ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর নাব্য উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৫ অক্টোবর ২০১৮

নদীর নাব্য উন্নয়ন

নদীমাতৃক বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীপথের গুরুত্ব কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না, বিশেষ করে মালামাল ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে। এও সত্য যে, দেশের অধিকাংশ নদ-নদীই বৃষ্টি ও বর্ষা মৌসুম বাদে নাব্য নয়। যে কারণে সারা বছর নৌপথগুলো সচল রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে নদ-নদী ভরাট হয়ে শীর্ণতোয়া অথবা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু তীর নয়, নদী দখলের খবরও আছে। সেসব স্থানে চাষবাস হয়ে থাকে এবং গড়ে ওঠে জনবসতি। সে অবস্থায় নদীর নাব্য উন্নয়ন ও নদী সিকস্তি পুনরুদ্ধার করে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সারা বছর নৌচলাচল নিশ্চিত করতে ইচ্ছুক সরকার। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার একনেক সভায় আপাতত চারটি নদী ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবার নাব্য রক্ষা ও উন্নয়নে ৪ হাজার ৩১৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ বাস্তবায়ন করবে। যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সারা বছর নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাবে, একই সঙ্গে হ্রাস পাবে বন্যার ঝুঁকি এবং সেচ কার্যক্রম হবে সহজতর। তবে নদীর নাব্য রক্ষার অন্যতম উপায় ড্রেজিং নিয়ে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এমনকি পুকুর চুরির কথা শোনা যায়। এমনটি যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি অনুরূপ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে দেশের অন্যান্য নদ-নদীর ক্ষেত্রেও। কেননা, নাব্য সঙ্কট রয়েছে প্রায় সর্বত্র। নদী ভাঙ্গনের সমস্যাও সুবিদিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রে এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণও অপরিহার্য। অতঃপর পানি সম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ‘যৌথ নদী কমিশন জেআরসি’ গঠনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তির মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি সমস্যার সমাধান হলেও, তিস্তা, ফেনী নদীর পানি সমস্যা ঝুলে আছে দীর্ঘদিন থেকে। অথচ দু’দেশের জনসাধারণের অভিন্ন স্বার্থে ভারতের এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো বাঞ্ছনীয়। এর পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী পানি ব্যবস্থাপনার জন্য স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ভারতসহ নেপাল, ভুটান, সিকিম, চীন ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা বর্তমানে সময়ের দাবি। পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরেও কিছু সমস্যা ও সঙ্কট রয়ে গেছে। সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সবার জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করা যায়নি। ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের পানির সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবহারে কোন নীতিমালা না থাকায় এর যথেচ্ছ অপরিকল্পিত ব্যবহার হচ্ছে। নদী অববাহিকার জনবসতি অব্যাহত নদীভাঙ্গন ও বন্যার অসহায় শিকার হয় প্রায়ই। জনসংখ্যাব বৃদ্ধি, নগর সভ্যতার বিকাশ ও প্রযুক্তিগত ভিন্নতায় পানি ব্যবহারের ধরন বদলেছে। আমরা এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারিনি। বিশ্বের অনেক দেশেই পানির পরিকল্পিত ব্যবহারসহ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সমুদ্রের পানির ব্যবহারও সম্ভব হচ্ছে এর জন্য। অথচ অপরিকল্পিত আহরণ ও যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে দেশের পানিসম্পদের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদ-নদীগুলো। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। সুন্দরবনে দেখা দিচ্ছে মিষ্টি পানির সঙ্কট। যে কারণে পশুপাখি, জীববৈচিত্র্য ও গাছপালা প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন। বৃষ্টির পানির আদৌ কোন পরিকল্পিত ব্যবহার হচ্ছে না। সুষ্ঠু ও সমন্বিত পানি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় এসবই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।
×