ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ;###;সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে ;###;ফসলের ৫৮৪ উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবন

চাহিদার চেয়ে বেশি ॥ দেশে খাদ্য উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৫ অক্টোবর ২০১৮

চাহিদার চেয়ে বেশি ॥ দেশে খাদ্য উৎপাদন

তপন বিশ্বাস ॥ ক্রমান্বয়ে কৃষি জমি কমলেও প্রতি বছর ফসল বাড়ছে। মানুষও বাড়ছে। বাড়ছে চাহিদা। অধিক উৎপাদনে সকল চাহিদা মিটিয়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। সরকারের নিরলস কর্মকা-ে দেশ এই অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। গত সাড়ে নয় বছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ে এটি বড় সাফল্য। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে শুধু খাদ্যশস্য নয়, বিভিন্ন ফল উৎপাদন করে দেশ রীতিমতো ঈর্ষণীয় অবস্থানে পৌঁছেছে। সরকারের গত সাড়ে নয় বছরে এক ও দুই ফসলি জমি অঞ্চল বিশেষে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে এবং দেশে বর্তমানে ফসল নিবিড়তা ১৯৪ শতাংশ। ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ শত ৭ দশমিক ১৪ লাখ টন, উৎপাদন হয়েছে ৪শ’ ১৩ দশমিক ২৪৯ লাখ টন। চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়েছে দেশে। দেশ এখন দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ১৩ লাখ ১৭ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৭৯৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, মসলা, তেল, শাক-সবজি পাট ইত্যাদি ফসল প্রতিবছর বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিবিএস ও ডিএই এর সমন্বিত, দানাদার খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪শ’ ৭ দশমিক ১৪ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছে ৪শ’ ১৩ দশমিক ২৪৯ লাখ টন। প্রতি নিয়ত কৃষি জমি কমছে। কিন্তু নতুন নতুন উদ্ভাবনীর মাধ্যমে কৃষি সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও বায়োটেকনোলোজির যথাযথ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদনের পদ্ধতিটিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) ২০১৫ সালে কৃষিতে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। সরকার সার, ডিজেল, বিদ্যুত ইত্যাদি খাতে আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সকল খাতে মোট ৬৫ হাজার ৪শ’ ৪৭ কোটি টাকার মধ্যে সার খাতেই ৫৮ হাজার ৯শ’ ৪৫ কোটি টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মোট ২০৪টি প্রকল্পের কার্যক্রম গ্রহণ করে। ২০৪টি প্রকল্প বাবদ মোট বরাদ্দ ছিল প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এর ১৫৩টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে ৫১টি প্রকল্প চলমান আছে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহনশীল ও জিংকসমৃদ্ধ, ধানসহ এ পর্যন্ত ধানের ১০৮টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিবিড় সবজি চাষের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০০৯ থেকে বিভিন্ন ফসলের ৫৮৪টি উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে এবং ৪৪২টি উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিআরআরআই কর্তৃক ধানের ৩৫টি জাত, বিএআরআই কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ১৭০টি জাত, বিজেআরআই কর্তৃক পাটের ৯টি জাত, বিএসআরআই কর্তৃক ইক্ষুর ৮টি জাত ও সুগার বীটের ৪টি জাত, সিডিবি কর্তৃক তুলার ৭টি জাত এবং বিআইএনএ কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ৫৫টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জিএমও প্রযুক্তি ব্যবহার বিটি বেগুনের ৪টি জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বিটি তুলার জাত উদ্ভাবনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুষ্টি বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদন, প্রাপ্তি ও ব্যবহারের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে গম ও ভুট্টার গবেষণা আরও সম্প্রসারিত হবে। ইতোমধ্যে গবেষণার মাধ্যমে গম ও ভুট্টার নতুন নতুন জাত মাঠে সম্প্রসারিত হয়েছে। কৃষি এবং কৃষি ভিত্তিক সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের ই-কৃষি সেবার উন্নয়ন। সঠিক শস্যবিন্যাস অনুসরণের লক্ষ্যে জলবায়ু ও মৃত্তিকা উপযোগিতা অনুযায়ী ১৭টি ক্রপ জোনিং ম্যাপ প্রণয়ন করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর রাবারড্যাম চালুর ফলে অতিরিক্ত প্রায় ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এনেছে। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। খাদ্যশস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান ও রফতানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪.১১ শতাংশ। বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টাপ্লান ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সমবায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষিক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে দেশে কর্মসংস্থান সম্প্রসারিত হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক ও দুই ফসলি জমি অঞ্চল বিশেষে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে এবং দেশে বর্তমানে ফসলের নিবিড়তা ১৯৪ শতাংশ। ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪শ’ ৭ দশমিক ১৪ লাখ টন, উৎপাদন হয়েছে ৪শ’ ১৩ দশমিক ২৪৯ লাখ টন যার ফলে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
×