে ইনজুরি সমস্যা খুব একটা নেই। লেফটব্যাক ওয়ালী ফয়সাল চোটগ্রস্ত ছিলেন। তবে এখন তিনি সুস্থ। দলের সবাই ফুরফুরে মেজাজে আছে। লাওস ম্যাচে প্রচুর দর্শক হয়েছিল। এই ম্যাচেও হবে। দর্শক থাকলে খেলোয়াড়রা ভাল খেলার প্রেরণা পায় বলে দাবি করেন জেমি। দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেন, ‘পরিকল্পনা হচ্ছে আমাদের গ্রুপসেরা হতে হবে। আমি মনে করি ফিলিস্তিন সবচেয়ে শক্তিশালী দল। ‘প্রতি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ফুটবলারের কাছে প্রতিটি ম্যাচই পরীক্ষা। ভাল খেলে জিততে চাই।’ জামাল আরও যোগ করেন, ‘ফিলিপিন্সের ডিফেন্স একটু স্লো আছে। এইটা আমরা উপলব্ধি করছি। এটার সুযোগ নিতে হবে আমাদের। আমরা সেমিফাইনালে চলে গিয়েছি। একটা টার্গেট পূরণ হয়েছে। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। ম্যাচটা জিততে চাই।’ ফিলিপিন্স দল এর আগে কর্মকর্তাসহ মাত্র ১১ ফুটবলার বাংলাদেশে আসে। লাওস ম্যাচের দিন সকালে যোগ দেন কোচসহ আরও ৫ ফুটবলার। বিশ্রাম নেয়ার সময়ও পাননি তারা। সন্ধ্যায় মাঠে নেমে যেতে হয়েছে তাদের। কিন্তু ক্লান্তির ভাব ছিল না দলের। চমৎকার খেলে ম্যাচটি ৩-১ গোলে জিতে নেয় তারা। সেই সঙ্গে ওঠে শেষ চারে। কাতারে ওমানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য প্রধান ও সহকারী কোচসহ দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার আসেননি। বলা যায় অনেকটা ‘বি’ দল নিয়েই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলতে এসেছে ফিলিপিন্স। লাওসের বিপক্ষে জয়ের পর বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে ভাবছে তারা। স্বাগতিক হারানোর আত্মবিশ্বাস দলটির অধিনায়ক বাহাদোরান মিসাগ, ‘স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশ শক্তিশালী। তারা এবারের আসরের অন্যতম ফেবারিটও। তবে আমরাও তৈরি আছি। আশাকরি তাদের হারাতে পারব।’ এখন দেখার বিষয়- আজ গ্রুপসেরা হওয়ার লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসে কোন দল।
×