ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৪ অক্টোবর ২০১৮

মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মন্ত্রিসভা আরও নয়টি খাত যুক্ত করে নতুন ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮’ এবং ‘কাস্টমস আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এটা (স্বর্ণ নীতিমালা) অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে এবং সুপারিশকৃত। সারা বিশ্বে শুধু ’১৬ সালেই অলংকার রফতানি হয়েছে ৬৩৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হস্ত নির্মিত অলংকারের প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত হয়। ভারতের চেয়ে খুব সামান্য কম রফতানি করে বাংলাদেশ। নীতিমালার উদ্দেশ্য তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং রফতানির উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ। স্বর্ণালঙ্কার রফতানিতে উৎসাহ এবং নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধিকরণ। স্বর্ণালঙ্কার রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ। স্বর্ণখাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা। ভোক্তা-ক্রেতা-স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষণ। সকল অংশীজনের অংশীদারিত্ব, কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বর্ণ খাতের টেকসই বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি। নীতিমালায় অনুমোদিত ডিলার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন এ্যাক্ট-১৯৪৭’ এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত মনোনীত অথরাইজড ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোন অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে। অলঙ্কারের সঙ্গায় বলা আছে, স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুত অলংকার এবং স্বর্ণের পরিমাণ নির্বিশেষে স্বর্ণের সঙ্গে হীরক, রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর মিশ্রণে প্রস্তুত অথবা সাধারণ পাথর খচিত অলঙ্কার। আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান নীতির অতিরিক্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ অলঙ্কার চাহিদা পূরণকল্পে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার আমদানি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচন বাংলাদেশ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গাইডলাইন প্রস্তুত করবে। অনুমোদিত ডিলার সরাসরি বা প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হতে স্বর্ণবার আমদানি করবে। অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণ অলংকার প্রস্তুতকারকের কাছে বিক্রি করতে পারবে। আর অলংকার প্রস্তুত হলে রফতানি আকারে বিদেশে যাবে। আমাদের রফতানি সেক্টর যাতে চাঙ্গা হয়। স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে এই নীতিমালা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমদানিকারকরা মাসের শুরুতে স্বর্ণের হিসাব মূসক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন। স্বর্ণমান যাচাইয়ের জন্য সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। স্বর্ণ, স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়-বিক্রয়ে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিক্রয় ক্যাশমেমোর সঙ্গে স্বর্ণ অলংকারের হলমার্ক স্টিকার বাধ্যতামূলক প্রদান করতে হবে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংশ্লিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। আগের মতোই লাগেজে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বিনাশুল্কে আনা যাবে। ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে আনা যাবে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এটা বাড়তে পারে। পরিবেশ নীতি ॥ আরও নয়টি খাত যুক্ত করে নতুন ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণয়ন করা হয়। ২৬ বছরে পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। আমরা নিজস্ব ট্রাস্ট ফান্ড করেছি, সেখানে অনেক ইনভেস্টমেন্ট করেছি। পৃথিবীর অনেক দেশই এটা করেনি। এই নীতিতে বড় একটা পরিবর্তন হলো আগে এতে ১৫ খাত অন্তর্ভুক্ত ছিল, আরও ৯ খাত যুক্ত করে ২৪ খাত করা হয়েছে। ২৪ খাতের বিস্তারিত এখানে দেয়া আছে। তিনি বলেন, আগে ছিল পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিধান ও সার্বিক উন্নয়ন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে কমাতে অভিযোজন কার্যক্রম, দেশে স্বল্প কার্বন নিঃসরণ প্রযুক্তির আহরণ ও প্রচলন উৎসাহিত করা, পরিবেশের সব ধরনের দূষণ ও অবক্ষয়মূলক কার্যক্রম শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ, সব ক্ষেত্রে পরিবেশসম্মত উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। সব প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী ও পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ; বিশ্ব পরিবেশ উন্নয়নে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সহযোগিতা করা; পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ শিক্ষা, সক্ষমতা, জনসচেতনতা ও জনমত গড়ে তোলা; পরিবেশ উন্নয়নে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ; টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশ নীতি ও কৌশলকে মূল ধারায় নিয়ে আসা; জলবায়ু পরিবর্তনসহ সব ধরনের পরিবেশ ও পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা; প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে এনভায়রমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট এবং স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রমেন্ট এ্যাসেসমেন্ট সম্পাদন নিশ্চিতকরণ। নীতিমালা আরও রয়েছে- বিদেশী ও আগ্রাসী জাতের প্রাণী ও উদ্ভিদের কৃত্রিম অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করা, প্রয়োজনে যথেষ্ট গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিবেশ সংক্রান্ত সব আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সঙ্গে যথাসম্ভব সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকা, পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা যথাযথ প্রতিপালন। এগুলোকে আরও বিস্তৃত করে ২৪টি করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ খাদ্য ও সুপেয় পানি, কৃষি জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য সেবা, আবাসন, গৃহায়ন ও নগরায়ণ, শিক্ষা ও জনসচেতনতা, বন ও বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য, পাহাড় ও প্রতিবেশ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, উপকূলীয় সামুদ্রিক প্রতিবেশ, পরিবেশবান্ধব পর্যটন, শিল্প উন্নয়ন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, যোগাযোগ ও পরিবহন, জনসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রতি, অভিযোজন। এছাড়া পরিবেশ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছেÑ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা; বিজ্ঞান, গবেষণা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ; পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন ও ভোগ বলেন তিনি। অর্থাৎ এমন কোন সেক্টর বাকি নেই যেটা পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। সবই নিয়ে আসা হয়েছে। কাস্টমস আইন ॥ ‘কাস্টমস আইন, ১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭০ সালের আইন। কাস্টমস আঙ্গিনায় অনেক পরিবর্তন হওয়ায় এটাকে হালনাগাদ করা হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগের আইনকে বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। তেমন কোন পরিবর্তন নেই। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।
×