ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিএফআইয়ের চাপে নয়, দুদকের তদন্তের কারণেই সিনহার দেশ ত্যাগ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৪ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিএফআইয়ের চাপে নয়, দুদকের তদন্তের কারণেই সিনহার দেশ ত্যাগ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের চাপের মুখে দেশ ছাড়ার এবং পদত্যাগ করার যে দাবি সম্প্রতি করেছেন, সেটাকে অসত্য বলে আখ্যায়িত করেছেন সুপ্রীমকোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বিচারপতি মানিক বলেছেন, আপীল বিভাগের অন্য পাঁচজন বিচারক সিনহার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। বিচারপতি চৌধুরী আরও বলেছেন, সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করার কারণেই তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একজন মানুষ কিন্তু তাকে বের করে দেয়া তো চাট্টিখানি কথা না। প্রধান বিচারপতি অনেক কিছু করতে পারেন। উনাকে বললেন যে আপনি দেশ ছেড়ে চলে যান আর উনি চলে যাবেন। আমিও নিজেও বিচারপতি ছিলাম এটা আমি বিশ্বাস করতে নারাজ। প্রধান বিচারপতি তো দূরের কথা একজন হাইকোর্টের বিচারপতিকেও এভাবে দেশ থেকে বিতাড়ন সম্ভব নয়। সিনহা তাকে কিভাবে দেশ থেকে বের করা হয়েছে তার যে বর্ণনা দিয়েছেন তার বইতে সেটিকেও অসত্য বলে দাবি করেন বিচারপতি চৌধুরী। ‘প্রথম কথা হলো যখন কতগুলো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এলো তখন আপীল বিভাগের পাঁচ জন বিচারপতি অভিযোগগুলোর নথিপত্র দেখে দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আর বসবেন না। সে অবস্থায় তার পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কারণ তিনি কাজ করতে পারতেন না। তাছাড়া অভিযোগগুলো যখন এলো তখন দুদক সচল হলো। আমি মনে করি দুদককে এড়ানোর জন্য উনি দেশ ছেড়েছিলেন,’ বলেন চৌধুরী। সিনহা নিজে বলেছিলেন যে অন্য বিচারপতিদের চাপ তৈরি করে তাদের দিয়ে একথা বলা হয়েছে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী সিনহার এমন দাবিও প্রত্যাখ্যান করেন। তার মতে, ‘এসব বিচারপতির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। এরা অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তের এবং দৃঢ় চরিত্রের, ইস্পাত কঠিন চরিত্রের মানুষ কিন্তু এই পাঁচজনই। তারা কারও প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ার লোক নয়। কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করার মানুষও তারা নয়। তারা কোন অবস্থায় কারও চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সুতরাং সিনহার এই অভিযোগ একেবারেই অসত্য বলে মনে করছি।’ ঘটনার পরই অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে উল্লেখ করে চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচজনের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। তারা পরিষ্কার বলেছেন যে তারা যেসব প্রমাণাদি দেখেছেন এরপর সিনহার সঙ্গে বসার প্রশ্নই উঠতে পারে না। তারা কিন্তু সিনহাকে এসব নিয়ে প্রশ্ন করে বলেছিলেন তিনি সদুত্তর দিতে পারলেই কেবল তারা তার সঙ্গে বসবেন। সদুত্তর দিতে না পারলে বসব না।’ কিন্তু এতো অভিযোগ থাকার পরেও সরকার প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বের হতে দিল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী বলেন, ওই মুহূর্তে সিনহার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না, যদিও তদন্ত চলছিল। সুতরাং সেই মুহূর্তে তাকে বাধা দেয়ার সুযোগ ছিল না। সিনহা তাকে গৃহবন্দী করে রাখার বিষয়ে বইতে যা লিখেছেন বা বলেছেন সে দাবিও প্রত্যাখ্যান করেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘উনি লিখেছেন বা বলেছেন তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় বহু সাংবাদিক তার বাড়ির চারপাশে ছিল। তারা কিন্তু কখনোই এমনটি বলেনি।’ চৌধুরী যোগ করেন, ‘ওই সময় তিনজন মন্ত্রী তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। উনি দাঁতের ডাক্তারের কাছে গেছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে গেছেন ভিসার জন্য। আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। প্রচুর আইনজীবী বিশেষ করে বিএনপি জামায়াতের আইনজীবীরাও দেখা করতে গেছেন। তারাও এমনটি বলেননি যে প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। উনিও বলেননি। এখন নতুন শোনা যাচ্ছে।’ নির্বাচনের আগে বই প্রকাশ করে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলকে বেকায়দায় ফেলার অভিযোগ সরকারী দলের নেতাদের তরফ থেকে ওঠার পর সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বইটি এই সময়ে প্রকাশের বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটিও মানতে রাজী নন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। চৌধুরী বলেন, আমি বইটি পড়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারের একটি দলিল। নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগকে হেস্তনেস্ত করা যায় সেই উদ্দেশ্যেই এই বইটি তিনি লিখেছেন।
×