ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৫ অক্টোবর ২০১৮

সরকারী চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় বেতন কাঠামোর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরী) পর্যন্ত সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। বুধবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে। যদিও সরকারী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে বুধবার রাত থেকে আন্দোলন করছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা। জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারী দফতর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চের পরিপত্রের কোটা পদ্ধতি নিম্নোক্তভাবে সংশোধন করেছে- নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণী) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। একই সঙ্গে এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। আগের নিয়ম অনুযায়ী, সরকারী চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুপারিশ জমা দেয়। কমিটি নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করে। সেই প্রস্তাবটিই বুধবার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করায় এখন থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগ হবে মেধা ভিত্তিতে। তবে আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর (বর্তমান ১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বহাল রয়েছে। মন্ত্রিসভায় কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদনের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, কোটা বাতিলের ফলে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে প্রতিফলিতব্য প্রভাব নির্দিষ্ট সময়ান্তর পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য কোটা রাখার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন সরকার তা করতে পারবে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে যেসব নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে- সেক্ষেত্রে কী হবে জানতে চাইলে শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, সেগুলোতে কোন সমস্যা নেই। যেগুলো এ্যাডভারটাইজ হয়ে গেছে, সেখানে কোটার বিষয়ে বলে দেয়া আছে-সরকার কোটার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই কার্যকর হবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বিগত ২ জুলাই কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ৮ জুলাই প্রথম সভা করে কমিটি। পরে কমিটির মেয়াদ আরও ৯০ কার্যদিবস (৩ মাস) বাড়ানো হয়। এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করছিলেন তারা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় আন্দোলনকারীদের। আটকও হন আন্দোলনকারী নেতারা। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। ৪০তম বিসিএসেই নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে ॥ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি হওয়ায় ৪০তম বিসিএসে কোটা প্রয়োগ হচ্ছে না। নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। সরকারী কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ৪০তম বিসিএসের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা নয় মেধায় নিয়োগ হবে। আমরা ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলাম কোটা বিষয়ে সরকারের সবশেষ গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার নিয়োগ হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে এই বিসিএসে কোটা নয় মেধা থেকে নিয়োগ হবে। তবে যেসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আগের, ৪০তম বিসিএসের আবেদন গ্রহণ শুরু হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে চলবে আগামী ১৫ নবেম্বর পর্যন্ত। ৪০তম বিসিএসে মোট ১ হাজার ৯০৩ ক্যাডার নেয়া হবে। পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে ২০০, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, করে ২৪, শুল্ক আবগারিতে ৩২ ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ৮০০ জন নিয়োগ দেয়া হবে। মোট ১ হাজার ৯০৩ ক্যাডার নিয়োগ দেয়া হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ফলে ৪০তম বিসিএসে কোটা পদ্ধতি থাকবে না। তবে ৩৯তম বিসিএসে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। মন্ত্রিসভায় কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে নিয়োগে ইতোমধ্যে যেসব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে যদি বলা থাকে যে ‘কোটার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সে অনুযায়ী হবে’, তবে ওইসব নিয়োগেও কোটার বিষয়টি থাকবে না। এদিকে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার অনলাইন আবেদনপত্র পূরণে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিতে হেল্পলাইন চালু করেছে পিএসসি। ০১৫৫৫-৫৫৫১৪৯, ০১৫৫৫-৫৫৫১৫০, ০১৫৫৫-৫৫৫১৫১ এবং ০১৫৫৫-৫৫৫১৫২ নম্বরে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফোন করে আবেদন সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা নেয়া যাবে। আগামী ১৫ নবেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই হেল্পলাইন চালু থাকবে।
×