ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা

আগে ঘর সামলানো, তারপর আক্রমণ

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৪ অক্টোবর ২০১৮

আগে ঘর সামলানো, তারপর আক্রমণ

রুমেল খান, সিলেট থেকে ॥ অফিসিয়ালভাবে বছর চারেক আগে একবার সুযোগ এসেছিল যাওয়ার। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারণে যাওয়া হয়নি সেবার। তাই আক্ষেপটা ছিলই। তবে সেটা মিটে গেল বুধবার আশ্বিনের এক ¯িœগ্ধ প্রভাতে। খুব ভোরে শয্যাত্যাগ করে উদরপূর্তি সেরেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়তে হলো। উদ্দেশ্য জিন্দাবাজার থেকে খাদিমনগর যাওয়া। সিলেট বিকেএসপির মাঠে সকালে অনুশীলন করবে জেমি ডে’র শিষ্যরা। সিএনজি অটো রিক্সায় যেতে লাগবে প্রায় আধঘণ্টার মতো। চলন্ত পথে রাস্তার দু’পাশের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে মন না জুড়িয়ে উপায় নেই। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে সেখানকার অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য, সুন্দর পরিবেশ আর নয়নাভিরাম দুটি বিশাল সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠ দেখে মুগ্ধতার পরিমাণ বেড়ে গেল আরও। তবে আক্ষেপও হলো। এত বিশাল আয়তনের মধ্যে অবস্থিত ফুটবল একাডেমি চালু করেও সেটা কি না আর চলমান রাখতে পারলো না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সুযোগ্য কর্তারা! একটু পরেই পুলিশ প্রহরায় বিকেএসপির ভেতরে ঢুকলো লাল-সবুজবাহিনী যারা কি না ৪৮ ঘণ্টা আগেই লাওসকে হারিয়ে দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে, জে¦লেছে আশার আলো। সন্ধ্যায় ফিলিপিন্স-লাওস ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করছিল শেষ চারে নাম লেখানোর। লাওস পয়েন্ট হারালেই কেল্লাফতে, ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে জামালবাহিনীর... এমন সমীকরণই তখন ঘুরছে সবার মাথায়। তবে লাওস জিতে গেলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে। কেননা আরও কঠিন প্রতিপক্ষ ফিলিপিন্সের কাছ থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে সেমিতে যাওয়াটা খুবই মুশকিলÑ এমনটা মনে করার পক্ষেই লোক বেশি। কাজেই টেনশন আছেই। কিন্তু সেটা দেখে বোঝার উপায় নেই বাস থেকে নেমে মাঠে ঢোকা ওয়ালী, বাদশা, বিপলু, রানাদের চেহারা দেখে। মনে হচ্ছিল বেশ নির্ভারচিত্তেই আছেন তারা। হাসিঠাট্টা করছেন পরস্পরের সঙ্গে। ম্যানেজার-কোচরাও তার বাইরে নয়। এই যেমন ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু তো সুদর্শন গোলরক্ষক কোচ নুরুজ্জামান নয়নকে ‘এ্যাই সুন্দরী’ বলে ডাকলেন! ততক্ষণে রোদ বেশ কড়া হয়ে গেছে। তারমধ্যেই শুরু হলো অনুশীলন। কোচ জেমি ডে ঘণ্টাদেড়েক হার্ড ট্রেনিং করালেন পুরো দলকে। রানিং, স্ট্রেচিং, পাসিং-পজিশনাল ফুটবল প্র্যাকটিস, গোলরক্ষকদের আলাদা ট্রেনিং... কিছুই বাদ গেল না। লাওস ম্যাচের শেষদিকে ডান পায়ের গোড়ালির একটু ওপরে প্রচ- চোট পেয়েছেন দলের অন্যতম সিনিয়র-অভিজ্ঞ লেফটব্যাক ওয়ালী ফয়সাল। কিন্তু ব্যথা নিয়েও ফুল ট্রেনিং কমপ্লিট করলেন তিনি। লাওসসের বিরুদ্ধে গোলদাতা ‘সিলেটী’ বিপলু আহমেদের দিকে স্বভাবতই সবার বাড়তি নজর। দৃষ্টি ছিল আরেক সিলেটী মতিন মিয়ার দিকেও, যাকে কোচ প্রথম ম্যাচে খেলাননি। কৌতূহল ছিল সাফ ফুটবলে না খেলানো আলোচিত গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে নিয়ে, যিনি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে প্রথম ম্যাচে তার গোলপোস্ট অক্ষত রাখতে পেরেছেন। