ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মংলা বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে নেপালে পণ্য রফতানি শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৫ অক্টোবর ২০১৮

মংলা বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে নেপালে পণ্য রফতানি শুরু

আহসান হাবিব হাসান, মংলা ॥ নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির পর প্রথমবারের মতো মংলা বন্দরের মাধ্যমে পণ্য রফতানি শুরু হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) বিকেল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে মংলা বন্দর সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত, ভুটান ও নেপাল ট্রানজিট (বাংলাদেশের ভূ-খ- ব্যবহার) সুবিধায় মংলা বন্দর ব্যবহার করবে, এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত আগে থেকে হয়ে আছে। বাকি ছিল এর আনুষ্ঠানিকতা। দেরিতে হলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে। চীনের একটি বন্দর থেকে ২৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন সার নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) মংলা বন্দরে নোঙ্গর ফেলেছে সেন্ট ভিনসেন পতাকাবাহী ‘এম ভি ঠেটো টোকজ’ নামে একটি বিদেশী জাহাজ। মংলা বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে ওই জাহাজেরই এসব পণ্য নেপালে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বন্দরের হারবাড়িয়ার ৭ নম্বর বয়ায় বর্তমানে সারবাহী ওই বিদেশী জাহাজটি অবস্থান করছে। বিদেশ থেকে আসা এ সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মেসার্স লিটমন শিপিং লিঃ এর ব্যাবস্থাপক সৈয়দ মূর্তজা আলী বাপ্পী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এম ভি ঠেটো টোকজ’ থেকে প্রাথমিকভাবে ছোট লাইটারেজে (কার্গো জাহাজ) করে সার খালাস করে তা যশোরের নওয়াপাড়ায় আনা হবে। সেখান থেকে বেনাপোল রুটের মাধ্যমে ভারতের বীরগঞ্জ কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স হয়ে মালবাহী ট্রেনে করে নেপালে যাবে এ সার। নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির পর মংলা বন্দরের মাধ্যমে এই প্রথম পণ্য রফতানি হচ্ছে বলে জানান সৈয়দ মূর্তজা আলী বাপ্পী। তিনি আরও বলেন, বিকেলের পালা থেকে ওই জাহাজে শ্রমিক বুকিং করে সার খালাস কাজ শুরু হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজের পুরো পণ্য খালাস শেষ হবে বলেও জানান তিনি। গত দেড় মাস আগে চীন থেকে এ জাহাজটি মংলা বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। জাহাজে করে আনা নেপাল সরকারের এ সারের আমদানি মূল্য এক কোটি ১১ লক্ষ ৫৪ হাজার এবং তার রফতানি মূল্য এক কোটি ৩২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭৭০ টাকা বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আমদানিকারক আমিনুর রশিদ। বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ ড্রেডিং কর্পোরেশনের এ মালিক জনকণ্ঠকে আরও জানান, চীন থেকে নেপালের জন্য প্রতি হাজার মেট্রিক টন ৪৪০ ডলার দিয়ে ঢালাই সার আমদানি করে তা স্থানীয়ভাবে মোড়কজাত করে ৫২২ দশমিক ২০ ডলারে প্রতি হাজা টন সার রফতানি করা হচ্ছে। মোট ২৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন সার আমদানি হয়েছে। বন্দর সূত্র জানায়, ভারত, নেপাল ও ভুটান ট্রানজিট সুবিধায় এ বন্দর ব্যবহারে অনেক আগ থেকেই প্রস্তাব দিয়েছে সরকারকে। এরপর প্রতিবেশী এসব রাষ্ট্রকে মংলা বন্দর ব্যবহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর থেকে মংলা বন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধার মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের কাজ বৃহস্পতিবার থেকে দৃশ্যমান হয়। সূত্র জানায়, ট্রানজিটের বিপরীতে কোন শুল্ক আদায় করার সুযোগ নেই। তবে এই পণ্য পরিবহনের অবকাঠামো ব্যবহার, তা রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদির সেবার জন্য মাশুল আদায় করা যাবে। বার্সেলনা কনভেনশনের ধারা ৩ এ ট্রানজিটের অধিকার দিতে কোন ধরনের অর্থ গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবে ট্রানজিট পরিচালনা ব্যয় নির্ধারণ করে তা আদায় করার সুযোগ রেখেছে। গ্যাটের পঞ্চম ধারার ৩ থেকে ৬ উপধারার শর্ত অনুসারে দুই ভাগে মাশুল আদায় করা যায়। পণ্য প্রবেশ ও বহির্গমন পয়েন্টে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে মাশুল ও সার্ভিস চার্জ আদায় ও ট্রানজিট পণ্যবাহী যানবাহনের ওপর নিবন্ধন ফি, শুল্ক ও কর, টোল ইত্যাদি অথবা মাশুল আদায় করা যায়। স্থানীয় পরিবহন ও ট্রানজিট পরিবহনের জন্য এসব ফি একই হারে প্রযোজ্য হবে। তবে বাংলাদেশের শুল্ক আইনে ট্রানজিট বাবদ ফি ও সার্ভিস চার্জ আরোপ-সংক্রান্ত ধারা ১২৯ অর্থবিল ২০১১-১২ দ্বারা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ট্রানজিট মাশুল আরোপের আপাতত কোন সুযোগ নেই। এদিকে মংলা বন্দরের ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল ও সৈয়দ জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন,‘ভারত, নেপাল ও ভুটান মংলা বন্দরের ট্রানজিটের (বাংলাদেশের ভূ-খ- ব্যবহার) ব্যবহারের মাধ্যমে এ বন্দরে পণ্য খালাস-বোঝাইয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে জাহাজের সংখ্যাও বাড়বে। এ জন্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি হবে’। তারা আরও বলেন, ‘ট্রানজিটের ফলে মংলা বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে। এ জন্য বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন, জেটিতেও আমাদের আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে তার জন্য ড্রেজিং করতে হবে। ড্রেজিং না করার কারণে বেশিরভাগ জাহাজের অর্ধেক পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করতে হয়। জাহাজের পুরো পণ্য মংলা বন্দরে খালাস করতে পারে-সে ক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’ মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মংলা বন্দরে ট্রানজিটের বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত আছি। তবে বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।’
×