ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলকাতায় মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৪ অক্টোবর ২০১৮

কলকাতায় মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’

বিপুল উৎসাহ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে পশ্চিমবঙ্গে মঞ্চস্থ হলো নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত রচিত ঐতিহাসিক নাটক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।’ গত ২৩ সেপ্টেম্বর (২০১৮) তারিখে নাট্যমোদীদের প্রিয় স্থান ‘জ্ঞানমঞ্চ (১১ প্রিটোরিয়া স্ট্রিট। কলকাতা-৭০০০৭১)-এর বিশাল অডিটরিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের টানটান উত্তেজনার মাঝে নেপথ্যে ঘোষণায় বলা হয় ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী দুই বাংলার বীর যোদ্ধাদের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।’ করুন মিউজিক বাজল। এরপর বজ্রকণ্ঠে বেজে উঠল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ‘সাত কোটি বাঙালীদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ পর্দা সরল। পিন পতন নীরবতায় নাটক শুরু হলো। প্রথম দৃশ্য ছিল পাকিস্তানীদের শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালীদের স্বাধীনতার দাবিতে জেগে ওঠার প্রত্যয়। এ দৃশ্যে মুক্তিকামী জনতার কথাগুলো তুলে ধরেন রফিক, মান্নান, ফাতেমা, বসির ও সোলেমানের সংলাপে। এদের বিপরীতে পাকবাহিনীর দালাল হিসেবে রেজ্জাক এবং ২ জন পাক সেনার নির্যাতন দেখানো হয়। দ্বিতীয় দৃশ্য আসে ২৫ মার্চের গণহত্যা এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের আলোচনা নিয়ে। এ দৃশ্যে যে সকল চরিত্র তুলে ধরা হয় তা হলো : বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তোফায়েল আহমেদ, মোশতাক আহমেদ, ফজিলাতুন্নেছা, শেখ হাসিনা এবং ২ জন পাকসেনা। এই দৃশ্যে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তৃতীয় দৃশ্যে দেখানো হয় মুক্তিযুদ্ধ। এই দৃশ্যেই বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। চতুর্থ দৃশ্যে জার্মানিতে বসবাসরত শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু। এই দৃশ্যে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারকে খালেদা জিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র দিতে আসেন উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তিনি বেশকিছু বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করেন। এ দৃশ্যে বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা এবং ফজিলাতুন্নেছার চরিত্রসমূহ তুলে ধরা হয়। দর্শকরা ধারণা পেয়ে গেলেন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সম্ভাব্য নানামুখী ষড়যন্ত্র নিয়ে। বিরতির পর্দা পড়ল। দশ মিনিট বিরতির সময় দর্শকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন এবং অনেকেই অতিথিদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। বিরতি শেষে ৫ম দৃশ্যে মঞ্চে এলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু এবং মোশতাক আহমেদ। এই দৃশ্যে বাকশাল নিয়ে এবং চলমান রাজনীতি নিয়ে কিছু আলোচনার পর বঙ্গবন্ধু ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের প্রস্থানের পর খন্দকার মোশতাক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়। মঞ্চে আসে মেজর ফারুক ও মেজর ডালিম। তারা বিভিন্ন আলোচনার পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হত্যাকা-ের পর করণীয় বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে। কুমিল্লায় চোরাচালানে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় সেনা সদর ফতরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ১৯৭৪ সালে যে ২২ জন সেনা সদস্যকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকার, যেহেতু তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সাহসী ভূমিকা পালন করবে তাই মেজর নূর চৌধুরী, মেজর ডালিম, মেজর শাহরিয়ার, মেজর রাশেদ চৌধুরীসহ চাকরিচ্যুত সকলকে প্রমোশন দিয়ে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। চাকরি ফিরে পাবার লোভে ওরা মরিয়া হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য। এরপর এলো শেষ দৃশ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কাল রাত এই দৃশ্যে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার পরিজনকে কিভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তা দেখানো হলো। এই দৃশ্যের পরই নাটক শেষ হয়। দর্শকরা এতটাই বেদনাহত এবং আবেগাপ্লুত হয়ে যান যে, তারা অনেকক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার প্রেসক্লাবের মান্যবর সভাপতি স্নেহাশীষ সুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জি বাংলার মীরাক্কেল এর প্রাণ সদস্য ডাঃ কৃষ্ণেন্দু চ্যাটার্জী, বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধু থিয়েটার নিউইয়র্ক কমিটির সহ-সভাপতি কবি নিখিল কুমার রায়, বঙ্গবন্ধু থিয়েটার ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ এইচ, বঙ্গবন্ধু থিয়েটার খুলনা কমিটির সহসভাপতি নুরুন্নাহার হিরা এবং এ নাটকের লেখক ও বঙ্গবন্ধু থিয়েটারের আন্তর্জাতিক সভাপতি নাট্যকার খান শওকত। উপস্থিত প্রত্যেক দর্শক ও মিডিয়া প্রতিনিধিরা নাটকটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক
×