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘আমাদের দলের মূল লক্ষ্য ছিল ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চটা দেয়া। শুরুতে আমাদের কমিটমেন্ট ছিল যে আমরা গোল হজম করব না। ৯০ মিনিটের মধ্যে যে কোন একটা সুযোগ আসবে বা সুযোগ সৃষ্টি হবে, তখন আমরা স্কোর করব। এটাই ছিল লাওসের বিপক্ষে আমাদের লক্ষ্য।’ গোল না খেলেও ওই ম্যাচে কিছু ভুল করেছেন রানা। সেটা স্বীকার করে বলেন, ‘ভুলগুলো নিয়ে গোলরক্ষক কোচ কাজ করেছেন। আমি নিজেও রুমে এসে সেগুলোর ভিডিও দেখেছি। সেগুলো নিয়ে একটু আগে কাজ করেছি।’ বাংলাদেশের পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ ফিলিপিন্স। আরও বড় পরীক্ষা। ‘এটা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের কন্ডিশন অনুযায়ী গোলরক্ষক এবং ডিফেন্ডাররা মিলিয়ে যদি ভাল খেলতে পারি তাহলে দলও ভাল খেলবে।’ সাফ ফুটবলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রানাকে বসিয়ে খেলানো হয়েছিল আরেক গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলকে। তার হাস্যকর-শিশুতোষ ভুলে নেপালের কাছে হেরে সেমিতে উঠতে ব্যর্থ হয়। এরপর গণমাধ্যম ফুটবলপ্রেমীদের তীব্র সমালোচনায় টিম ম্যানেজমেন্ট সোহেলকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে আবারও রানাকে খেলাতে বাধ্য হয়। কয়েকটি ম্যাচে সাইডবেঞ্চে বসে থাকার পর আবারও খেলতে নেমে কি কোন চাপের মুখে ছিলেন? ‘না। কোন চাপ ছিল না। আর চ্যালেঞ্জ বা চাপ দু’টার কোনটাই নিতে চাই না। ভুল খেলারই অংশ। সোহেল যেটা করছে সেটা নেহাত একটা ভুল। তাছাড়া কিছু না। আসলে আমি আমার জায়গা থেকে সেই ভুল করতে চাই না।’ লাওসের বিপক্ষে গোল হজম না করার কৃতিত্ব ডিফেন্ডারদের। তাদেরই একজন তপু বর্মণ। ফিলিপিন্সের বিপক্ষে টার্গেট কী? ‘প্রথমত আমরা সেফ ফুটবল খেলব। গত ম্যাচে যে টুকিটাকি ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো নিয়ে কোচ কথা বলেছেন। আমাদের ডিফেন্সের একটাই কাজ থাকবে কোন ঝুঁকি নেব না। আর আমাদের মাঝখান দিয়ে কোন পাস হবে না। প্রতিপক্ষের কাউকে মাঝখান দিয়ে ঢুকতে দেব না। গোলরক্ষকের সঙ্গে আমাদের ভাল বোঝাপড়া থাকবে। এটার ধারাবাহিকতা রেখেই খেলব।’ সাফে দুটি গোল করেছিলেন তপু। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে কী গোল থাকবে না? ‘আমার প্রথম আক্রমণগুলো প্রতিহত করা। তারপর সেট পিসে যাব, আক্রমণে যাব, যদি গোল করতে পারি বাংলাদেশের জন্য তা খুবই ভাল হবে। আমাদের দলের জন্যও ভাল। আমার প্রথম টার্গেট হলো গোল বাঁচানো, এরপর স্কোরিং।’ তপুর জবাব। এখন দেখার বিষয়, কথাকে কাজে পরিণত করতে পারেন কি না রানা-তপু।
×