ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য

টার্গেট কিলিং, রাসায়নিক হামলার প্রস্তুতি জঙ্গী গোষ্ঠীর ॥ নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৫ অক্টোবর ২০১৮

টার্গেট কিলিং, রাসায়নিক হামলার প্রস্তুতি জঙ্গী গোষ্ঠীর ॥ নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা

শংকর কুমার দে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে রাসায়নিক হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠী। টার্গেট কিলিং করার পরিকল্পনা করছে জঙ্গীরা। আর এ জন্য জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের সংগঠিত করানোর জন্য মাঠে নেমেছে অদৃশ্য শক্তি। কেনা হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সুইসাইডাল ভেস্ট। এই ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য রাসায়নিক হামলা, টার্গেট কিলিং, নাশকতা ইত্যাদির পরিকল্পনা করছে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। পুরনো জেএমবি’র একাংশের শীর্ষ নেতা তৌকির ওরফে তৌকি ওরফে গোপাল রাজশাহীর ইসাবা প্রধান বুলবুল ওরফে সোহাগকে অবহিত করে যে, টার্গেট কিলিং-এর উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা রেকি করা হচ্ছে। টার্গেট কিলিং ছাড়াও সারাদেশে জঙ্গীদের রাসায়নিক হামলার আশঙ্কায় সতর্ক করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। জঙ্গীরা রাসায়নিক হামলা করলে হতাহতদের বিষয়ে সারাদেশের বিশেষায়িত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বার্তা দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার জমা দেয়া প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে জানান যে, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেএমবি সদস্যরা একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। এজন্য তারা অসমের মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও নদিয়া জেলা থেকে কর্মীসংগ্রহ করেছে। এ জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সুইসাইডাল ভেস্ট সংগ্রহ করছে জঙ্গী গোষ্ঠী। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) সদর দফতরে ডেকে ব্রিফ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশের আইজির ব্রিফিং-এর সময়েও জঙ্গীদের রাসায়নিক হামলা, টার্গেট কিলিং, জঙ্গী হামলার বিষয়গুলোর জন্য সতর্ক বার্তা দেয়া হয় সভায় উপস্থিত পুলিশ সুপারদের (এসপি)। ব্রিফিং-এ নিজ নিজ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জঙ্গী গোষ্ঠী ও জঙ্গীদের গতিবিধির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে আরও জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক যে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে তাতে জঙ্গী হামলার প্রসঙ্গটিই প্রাধান্য পাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল, নির্বাচন পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে জঙ্গী গোষ্ঠী ও অশুভ মহল চক্রান্ত করছে। দেশের মধ্যে ছাড়াও বিদেশের মাটিতেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে বসে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তার বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্যই জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে সংগঠিত করানো হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়) মোঃ মাসুদুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জঙ্গী তৎপরতার ওপর কঠোর নজরদারি ও অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাসায়নিক হামলার প্রসঙ্গটি এবার প্রথম খবর পাওয়া যাচ্ছে, যার তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। টার্গেট কিলিং আগেই শুরু হয়েছিল যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে জঙ্গী তৎপরতাও। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অশুভ শক্তি যে চক্রান্ত করছে সেই বিষয়ে সতর্ক নজরদারি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মাঠের নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি, র‌্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের বিশেষায়িত সাইবার সিকিউরিটি টিম ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নজরদারি করবে। কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট তথ্যাদি দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে সম্ভ্রমহানি, সুনাম বিনষ্ট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হয়েছে তার নজির সামনে রয়েছে। এজন্য ফেসবুকের জনপ্রিয় ও সর্বাধিক মেম্বারের গ্রুপগুলোতে এ্যাড হয়ে তাদের পোস্টগুলো যাচাই-বাছাই করছেন গোয়েন্দারা। সারাদেশের ফেসবুক গ্রুপের এ্যাডমিনসহ সংশ্লিষ্ট মডারেটরদের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর জঙ্গীরা ভুয়া নামে এ্যাকাউন্ট খুলে অপপ্রচার চালিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সাইবার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সহিংস সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যদি কেউ উস্কানিমূলক গুজব তৈরি করে এবং তা পোস্ট করে তাহলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নজরদারি করা সাইবার সিকিউরিটি টিমগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স থেকে সব সাইবার নিরাপত্তা ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় করা হবে। জনগণের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে- এমন যে কোনো ধরনের পোস্ট দেখলেই সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×